যোগ রয়েছে কলকাতার সঙ্গেও, নোবেল পেলেন শতায়ু গণিতজ্ঞ, চেনেন এই ভারতীয় কে?

C R Rao: পরিসংখ্যানে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেন সি আর রাও, জানেন কোন অবদানের জন্য মিলল এই স্বীকৃতি?

বয়সের ভারে একটুও টলেনি তাঁর বুদ্ধির দৌড়, ১০২ বছর পেরিয়ে এসেও অজেয় প্রখ্যাত ভারতীয়-মার্কিন গণিতবিদ তথা পরিসংখ্যানবিদ ক্যালিয়ামপুদি রাধাকৃষ্ণ রাও। সংখ্যা নিয়ে কারিগরি তাঁর, মানুষের বয়সটাও যে কেবল একটা সংখ্যা মাত্র তা যেন সত্যি সত্যিই প্রমাণ করলেন তিনি। গণিত এবং পরিসংখ্যান বিদ্যায় অভূতপূর্ব অবদানের জন্য ২০২৩ সালের ‘আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান পুরস্কার’ বা ‘গণিতের নোবেল’ পাচ্ছেন সি.আর. রাও। তবে শুধু ভারতের সঙ্গেই নয়, এমনকী খোদ বাংলার সঙ্গেও যোগ রয়েছে এই গণিতবিদের। এককালে কলকাতাতেই প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর গবেষণা পত্র। ‘ক্যালকাটা ম্যাথমেটিকাল সোসাইটির বুলেটিনে প্রকাশিত হওয়া সেই বিশেষ গবেষণাটির জন্যই এবার আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান পুরস্কার অর্থাৎ গণিতের নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।

জন্মসূত্রে তিনি মার্কিন হলেও, জন্মের পর থেকেই রয়েছেন ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের কর্ণাটকে। সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। প্রাথমিক স্কুল শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে তার পর আসেন কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রথমে পরিসংখ্যানে এমএ করেন। তারপর অন্ধ্রপ্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে এমএসসি করেন। এমএসসি শেষ করে বিদেশে যান। সেখানে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে ডক্টরেট এবং ১৯৬৫ সালে কেমব্রিজ থেকেই ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন ক্যালিয়ামপুদি রাধাকৃষ্ণ রাও। দীর্ঘ প্রায় ৭৫ বছর ধরে বিশ্বের গণিত ও পরিসংখ্যানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন তিনি। আজ জীবনের প্রায় উপন্তে এসে অবশেষে মিলল এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

পরাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাস আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন এই মানুষটি। আজীবন অঙ্ক নিয়ে লড়াই করে গিয়েছেন। নিজের সৃষ্টিকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করার এই ব্রতই তাঁর আমৃত্যু সঙ্গী। আজ এই বয়সে এসেও তাই তিনি নিয়মিত গবেষণার ঘরে যান, নিজের সবথেকে ভালোবাসার সংখ্যাগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করেন। তারই মাঝে আবার নতুন করে কোনও সূত্র খুঁজে পান, আর অচিরেই বিশ্বের তালিকায় যোগ হয়ে যায় নয়া সংজ্ঞা।

আরও পড়ুন - আর কোনও প্রাণীর দেহেই নেই! জানেন, কেন কেবল মানুষেরই চিবুক আছে?

সারা জীবন চুটিয়ে অধ্যাপনা করে বেড়িয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। নিজের যা কিছু সঞ্চয় তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সর্বত্র। তাঁর গবেষণার জন্যই অসংখ্য সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। বর্তমানে সি আর রাও বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণারত। পাশাপাশি পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এমিরিটাস প্রফেসর পদেও অসিন তিনি। আন্তর্জাতিক নোবেল পুরস্কার এই প্রথম ঠিকই তবে এর আগেই বেশ কিছু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ভারত সরকার ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০০১ সালে পদ্মবিভূষণ পুরস্কার তুলে দেন বিশ্ববিখ্যাত এই গনিতজ্ঞের হাতে।

তাঁর সারা জীবনের সবথেকে মূলবান সঞ্চয় বলতে তিনটি মৌলিক গবেষণা। সেগুলি হল যথাক্রমে, “ক্রেমার-রাও লোয়ার বাউন্ড”, “রাও-ব্ল্যাকওয়েল থিওরেম”, “তথ্য জ্যামিতি”। উল্লেখ্য, হিগস বোসন কণা পর্যবেক্ষণেও রাওয়ের তথ্য জ্যামিতিকেই ব্যবহার করা হয়েছে। তার আজকের এই নোবেল পুরস্কারের স্বীকৃতি এতদিনের গবেষণার ফলশ্রুতি মাত্র। চিকিৎসা গবেষণা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সি আর রাও এর অবদানকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। জানা গিয়েছে, আগামী জুলাই মাসে কানাডার অন্টারিওতে আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট আয়োজিত বিশ্ব পরিসংখ্যান কংগ্রেসে সিআর রাওয়ের হাতে এই ৮০,০০০ ডলারের পুরষ্কার তুলে দেওয়া হবে।

More Articles