অবিশ্বাস্য! বয়সকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন এই ব্যক্তি? কীভাবে?

Anti Ageing Technique: সকাল সকাল ৬০ খানি ওষুধ খান ব্রায়ান। বাকি দিনে আরও ৪০ টা!

“তা তো হবেই, আশি বছর বয়স হলে মানুষ বুড়ো হবে না!

বুড়ো বলল, “তোমার যেমন বুদ্ধি! আশি বছর বয়স হবে কেন? চল্লিশ হলেই আমরা বয়েস ঘুরিয়ে দিই। তখন আর একচল্লিশ বেয়াল্লিশ হয় না- ঊনচল্লিশ, আটত্রিশ, সাঁইত্রিশ করে বয়েস নামতে থাকে। এমনি করে যখন দশ পর্যন্ত নামে, তখন আবার বয়েস বাড়তে দেওয়া হয়। আমার তো বয়েস কত উঠল নামল, আবার উঠল। এখন আমার বয়েস হয়েছে তেরো!”

শাহরুখ এই ষাট ছুঁইছুঁই বয়সে এসে লাফাচ্ছেন, পেশি দেখিয়ে হৃদয়ে দুন্দুভি বাজিয়ে দিচ্ছেন, জন আব্রাহামকে দেখে মনে হচ্ছে ৫০ নয়, এই সদ্য ৩৫! টম ক্রুজকে দেখে এখনও ঘায়েল হয়ে পড়ছেন কিশোরীরা। রেখা সত্তরের কাছাকাছি গিয়ে লাস্য আর যৌবনকে কান ধরে শেখাচ্ছেন বয়সের মানে! এসব উদাহরণ একদিকে। এরা কেউই হয়তো হযবরল পড়েননি। পেশার খাতিরে শরীরে যৌবন ধরে রাখতেই হয়। কিন্তু এদের গুণে গুণে ১৫০ গোল দিয়েছেন ব্রায়ান জনসন। তিনিও হযবরল পড়েননি। তবে বাস্তবেই বয়সকে ঘুরিয়ে ফেলে, কমিয়ে দিয়েছেন। আধুনিক স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্রায়ান জনসনের বয়স কমানোর ঘটনাটি যতই জানা যায়, তাজ্জব হয়ে যেতে হয়।

ব্রায়ান জনসনের খাতায় কলমে বয়স ৪৫। আর বাস্তবে এখন বছর সাতেক কম। কোটিপতি এই সফ্টওয়্যার উদ্যোক্তার প্রতিটি শারীরিক কাজ পর্যবেক্ষণ করেন ৩০ জনেরও বেশি ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। বয়স কমাতে ব্রায়ান ইতিমধ্যেই খরচ করে ফেলেছেন ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার! বদলে তাঁর চামড়া, চুল থেকে শুরু করে মস্তিষ্ক, হার্ট, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, দাঁত, মূত্রাশয়, লিঙ্গ এবং মলদ্বারের বয়স অবধি একজন বছর আঠারোর মানুষের মতোই! প্রতি মাসে কয়েক ডজন চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় ব্রায়ান জনসনকে।

আরও পড়ুন- রাতারাতি কমে গেল দেশের সমস্ত নাগরিকের বয়স! যে ম্যাজিক ঘটাল দক্ষিণ কোরিয়া

প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠা আর ঘুমোতে যাওয়া অবধি ব্রায়ান জনসনের জীবন খাপে বাঁধা। খাবার একেবারে মাপে বাঁধা, প্রতিদিন ১,৯৭৭ নিরামিষ ক্যালোরি, ব্যায়াম দিনে এক ঘণ্টা, সপ্তাহে তিনবার বেশি পরিমাণে এবং ঘুম প্রতি রাতে একই সময়ে। ঘুমের অন্তত দুই ঘণ্টা আগে তিনি একটি বিশেষ চশমা পরেন, যাতে ঘুম নেমে আসে চোখে। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা, এমআরআই, আল্ট্রাসাউন্ড এবং কোলোনোস্কোপির মতো পরীক্ষা তো রয়েইছে। ব্রায়ানের শরীরে এখন চর্বি মাত্র ৫% থেকে ৬%। সামগ্রিক জৈবিক বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর কমে গিয়েছে। ব্রায়ানের হৃদযন্ত্রের বয়স এখন ৩৭ বছর, ত্বক ২৮ বছরের এবং ফুসফুস ১৮ বছর বয়সী ব্যক্তির মতোই ক্ষমতা ধরে৷

