'গ্রেফতারির তালিকা তৈরি'! NIA-কে ট্যাগ করে বিজেপির বিরুদ্ধে যে বিস্ফোরক দাবি কুণালের
Kunal Ghosh: মাঝেমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বোমা ফাটিয়ে থাকেন রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আগে ফের তেমনই ভূমিকায় দেখা গেল কুণাল ঘোষকে। এবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এনআইএ-কে ট্যাগ করে বিস্ফোরক দাবি কর...
সম্প্রতি ক্ষোভ দেখিয়ে দলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। লোকসভা ভোটের আগে তাঁর এমন ব্যবহারে অবাক হয়েছিল রাজনৈতিক মহলের বড় অংশ। তবে পদ ছাড়লেও দল ছাড়েননি কুণাল। মাঝেমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বোমা ফাটিয়ে থাকেন রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আগে ফের তেমনই ভূমিকায় দেখা গেল কুণাল ঘোষকে। এবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এনআইএ-কে ট্যাগ করে বিস্ফোরক দাবি করলেন তিনি।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই অবিজেপি রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ধরপাকড় বাড়ছে। ইতিমধ্যেই আবগারি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। ইতিমধ্যেই ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। এর পরে ইডি-সিবিআইয়ের তালিকায় বেশ কয়েকটি অবিজেপি রাজ্যের নেতানেত্রীরা রয়েছেন বলেই আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই ফের বিস্ফোরক অভিযোগ জানিয়ে বসলেন কুণাল ঘোষ। তাঁর দাবি, নিউটাউনে এসপি ডি আর সিংহের বাড়িতে নাকি বৈঠক করছেন দুই বিজেপি নেতা। আর সেই বৈঠকে নাকি গ্রেফতার করার জন্য তৃণমূল নেতাদের নামের তালিকা ঠিক করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনের নামের তালিকাও নাকি হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। কুণালের আরও অভিযোগ, 'ইতিমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে নোটিস জারি হয়েছে, কালও আরও নোটিস যাবে। নিজাম প্যালেসেও আধিকারিকদের সঙ্গে একই বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন বিজেপির এক নেতা। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA)-কে টুইটারে ট্যাগ করে এই তথ্য সত্য না মিথ্যে যাচাইয়ের জন্য আবেদন করা হয়েছে। কুণালের প্রশ্ন, বিজেপির দেওয়া তালিকা অনুযায়ী কি তৃণমূলের কর্মীদের গ্রেফতার করতে চলেছে এনআইএ।
আরও পড়ুন: কখনও পোশাক তো কখনও মুখ্যমন্ত্রীর পিতৃপরিচয়, ঘরেবাইরে যে ভাবে কোনঠাসা হলেন দিলীপ ঘোষ
আজ থেকে নয়, দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল বারবার অভিযোগ করে আসছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিকে বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করছে। আর এবার আধিকারিকের নাম ধরেই অভিযোগ তৃণমূলের। সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠক করেও কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, "NIA-এর একজন এসপি, তিনি আইপিএস নন, দায়িত্বে এসপি। তাঁর বাড়িতে বিজেপির ২ নেতা বৈঠক করেছেন। সুখবৃষ্টি আবাসনের কাছাকাছি বাড়ি ওই আধিকারিকের। পরপর ২টি বৈঠক হয়। কেন ভোটের আগে এনআইএ-এর অফিসার বিজেপি নেতার সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করবেন। সেখানে যে দুইজন গিয়েছিলেন দুইজনেই প্রার্থী। আর এক নেতা নিজাম প্যালেসে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যিনি নিজাম প্যালেসে দেখা করেছেন তিনি প্রার্থী নন।' তাঁর আরও অভিযোগ, 'আগামীকাল এনআইএ অভিযান হবে পূর্ব মেদিনীপুর এবং আরও কয়েকটি জায়গায়। পর্যায়ক্রমে কয়েকটি জায়গা থেকে তৃণমূলের কর্মী ও সংগঠনের কয়েকজনকে সরাতে চাইছে। ওই তৃণমূল কর্মীদের তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবে এনআইএ।"
কিন্তু কুণাল এসব কথা জানলেন কী করে? সে কথাও অবশ্য জানাতে ভোলেননি তৃণমূলের মুখপাত্র। তাঁর দাবি, "এনআইএ-এর একটি অংশ এই রাজনৈতিক লেঠেলের ভূমিকায় অংশ নিতে চান না। তাঁরাই এই খবর দিয়েছেন।" তবে এই খবর কতটা সত্য, তা জানা যায়নি।
Attn NIA officers
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) March 29, 2024
1) Whether it is a fact that 2 BJP leaders had two meetings with SP D R Sing at his new town resident, handed over list of @AITCofficial leaders and workers for immediate summon and arrest, or not. Some notices have already been issued. Tomorrow some more will…
বিজেপি নেতা সজল ঘোষের অবশ্য পাল্টা দাবি, 'আমরা তথ্য দিলেই কি গ্রেফতার হচ্ছে নাকি। আগে তো তদন্ত হবে, সেই তথ্য ঠিক কিনা। তাছাড়া, নির্বাচনের আগে কি কেউ এনআইএ কাউকে গ্রেফতার করতে পারে? উনি আসলে জ্যোতিষী হয়ে গিয়েছেন। কদিন আগে বলেছিলেন কে কত ভোট পাবে। আর এখন বলছেন কবে এনআইএ অভিযান হবে।' সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের দাবি, কুণালবাবু যে অভিযোগ করেছেন। তার মানে উনি ব্যক্তিগত ভাবে জানেন যে লিস্ট আছে এনআইএ-এর। কারণ ওঁদের দলের সঙ্গে বিজেপির একটি অংশের ভাল যোগাযোগ রয়েছে। তাই জেনেবুঝেই কুণালবাবু এই অভিযোগ করেছেন। তাহলে কুণালবাবুকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে এর তদন্ত হওয়া উচিত। এটা তো মারাত্মক অভিযোগ।"
সত্যিই কি ইডি-সিবিআইয়ের পরে এবার তৃণমূল নেতানেত্রীদের উপর নামতে চলেছে এনআইএ আক্রমণ? কুণালের বক্তব্যে উস্কে উঠেছে আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রকম দুর্নীতি মামলায় তৃণমূলের একাধিক নেতানেত্রীই জেলে। এবার কি সেই তালিকায় নাম জুড়তে চলেছে আরও কোনও নেতার। শুধু এনআইএ-র তালিকা প্রসঙ্গে নয়, এদিন দিলীপ-কাণ্ডেও ফের আলটপকা মন্তব্য করেছেন কুণাল। বেশ কিছুদিন ধরেই দিলীপের কুমন্তব্য নিয়ে রাজ্যরাজনীতি তোলপাড়। মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে সম্প্রতি কুকথা বলে বসেন দিলীপ। আক্রমণ করেন তাঁর পিতৃপরিচয় নিয়ে। সেই ব্যাপারে তাঁকে সমর্থন করেনি দল। বিষয়টি নিয়ে তাঁকে শো-কজ করেছিল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে তার কাছ থেকে জবাব চায় নির্বাচন কমিশনও। প্রকাশ্যে এ নিয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন দিলীপ ঘোষ। সেই সঙ্গে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মমতার আক্রমণেরও সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভোটের আগে বিপাক বাড়ল তৃণমূলের? কেন দলীয় পদ ছাড়লেন কুণাল?
সেই প্রসঙ্গে এ দিন দিলীপবাবুকে বিঁধতে গিয়ে ফের কুকথা বলে বসেছেন কুণাল। শুভেন্দু অধিকারীকে বাবা তুলে আক্রমণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আবার ওর বাবা তুলব, যা করার আছে করুন।” সে নিয়ে ফের তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনীতিতে। বেশ কিছুদিন ধরেই একাধিক বার বিতর্কে জড়িয়েছেন কুণাল। কখনও দলের বিরুদ্ধেই আকারে ইঙ্গিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন। কখনও আবার বিজেপির বিরুদ্ধে এনআইএ-র সঙ্গে চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন। দিলীপকে দুষতে গিয়ে নিজেই কুকথা বলে বসেছেন। সব মিলিয়ে ভোটের আগে জমি মাতিয়ে রেখেছেন কুণাল। তবে কুণালের এই সব বক্তব্যের প্রভাব কতটা পড়তে চলেছে ব্যালটবক্সে? কুণালের এই সব কথাবার্তা আদতে বিপদে ফেলবে না তো তৃণমূলকেই? উঠছে সেই প্রশ্নও।