ছয় বছরে ৩০টি দেশে ভ্রমণ, অথচ চড়েননি একটিও ফ্লাইট! কীভাবে সম্ভব করলেন এই দম্পতি?

Kian and Morgan Committed to Non-Airplane Travel : ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং বালি সহ ৩০টিরও বেশি দেশ ঘুরে দেখেছেন ইতিমধ্যেই, ফ্লাইট ছাড়া কীভাবে সম্ভব হল এই ভ্রমণ?

“আলোর মতন, হাসির মতন
কুসুমগন্ধ রাশির মতন
হওয়ার মতন, নেশার মতন
ঢেউয়ের মতন ভেসে যাই
আমরা এমনি এসে ভেসে যাই...”

এ শুধু কবির বাণী নয়, জীবনের সার সত্য। হাতের ওপর হাত রেখে কঠিনকে সহজ করা যায় নিমেষেই তার প্রমাণ মেলে বাস্তবের মাটিতেই। প্রেমের গল্পে অবশ্য হামেশাই শোনা যায় মনের মানুষের হাত ধরে দূরদূরান্তে পাড়ি দেওয়ার কথা তবে এই ঘোর বাস্তব যেখানে কেবল নিময়ের কড়াকড়ি, ব্যস্ততার পরোয়ানা সেখানেও এমনটা সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব, সেটিই প্রমাণ করে দেখালেন জোশুয়া কিয়ান এবং সারাহ মরগান নামের এক দম্পতি।

পায়ের তলায় সর্ষে এই দম্পতির। এর মধ্যেই বিশ্বের প্রায় ত্রিশটি দেশ ভ্রমণ করে ফেলেছেন একে অপরের হাতে হাত রেখেই। তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ আর এমন কি! তাহলে কেনোই বা আলোচনার কেন্দ্রে এলেন এই দম্পতি? শুনলে অবাক হবেন এই ত্রিশটি দেশ ভ্রমণ করতে একবারও ফ্লাইটে চড়েননি তাঁরা। কীভাবে সম্ভব করলেন এই ঘটনা?

আরও পড়ুন - বয়স প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার! কোথায় আছে বিশ্বের প্রাচীনতম গাছটি? দেখতে কেমন?

২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে শেষবার ফ্লাইটে চড়েছিলেন কিয়ান এবং মরগান। পর্তুগাল থেকে ইংল্যান্ডে তাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য। অবশ্য তখন এই দম্পতি মোটেই জানতো না এটাই তাদের শেষবারের জন্য ফ্লাইট ভ্রমণ। উল্লেখ্য, গত প্রায় ১৮ মাস ধরে একটানা ভ্রমণ করে চলেছেন এই দম্পতি। ত্রিশটি দেশে ভ্রমণ করেছেন এই সময়ের মধ্যেই, অথচ ব্যবহার করেননি একটিও ফ্লাইট। আসলে, শেষবার যখন বাড়ি ফেরার পথে ফ্লাইটে চড়েছিলেন তারা তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পরিবেশগত প্রভাব পড়েছিল ফ্লাইট ভ্রমণে, যার জেরে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পরবর্তী সমস্ত ভ্রমণই করবেন বিনা ফ্লাইটে।

এরপর ক্রমেই সময় এগিয়েছে, থেমে থাকেনি তাদের ভ্রমণও। একের পর এক দেশ চষে বেরিয়েছেন ইতিমধ্যেই। ছয় বছরে সেই সংখ্যাটা ছুঁয়েছে ত্রিশের কাছাকাছি। তাদের ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউব চ্যানেলে জোশ এবং সারাহ রাইড -এ রয়েছে এই সমস্ত ভ্রমণের গল্প। সবকটি ভ্রমণই যে নন-ফ্লাইট ট্রিপে পরিণত হয়েছে তা বোঝা যায় সেইসব অসাধারণ ভিডিও দেখলেই।তাদের ভ্রমণের অংশ হিসেবে এসেছে বাইক, ট্রেন, হিচহাইকিং, ফেরি এবং ট্রেন সফরের ছবি। হাজার হাজার মাইল ভ্রমণ করেছেন তাঁরা এইসব মাধ্যমেই।

যদিও কিয়ান এবং মরগান মোটেই প্রথম থেকে স্থির ছিলেন না এমনটা আদৌ সম্ভব কিনা, তাই সমস্ত ট্রিপকে ফ্লাইটহীন করার কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি তাঁরা, বরং তারা চলার পথে ফ্লাইটের বিকল্প খুঁজে নিয়েছিলেন সবসময়। যার ফল স্বরূপ দেখা যায়, ২০১৭ সাল থেকে টানা ছয় বছরের সমস্ত ভ্রমণ করেছেন তাঁরা বিনা ফ্লাইটে।

আরও পড়ুন - হরিণ, ছৌ, সঙ্গে প্রকৃতির অপার হাতছানি, দোলে অন্য বসন্তের ছোঁয়া পেতে চলে আসুন এখানে

এই দম্পতি ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং বালি সহ ৩০টিরও বেশি দেশ ঘুরে দেখেছেন ইতিমধ্যেই। কিয়ান এবং মরগানের সম্পর্কের শুরু আজ থেকে প্রায় বছর দশেক আগে। দুজনেই ঘুরতে অসম্ভব ভালোবাসেন, তাই মনের মিল হয়ে যায় সহজেই। আর সেই মিলের জোরেই তারা বিশ্ব ভ্রমণে উদ্যোগী হন। কিয়ান এবং মর্গান দুজনেই সর্বদা প্রকৃতির মধ্যে নিজেদের মিশিয়ে দিতে চেয়েছেন, তাই আগ্রহী ছিলেন দুঃসাহসিক কাজগুলিতেও।

একদিকে প্রকৃতির প্রতি অসম্ভব ভালবাসা এবং অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণের তাগেদি তাদেরকে আরও বেশি ভ্রমণ উদ্যোগী করে তুলেছে বলেই দাবি এই দম্পতির। এখানেই শেষ নয়, যাতে আরো বেশি ভ্রমণ করতে পারেন এবং শারীরিক ক্ষমতার সঙ্গে জুঝতে পারেন তাই তারা তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে আট বছর আগে থেকে নিরামিষাশী ডায়েট গ্রহণ করে আসছেন। আগামীতেও তারা এই ভাবেই ভ্রমণ করে যাবেন বলেই আশাবাদী।

More Articles