রক্তবর্ণা দেবী, বিশালাকার অসুর! কোচবিহারের বড়দেবীর পুজোর ইতিহাস চমকে দেবে

Durga Puja 2024 Coochbihar Barodebi: ৪৯১ বছরের পুজো! ৫০০ বছরের মাইলফলক ছোঁবে শীঘ্রই। কোচবিহারের বড় দেবীর রূপ এখনও সেই প্রাচীন কালের মতোই।

মাতৃরূপ কিন্তু ভয়ঙ্কর সেই রূপ! দেবী রক্তবর্ণা, অসুর বিশালাকার। পরিবার, সন্তানাদি নেই পাশে। পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম দুর্গাপুজোর চেয়েও নাকি প্রাচীন এই দুর্গার পুজো! গুগল বলে, বড়িশার রায় চৌধুরীদের পুজো শুরু হয়েছিল ১৬১০ সালে। কিন্তু স্থানীয় ইতিহাস বলে, ১৬১০ সালের বহু আগে, কোচবিহারের মহারাজা নর নারায়ণ একটি দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। ১৫৩৩ সালে। তিনি বলতেন 'বড় দেবীর পুজো'। এই বড় দেবীই দুর্গা।

৪৯১ বছরের পুজো! ৫০০ বছরের মাইলফলক ছোঁবে শীঘ্রই। কোচবিহারের বড় দেবীর রূপ এখনও সেই প্রাচীন কালের মতোই। এই দুর্গা সাধারণ দুর্গা নয়। এখানে সিংহ নেই, আছে বাঘ, কারণ সেই অঞ্চলে প্রচুর বাঘ ছিল সেই সময়। মহারাজারা নিয়মিত শিকারে যেতেন। তাই নর নারায়ণের স্বপ্নে দুর্গার বাহন হিসেবে বাঘকে দেখতে পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। রাজা স্বপ্নে যেমন দেখেছিলেন, মূর্তিটি এত বছর পরেও সেই একই। দুর্গার সন্তান লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশরা নেই। তাদের জায়গায় আছেন জয়া ও বিজয়া। মহালয়ায় চক্ষুদান হয় দুর্গার। ষষ্ঠীতে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় পুজোর মঞ্চ।

দেবীবাড়ি মন্দিরে তৈরি করা হয় বড়দেবীর মূর্তি। ময়নাকাঠ দিয়ে তৈরি হয় দেবীর কাঠামো। জনশ্রুতি, মহারাজা বিশ্বসিংহ অসমের চিনকা পাহাড়ে থাকতেন। সেখানে ময়নাগাছের ডালকেই দেবী হিসাবে পুজো করতেন তিনি। আর তাই এখনও বড়দেবীর কাঠামোতে ময়না কাঠ ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন- সিংহ নয়, কেন উত্তর কলকাতার এই পুজোয় দুর্গা ব্যাঘ্রবাহিনী?

এই পুজোয় অষ্টমী শুরু হয় মহিষ বলি দিয়ে। একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কয়েক বছর আগে বলি বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। নর নারায়ণ যখন এই পুজো শুরু করেন তখন নাকি নরবলি হতো! এখন প্রতীকী 'নরবলি' হয়! তাই অষ্টমীর রাতে মন্দিরের ভিতরে গুপ্তপুজো হয়। পুরোহিত এবং আরেকজন ব্যক্তি এই পুজোর আচারগুলি পরিচালনা করেন। ধান দিয়ে একটি মানুষের ছবি তৈরি করা হয়। ওই ব্যক্তি নিজের আঙুল কেটে রক্ত বের করেন। কয়েক ফোঁটা রক্তে ওই ধানের ছবির মানুষটি সত্যি ‘মানুষ’ হয়ে উঠলে সেই মূর্তিটি তখন দেবীর উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হয়।

দশমীতে, কোচবিহারের বড়ো দেবীর বিসর্জন হয় যমুনা দীঘিতে। দেবীবাড়ির ঠিক পেছনেই এই পুকুরটি। দেবীর প্রতিমা যমুনা দীঘির তীরে আনা হলেও ঠিক সেভাবে বিসর্জন দেওয়া হয় না। মূর্তিটি বিশাল। পুকুরে একেবারে তলিয়ে যায় না। তাই প্রতিমা টুকরো টুকরো করা হয়। প্রথমে জয়া-বিজয়া বিসর্জনে যান, তারপর দুর্গার হাত এবং তারপর মাথা। কোচবিহারের এই প্রাচীন পুজো এক সম্পদ বাংলার উৎসবের!

More Articles