কলম্বাস নাম দিয়েছিলেন 'মৃত্যুর আপেল'! এই গাছ ছুঁলেই যেতে পারে প্রাণ!
Mysterious Tree of Death: গাছের প্রায় প্রতিটি অংশে এই বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে, এর ছাল থেকে শুরু করে তার রস পর্যন্ত সবটাই বিষাক্ত।
প্রতি অঙ্গে বিষ! স্পর্শ করলেই পরিণতি হতে পারে মর্মান্তিক। পর্যটক ঠাসা সৈকতেই দেখা মেলে এর, অথচ তা যে মানুষের জন্য এমন ভয়াবহ- কল্পনা করাও যায় না। কথা হচ্ছে একটি বিশেষ গাছকে নিয়ে। ম্যানচিনেল গাছটিকে (হিপোমেন ম্যানসিনেলা) এর বিষের জন্য নরকের গাছ বলেও ডাকা হয়। ক্যারিবিয়ান, বাহামা, মেক্সিকো উপসাগর, উত্তর দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশ, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ এবং ফ্লোরিডার কিছু অংশে পাওয়া যায় এই গাছ। আমেরিকায় ঔপনিবেশিক আক্রমণের সময় যখন স্প্যানিশরা প্রথম গাছটি খুঁজে পায়, তখন তারা এটির নাম দেয় 'আরবোল দে লা মুয়ের্তে’, যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায় 'মৃত্যুর গাছ'। এই গাছ এতটাই বিষাক্ত যে এর গুঁড়ির ছাল স্পর্শ করলেও রাসায়নিক ঘা দেখা দিতে পারে। যদিও এই গাছটি এতখানি কুখ্যাত বা এতখানি বিষাক্ত, এর ফলের জন্য
মিষ্টি গন্ধ রয়েছে ফলে। দেখতেও বেশ সুন্দর। কিন্তু খেলেই বিপদ। এই ম্যানচিনেল ফল খাওয়ার ফলে মারাত্মক বমি, ডায়রিয়া এবং খিঁচুনিও দেখা দিতে পারে।
পেশায় রেডিওলজিস্ট নিকোলা স্ট্রিকল্যান্ড টোবাগোতে গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। সেখানে এই মৃত্যুর গাছের 'মৃত্যু আপেল'-এর কাছাকাছি আসেন তিনি। কাছাকাছি বলা ভুল, খেয়েই ফেলেন! ফলটিকে এক জাতীয় আপেল ভেবে ভুল করে তিনি এবং তাঁর বন্ধু ছোট্ট কামড় বসান এই ফলে। কিছুক্ষণ পরে সারা মুখ জ্বলে যেতে থাকে, যেন কেউ লঙ্কাবাটা ঢেলে দিয়েছে মুখের ভেতর এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে তাদের শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাসকষ্ট পৌঁছয় চরমে। পাশাপাশি শুরু হয় ঘাড়ে তীব্র ব্যথা, বিষ ততক্ষণে তাদের লিম্ফ নোডগুলিতে প্রবেশ করতে শুরু করে দিয়েছে। তবে সে যাত্রায় স্ট্রিকল্যান্ড এবং তাঁর বন্ধু প্রাণে বেঁচে যান। মনে করা হয়, খুব সামান্য খেয়েছিলেন বলেই প্রাণ বেঁচেছে, নাহলে এই বিষ প্রাণ কাড়তে সময় নেয় না।
আরও পড়ুন- বিষাক্ততম সাপের কামড়ে মৃত্যু, ২০ বছরের এই তরুণ না থাকলে তৈরিই হতো না প্রতিষেধক
এই গাছে বিভিন্ন বিষ রয়েছে। মনে করা হয় যে, বেশিরভাগ বিষের উৎস জৈব যৌগ ফোরবোল। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, গাছের প্রায় প্রতিটি অংশে এই বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে, এর ছাল থেকে শুরু করে তার রস পর্যন্ত সবটাই বিষাক্ত।
বলা হয়, ক্যারিবীয় উপজাতিরা নাকি এই গাছের রসকে 'আউ ন্যাচারাল' বা নির্যাতনের প্রাকৃতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করত। উপজাতিরা বন্দিদের গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার পরে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করত যাতে বৃষ্টির জলে গাছের রস মিশে বন্দিদের শরীর ভিজিয়ে দিত। রসটি এতটাই বিষাক্ত যে ত্বকের সংস্পর্শে এলেই ফোস্কা পড়ত, জ্বলতে শুরু করত। তাহলে এমন গাছ কেটে ফেলাই তো ভালো। কেটে ফেলে রাখা যাবে না অবশ্য, পুড়িয়ে দিলেই হয়! প্রকৃতি তাঁর এই বিশেষ সম্পদকে এমনভাবে সাজিয়েছে যে এই গাছ কাটার বা পোড়ানোর ফলও হবে মারাত্মক।
কাঠে আগুন লাগার ফলে যে ধোঁয়া উঠবে তাতে চোখে ব্যাপক জ্বালা হবে। অস্থায়ী অন্ধত্বের কারণ হবে এই গাছ! তবে এই গাছ যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন, ইগুয়ানা নামের গিরগিটিদের কিন্তু প্রায়ই এর ডালের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকতে দেখা যায় এবং এর ফল খেতেও দেখা যায়।