৩০ বছর বয়সে জনসন Braintree Payment Solutions LLC নামে একটি পেমেন্ট প্রসেসিং কোম্পানি তৈরি করেন। বিশাল সাফল্য আসে ঠিকই কিন্তু দীর্ঘ দীর্ঘ সময়ের কাজ এবং কাজের চাপে দেহ ভেঙে পড়ে, ওজন বেড়ে যায় অবসাদে ডুবে যান। ২০১৩ সালে ৮০০ মিলিয়ন ডলারে ইবে ইনকর্পোরেটেডের কাছে এই সংস্থাটি বিক্রি করে দেন ব্রায়ান, তারপর নিজেকে গোছানোর কাজে নেমে পড়েন। সেই ভয়াবহ চাপের জীবন থেকে বেরোতে এখন প্রতিদিনের রুটিন শুনলে হাঁ হয়ে যেতে হয়। সকালে ওঠেন ঠিক ৪.৩০ টেয়। তারপর শুরু হয় যৌবন ফেরানোর মহাযজ্ঞ। শরীর মাপেন, দেহের ওজন, তাপমাত্রা সবটুকু লিপিবদ্ধ করা হয়। একটি বিশেষ ইলেকট্রিক টুপি পরেন ব্রায়ান যাতে চুলে পাক না ধরে। একটি বিশেষ ইয়ারফোন পরেন, যাতে কানের একটি বিশেষ নার্ভে বিশেষ তরঙ্গ পাঠানো হয়। এই তরঙ্গ তাঁর স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে।

আরও পড়ুন- Vogue পত্রিকার প্রচ্ছদে ১০৬ বছর বয়সি ‘মডেল’! সারা দেহে উল্কি আঁকা এই বৃদ্ধা আসলে কে?

তারপর দিনে সকাল সকাল ৬০ খানি ওষুধ খান ব্রায়ান। বাকি দিনে আরও ৪০ টা! সারাদিনের এই ১০০ টি ওধুধে রয়েছে লিথিয়াম, হলুদ, রসুন, আদা, আয়রন, জিঙ্ক, ভিটামিন ই, ডি প্রভৃতি। মানসিক অসুস্থতা দূরে রাখতে লিথিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেতে হয় তাঁকে। একটি বিশেষ পানীয় খান দারুচিনি, করেলা পাউডার, অ্যামিনো অ্যাসিড, ক্রিয়েটিনের মিশ্রণ। তারপর ১ ঘণ্টা ব্যায়াম। ভোর ৬ টায়, ১ ঘণ্টা ব্যায়ামের পর তিনি খান 'সুপার ভেজি মিল'। ব্রকোলি, ফুলকপি, আদা, রসুন, কিছু শস্য আর মাশরুম মেশানো খাবার। আবার সকাল ৮ টায় একটি খাবার খান। তারপর ১১ টায় খান দিনের শেষ খাবার। তারপর সারাদিন আর কোনও খাবার না। সন্ধা ৬ টায় চশমাটি পরে নেন, সাড়ে ৮ টায় ঘুম!

বাড়িতেই চলে ত্বকের বয়স কমানোর বিবিধ কাজ। সারা শরীরের প্রতিটি ইঞ্চি থাকে ডাক্তারের নজরে। শ্রবণ ক্ষমতা বাড়ানো হয়। হাই ফ্রিকোয়েন্সি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন দিয়ে ৩০ মিনিটে ২০ হাজার সিট আপ করেন। রেড লাইট থেরাপি করান, যাতে ত্বক আর পেশি তরুণ থাকে। আর এই বিরাট কর্মকাণ্ডের ফলে তাঁর ডিএনএ-র বয়স এখন কমে গিয়েছে ৫ বছরেরও কম। জন্মিলে মরিতে হবে, একথা ব্রায়ানও জানেন। তাহলে কীসের জন্য বয়স কমানোর এত তাড়া। আসলে তাড়া নয়, ব্রায়ান চরম অসুস্থ জীবনযাপনকে দেখেছেন কাছ থেকেই। এখন আজেবাজে খাবার, অসময়ে ঘুম বা না ঘুমনো, মানসিক চাপ থেকে বহুদূরে নিজেকে বিজ্ঞানের এক পরীক্ষার অংশ করে তুলেছেন তিনি। মৃত্যুকে আটকানো যায় না ঠিকই কিন্তু বয়স সত্যিই সংখ্যা, মানুষের হাতেই তা ঘুরিয়ে ফেলার চাবি। ব্রায়ান আসলে হযবরলর সেই টেকো বুড়ো, যার বয়স এখন কমতির দিকে।

More Articles