৩৬ বছর ধরে 'গর্ভবতী' এই পুরুষ! অস্ত্রোপচার শেষে চোখ কপালে চিকিৎসকদের...
Man Pregnant for 36 Years: একটি ভ্রূণের দেহের মধ্যে তার যমজের দেহের একটি বিকৃত অংশ বা আংশিকভাবে বিকশিত ভ্রূণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
৩৬ বছর ধরে গর্ভবতী! ১০ মাসের জায়গায় ৪৩২ মাস! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। আরও আঁতকে উঠবেন যদি বলা হয়, গর্ভবতী নন, আসলে গর্ভবান। এক পুরুষ ৩৬ বছর ধরে গর্ভধারণ করে ছিলেন! কীভাবে সম্ভব? মহারাষ্ট্রের নাগপুরের বাসিন্দা সঞ্জু ভগত। ৩৬ বছর ধরে গর্ভবতী মহিলার মতোই তাঁর পেট ফোলা। নাহ, চর্বি নয়, থলথলে ভুঁড়িও না। পেটের মধ্যে সত্যিই রয়েছে এক ভ্রূণ। সারা দেশ 'গর্ভবতী পুরুষ' নামেই ডাকত সঞ্জু ভগতকে। আসলে নিজেরই যমজ অংশটি ছিল তাঁর গর্ভে, ৩৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে। শুনতে যতটা জটিল, এই রোগ ততটাই জটিল ও বিরল। নিজেরই দেহের যমজ অংশকে নিয়ে গর্ভবতী হওয়া এক অত্যন্ত বিরল অবস্থা যা 'ফিটাস ইন ফিটু' বা 'ভ্যানিশিং টুইন সিনড্রোম' নামে পরিচিত। গর্ভের মধ্যে থাকা অবস্থায় একটি যমজ গর্ভাবস্থাতেই মারা যায় এবং অন্য ভ্রূণ তাকে গিলে নেয়। প্রতি ৫০০,০০০ জীবিত সন্তান জন্মের মাত্র একটির ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে।
ছোটবেলায় সঞ্জু ভগতের পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে গিয়েছিল, কিন্তু ব্যাপারটিকে কেউই তেমন গুরুত্ব দেননি। বয়স বাড়তে বাড়তে যখন সঞ্জু যখন কুড়ির কোঠায়, তাঁর পেট দ্রুত বাড়তে শুরু করে। এতকাল পর শরীর নিয়ে সত্যিই উদ্বেগ বাড়তে শুরু করে পরিবারের। সমবয়সীদের কাছ থেকে নিয়মিত টিটকিরি চলতেই থাকে। পরিবারের উদ্বেগও বাড়তেই থাকে। এত কিছু সত্ত্বেও ওই শরীর নিয়েই সঞ্জু ভগত একটি খামারে কাজ চালিয়ে যান পেটের ভাত জোগাতে।
আরও পড়ুন- মানুষের মূত্র ঢুকিয়ে দেওয়া হতো ব্যাঙের দেহে! কীভাবে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করত আগেকার মানুষ?
১৯৯৯ সালে তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হয়। ডায়াফ্রামের উপর চাপ বাড়তে থাকার কারণে শ্বাস নিতেও কষ্ট হতে থাকে তাঁর। মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে ডাক্তাররা প্রাথমিকভাবে টিউমার ভেবে পেটে অস্ত্রোপচার করেন। অপারেশনের সময় ডাক্তাররা আশ্চর্য হয়ে দেখেন রোগীর পেটের ভিতরে আস্ত এক মানুষ!
পেটে হাত ঢোকাতেই চিকিৎসকরা দেখেন ভিতরে অসংখ্য হাড় রয়েছে। প্রথমে একটি অঙ্গ বেরিয়ে আসে, তারপর আরেকটি অঙ্গ। তারপর, যৌনাঙ্গের অংশ, চুল, চোয়াল। চিকিৎসকরা রীতিমতো ঘাবড়ে যান। বিস্ময় এবং আতঙ্কে শেষমেশ তারা দেখেন রোগীর দেহের মধ্যে বেড়ে উঠেছে এক মানুষ! ভয়ঙ্কর ছিল সেই অভিজ্ঞতা।
আরও পড়ুন- সর্বজয়া নয়, বাংলা ছবির ইতিহাসে গর্ভধারণ ছাড়াই ‘মা’ হয়ে উঠেছিল এই চরিত্র
ভ্রূণের মধ্যে ভ্রূণ আসলে কী?
ভ্রূণের দেহের মধ্যে ভ্রূণ একটি অত্যন্ত বিরল রোগ। আসলে জরায়ুর মধ্যে সাধারণত যমজ সন্তান থাকলে এমনটা হতে পারে। এক্ষেত্রে একটি ভ্রূণের দেহের মধ্যে তার যমজের দেহের একটি বিকৃত অংশ বা আংশিকভাবে বিকশিত ভ্রূণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এটি ভ্রূণের একেবারে প্রাথমিক বিকাশের সময় ঘটে। ভ্রূণ যখন আস্তে আস্তে তৈরি হচ্ছে, তখন একটি যমজ ভ্রূণ অন্য যমজটিকে গিলে নেয়, তার নিজের শরীরে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। এই গিলে ফেলা যমজটিকে পরজীবী যমজ নামেই ডাকা হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়। যে যমজটি তাকে গিলে ফেলেছে সেই ভ্রূণটির শরীরের ভিতরে, সাধারণত পেটের মধ্যে আটকে থাকে দ্বিতীয় ভ্রূণ। সময় মতো একটি ভ্রূণ পরিণত হয়, সে শিশু হিসেবে ভূমিষ্ঠ হয়, বড় হয়। সবই সাধারণভাবে চলতে থাকে, তাঁর দেহের মধ্যে যে একটি ভ্রূণ রয়ে গিয়েছে প্রায়শই অনেক বয়সকাল অবধি তা শনাক্ত করা যায় না। পেট ফুলে যাওয়া বা ব্যথার মতো উপসর্গ না দেখা দেওয়া অবধি এই ঘটনা আন্দাজও করা যায় না। পরজীবী যমজের দেহটিকে সরিয়ে ফেলতে সাধারণত অস্ত্রোপচারেরই প্রয়োজন হয়। তবে এই অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল প্রকৃতির। ফলে প্রাণ হারানোর ঝুঁকিও থাকে এই রোগে। সাধারণত ভ্রূণের মধ্যে ভ্রূণের ক্ষেত্রে একটি বা দুই যমজই জন্মের আগেই মারা যায় কারণ এর ফলে প্ল্যাসেন্টায় চাপ পড়ে। তবে এইক্ষেত্রে আরও আশ্চর্যজনক বিষয় ছিল যে, 'হোস্ট টুইন'টি মানে সঞ্জু ভগত যে শুধু বেঁচে ছিল তাই না, সে যথা সময়ে জন্মও নেয় এবং তাঁর শরীরে পরজীবী যমজটি বেঁচেও ছিল। অস্ত্রোপচারের পরেই সে মারা যায়।
রোগ নির্ণয়
আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, প্লেইন রেডিওগ্রাফি, কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (সিটি), বা ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিংয়ের (এমআরআই) মতো বিভিন্ন ইমেজিং কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে প্রিঅপারেটিভ ডায়াগনসিস করা হয়।
চিকিৎসা সম্ভব?
ভ্রূণের মধ্যে ভ্রূণ একটি বিরল অবস্থা। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এর চিকিত্সা করা যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব।