সংসদে কঙ্গনা থেকে মহুয়া, কারা মহিলাদের অগ্রাধিকার দিলেন এবার?

Women MPs in Lok Sabha: এবার তৃণমূলের ১১ জন মহিলা সাংসদ জিতেছেন, তৃণমূল ১২ জন মহিলাকেই প্রার্থী করেছিল।

১৮ তম লোকসভা গঠিত হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়েও এনডিএ শরিকদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি, তৃতীয় মেয়াদে সরকার গড়েছেন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ৭৪ জন মহিলা সাংসদ রয়েছেন। ২০১৯ এর তুলনায় কমেছে মহিলা সাংসদদের সংখ্যা। ২০১৯ সালে ৭৮ জন মহিলা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, ১৭ তম লোকসভায় মহিলা সাংসদদের অংশ ছিল ১৪.৩%। ২০২৪ সালে তা ১৩.৫%৷

এবারের নির্বাচিত ৭৪ জন মহিলা সাংসদদের মধ্যে ৪৩ জনই প্রথমবার সাংসদ হলেন। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) মিসা ভারতী এই প্রথম লোকসভার সাংসদ হলেন৷ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোট ৮,৩৬০ জন প্রার্থী ছিলেন, যার মধ্যে প্রায় ১০% এবার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংসদীয় রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ১৯৫৭ সালে প্রার্থীদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা ছিল ৩%।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোট ৭৯৭ জন মহিলা প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২০২৩ সালেই সরকার সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করে। এই বিলে লোকসভা এবং বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে। ইতিহাস বলছে, ক্রমেই একেবারে পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে লোকসভা অবধি মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম লোকসভা নির্বাচনের সময় নিম্নকক্ষে মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ৪.৪১%। এক দশক পরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এই সংখ্যা বেড়ে ৬%-এর বেশি হয়। ১৯৭১ সালে ভারতের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি যখন নেতৃত্বে ছিলেন তখন আবার মহিলাদের অংশগ্রহণ কমে ৪ শতাংশেরও নিচে চলে আসে।

আরও পড়ুন- স্বাধীনতার পর এই প্রথম! দেশের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হল না একজন মুসলিম সাংসদেরও

দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে সংসদে ৫৮ জন মহিলা সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে মহিলাদের হার সংসদে বেড়ে ১০ শতাংশেরও বেশি হয়ে যায়। ২০০৪ সালে ৪৫ জন মহিলা সাংসদ ছিলেন, অর্থাৎ মোট সংখ্যার মাত্র ৮.৩%।

২০১৪ সালে ১৬ তম লোকসভায়, ৬২ জন মহিলা সাংসদ ছিলেন, মোট সদস্যের ১১.৪%। ২০১৯ সালেই এই হার ছিল সাম্প্রতিককালে সর্বোচ্চ, ১৪.৩৬%। তবে এই হার বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের থেকে ঢের কম। দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বেশ কয়েকটি দেশে মহিলা সাংসদের সংখ্যা অনেক বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার সংসদে মহিলারা আছেন ৪৬%, যুক্তরাজ্যে ৩৫% এবং আমেরিকায় ২৯%।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, বিজেপি এবার ৬৯ জন মহিলাকে প্রার্থী করেছিল, যার মধ্যে ৩০ জন জিতেছেন, অর্থাৎ ৪৩.৪% শতাংশ সাংসদ হয়েছেন। ২০১৯ সালে বিজেপি ৫৬ জন মহিলাকে প্রার্থী করেছিল, যার মধ্যে ৪১ বা ৭৩.২% জয়ী হয়েছিলেন।

কংগ্রেস ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪১ জন মহিলাকে প্রার্থী করে যার মধ্যে মাত্র ১৩ জন বা ৩৪% জয়ী হন। ২০১৯ সালে কংগ্রেসের ৫২ জন মহিলা প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৬জন নির্বাচিত হয়েছিলেন।

অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে লোকসভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বেশ ভালো। এবার তৃণমূলের ১১ জন মহিলা সাংসদ জিতেছেন, তৃণমূল ১২ জন মহিলাকেই প্রার্থী করেছিল। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৯জন মহিলা জেতেন।

মহিলা প্রতিনিধিত্ব বেশি এমন দলগুলির মধ্যে রয়েছে লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস) এবং জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি। এদের মহিলা প্রার্থী ৪০%। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) এবং বিজু জনতা দলের (বিজেডি) মহিলা প্রতিনিধিত্বের হার ৩৩%। রাষ্ট্রীয় জনতা দলে (আরজেডি) মহিলাদের অংশগ্রহণ ২৯% এবং সমাজবাদী পার্টির (এসপি) ২০%।

আরও পড়ুন- স্পিকারকে ডাল ছুঁড়েছিলেন! ওড়িশার নতুন মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি আসলে কে?

এবারে সপা-র চারজন মহিলা প্রার্থী সাংসদ হয়েছেন, তিনজন হয়েছেন দ্রাবিড় মুনেত্রা ডিএমকে-র, দু'জন জনতা দল (ইউনাইটেড) এবং লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি)। এছাড়া তেলেগু দেশম পার্টি, জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (শরদ পাওয়ার), যুবজন শ্রমিক রাইথু কংগ্রেস পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল থেকে একজন করে প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

এবারের কয়েকজন বিশিষ্ট মহিলা সাংসদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসের কুমারী সেলজা, বিজেপির কঙ্গনা রানাউত এবং হেমা মালিনী, সমাজবাদী পার্টির ডিম্পল যাদব এবং ইকরা চৌধুরী, আরজেডির মিসা ভারতী, তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র, ডিএমকে-র কানিমোঝি করুণানিধি এবং এনসিপি-র সুপ্রিয়া।

সবচেয়ে কম বয়সি সাংসদদের মধ্যে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মছলিশহরের সমাজবাদী পার্টির সাংসদ প্রিয়া সরোজ (২৫ বছর) এবং রাজস্থানের ভরতপুরের কংগ্রেসের সাংসদ সঞ্জনা জাটভ (২৫)।

More Articles