কোটি কোটি বছরের পুরনো গাছ রয়েছে এখানে, তাক লাগাবে রাজ্যের প্রথম ফসিল পার্কের সৌন্দর্য্য
Off Beat Tour Fossil Park : এক থেকে দুইদিনের ছুটিতে গিয়ে আবার রোজকার জীবনে ফেরার জন্য এরকম যুৎসই ভ্রমণের কিছু জায়গার নাম আজকাল বারবার শিরোনামে উঠে আসছে। এরকমই একটি জায়গা হল ফসিল পার্ক।
ঘুরতে যাওয়ার চিরাচরিত ধারণাটা দিনদিন বদলে যাচ্ছে। একটা সময় ছিল ভ্রমণ বলতে বাঙালি কেবল বুঝত দীঘা, পুরী অথবা দার্জিলিং। রাজ্যের বাইরে যাওয়ার চলও অবশ্য ছিল। নামজাদা কিছু তীর্থ স্থান যেমন কাশি, গয়া, কেদারনাথ, বদ্রিনাথ কিংবা খুব জোর নৈনিতাল অথবা কাশ্মীর। দীর্ঘ দিন যাবৎ ভ্রমণ বলতে বাঙালি কেবল এই জায়গাগুলিকেই বুঝত। তবে আজকের যান্ত্রিক যুগে সময় নামক বস্তুটাই বড় বিষম। লম্বা ছুটির হিসেব মেলানো এখন অতীত, তাই সপ্তাহান্তের ছুটিকে ভ্রমণ উপযোগী করে তুলছে আজকের প্রজন্ম। আর তার জেরেও চিরাচরিত জায়গার বদলে বেছে নিচ্ছে নিরিবিলি অথচ অফবিট ভ্রমণকে। এক থেকে দুইদিনের ছুটিতে গিয়ে আবার রোজকার জীবনে ফেরার জন্য এরকম যুৎসই ভ্রমণের কিছু জায়গাও তাই আজকাল বারবার শিরোনামে উঠে আসছে। এরকমই একটি জায়গা হল ফসিল পার্ক।
‘ফসিল’ অর্থাৎ জীবাশ্ম। এই শব্দটা শুনলেই নিমেষের মধ্যে চোখের সামনে ধরা দেয় আস্ত একটা ইতিহাস। একদিনের ছুটিতে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার অন্তর্গত বোলপুর শান্তিনিকেতন ভ্রমণে অনেকেই গিয়েছেন। সেখানে রবি ঠাকুরের স্মৃতি মাখা মেঠো পথে ঘুরতে ঘুরতে মন হারিয়ে যায় কোন সুদূরে। রবিঠাকুরের বিশ্বভারতী, খোয়াইয়ের হাট, কোপাই নদী, ডিয়ার পার্ক, কঙ্কালীতলা মন্দির ইত্যাদি ছাড়াও প্রায় ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই রয়েছে এমন একটি জায়গা, যা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়নি এখনও। জায়গাটির নাম ফসিল পার্ক। শান্তিনিকেতন বেড়াতে গেলে একযোগে ফসিল পার্ক ভ্রমণকেও দিব্যি যোগ করে নেওয়া যায়। ইলেমবাজারের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেখানে। শান্তিনিকেতনের কাছেই ইলামবাজারের জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে এই ফসিল পার্ক। যাকে বলা হয় উড ফসিল পার্ক। এখানকার পরিবেশ একেবারেই অন্যরকম। শান্ত, নিরিবিলি এই স্মৃতি দর্শনের জন্য টিকিটের মূল্য মাথাপিছু মাত্র ১০ টাকা করে।
আরও পড়ুন - সাধ্যের মধ্যেই সাধ পূরণ! সপ্তাহান্তের ছুটিতে ঘুরে আসুন কলকাতার খুব কাছে এই ‘মিনি গোয়া’ থেকে
ইলেমবাজারের এই ফসিল পার্কে রয়েছে বিভিন্ন রকমের উড ফসিল। একটা সময় বোলপুরের শুকনো মাটিতে ছিল খুবই জলকষ্ট। তাই সেই কষ্ট দূর করতেই প্রশাসনের তরফে শুরু হয় পুকুর খননের কাজ। আর সেই কাজেই উদ্ধার হয় বহু প্রাচীন উদ্ভিদের ফসিল। প্রত্যেকটি ফসিলের বয়স কম করে দেড় থেকে ২ কোটি বছর। এরকম একটা ইতিহাসকে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেন বন দপ্তর। সেই কাজেই প্রায় ১০ হেক্টর জমির ওপর তৈরি করা হয় আজকের এই ফসিল পার্ক। জানা গিয়েছ, এটিই রাজ্যের প্রথম ফসিল পার্ক। গবেষকরা জানিয়েছেন, কোটি কোটি বছর আগে বীরভূমের রাজ মহল পাহাড় এবং ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে বর্ষার জলে ভাসতে ভাসতে এই এলাকায় এসে মিহি বালির মধ্যে আটকে যায় প্রাচীন উদ্ভিদের অংশগুলি। পরবর্তীকালে সেগুলিই প্রস্তর চাপে তৈরি করে এই ফসিল।
কীভাবে যাবেন?
হাওড়া অথবা শিয়ালদহ থেকে শান্তিনিকেতনগামী যে কোনও এক্সপ্রেস ট্রেনে শান্তিনিকেতন পৌঁছে সেখান থেকে একটা টোটো ভাড়া করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন ইলামবাজারের জঙ্গলের ভিতরে নির্মিত এই ফসিল পার্কে। একসময় এই জঙ্গলকে বলা হতো চৌপাহাড়ি জঙ্গল। প্রতি সপ্তাহের বুধবার বন্ধ থাকে এই ফসিল পার্ক। চিরাচরিত শান্তিনিকেতন ভ্রমণে নতুনত্ব আনতে ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গা থেকে।
শুধু একটা ফসিল পার্ক নয়, এই জায়গায় এলে আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন সাঁওতালি গ্রাম, আদিবাসীদের নাচ এবং হারিয়ে যেতে পারবেন গহীন জঙ্গলের রোমাঞ্চকর পরিবেশের মধ্যে। সামনেই দোলের ছুটি। আর দোল মানেই বাঙালির পছন্দের তালিকায় প্রথমেই থাকে শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব। কিন্তু যারা খুব একটা ভিড় পছন্দ করেন না তাঁরা এইবারের দোলে শান্তিনিকেতন বেড়াতে গিয়ে অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি এই জঙ্গল ভ্রমণে নিজেদের মন ভরাতে পারবেন, তা বলাই বাহুল্য।