ফের বিক্ষোভে অবরুদ্ধ ঢাকা! কেন রিকশা নিয়ে শাহবাগ দখল রিকশাচালকদের?
Bangladesh: চাকরি স্থায়ী করার দাবি নিয়ে পথে নেমেছিল আনসার বাহিনী। তার জের ফিকে না হতে হতেই ঢাকায় আন্দোলনে নামলেন রিকশাচালকেরা।
বাংলাদেশে সরকার বদল হয়েছে সদ্য। এখন সেখানে ক্ষমতায় রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তার পরেও কমছে না বিক্ষোভের আঁচ। দু'দিন আগেই আনসার বাহিনীর বিক্ষোভে রণক্ষেত্রের আকার নিয়েছিল ঢাকা। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার রিকশাচালকদের বিক্ষোভে অবরুদ্ধ হল ঢাকার শাহবাগ। সোমবার একগুচ্ছ দাবি নিয়ে রাস্তা অবরোধ করলেন বাংলাদেশের রিকশাচালকেরা।
সোমবার সকাল দশটা নাগাদ শাহবাগ মোড়ে অবস্থান জমা হতে শুরু করেন শহরের একের পর এক প্যাডেলচালিত রিকশাচালকেরা। ওই জমায়েতের উদ্যোক্তা ছিলেন বৃহত্তর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন রিকশা মালিক ঐক্যজোট। একগুচ্ছ দাবি নিয়ে রাস্তার দখল নেন তারা। কার্যত রিকশাচালকদের বিক্ষোভে বন্ধ হয় রাজপথের যানচলাচল।
বাংলাদেশ জুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন যেন লেগেই রয়েছে। একমাসও হয়নি, সংস্কারবিরোধী আন্দোলন বিরাট আকার নিয়েছিল বাংলাদেশে। ছাত্রবিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানের আকার নিতে সময় লাগেনি। এমনকী যা টলিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গদিও। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। তার পরে সর্বসম্মত ভাবে বাংলাদেশ শাসনের ভার যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিখ্যাত নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তার পরেও দেশে শান্তি ফেরেনি।
আরও পড়ুন: আনসার-পড়ুয়া সংঘর্ষে ফের অশান্ত বাংলাদেশ! আনসার বাহিনী কারা? কী-ই বা দাবি তাদের?
রবিবারই ঢাকায় পড়ুয়াদের সঙ্গে আনসারবাহিনীর সংঘর্ষ বাঁধে। কমপক্ষে ৪০ জনের আহত হওয়ার খবর মেলে সেই সংঘর্ষে। চাকরি স্থায়ী করার দাবি নিয়ে পথে নেমেছিল আনসার বাহিনী। তার জের ফিকে না হতে হতেই ঢাকায় আন্দোলনে নামলেন রিকশাচালকেরা। প্রাথমিক ভাবে এ আন্দোলন ছিল প্যাডেলচালিত রিকশাচালকদের। মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবিতেই মূলত পথে নেমেছিলেন তাঁরা। সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তাঁরা। তবে দুপুর বারোটার দিকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে শাহবাগ মোড় ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। প্যাডেলচালিত রিকশাচালকদের দাবি, আগে প্রধান সড়কে অটোরিকশা চলত না। ফলে প্যাডেল রিকশাচালকরা পর্যাপ্ত ভাড়া পেত। এখন সব জায়গায় অটোরিকশা চলে, কেউ কিছু বলে না। ফলে তারা কোনো ভাড়া পান না। আগের নিয়মে অটোরিকশা বন্ধ করলে তারা ভাড়া পাবেন। সরকার চাইলেই আগের নিয়ম চালু করতে পারে। আর তার জন্য ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন তাঁরা।
এরপর দুপুর ১টার দিকে ফের শাহবাগের দখল নিতে শুরু করেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকেরা। তাঁরাও সড়ক-মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে দেন। শাহবাগ থানার নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা এ কে এম সাহাবুদ্দিন শাহীন জানান, সকাল থেকে রিকশাচালকদের দুটি গ্রুপ আন্দোলন করে। তবে বিকেল সাড়ে তিনটের পর ফাঁকা হয়ে যায় শাহবাগ চত্বর। সকলেই রাস্তা থেকে সরে যান।
তবে আন্দোলনরত রিকশাচালকদের আরও একগুচ্ছ দাবি রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মতো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে রিকশা মালিকানা নতুন লাইসেন্স প্রদান ও পুরাতন লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের দাবি। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ও বৈধ লাইসেন্সধারী রিকশা পেশাজীবীদের স্বার্থে ঢাকা উত্তর/দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে চালক লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। অসুস্থ চালকদের ফ্রি ফ্রাইডে মেডিকেল চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি ঢাকা উত্তর/দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স প্রাপ্ত রিকশা পেশাজীবীদের ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করতে হবে বলেও দাবি জানিয়েছেন রিকশাচালকেরা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা, নেপথ্যে যে কারণ
না, এখানেই শেষ নয়। এককালে বাঙালি মুলুকের প্রাচীন বাহন ছিল রিকশা। রিকশাচালকদের দাবি, নৌকা, পালকি, ঘোড়াগাড়ির মতো রিকশাকেও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ন্যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় জাদুঘরে স্থান দিতে হবে। এর পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে সব বীর নিহত হয়েছেন এবং যাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদেরকে বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতিবাজদের অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে, সংগৃহীত অর্থ দিয়ে পরিবারকে পুনর্বাসন ও আহতদের সু-চিকিৎসা প্রদান করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। এর পাশাপাশি বিগত সরকারের সময়কালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও সরকার দলীয় চাঁদাবাজরা আধিপত্য বিস্তার করে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায় অন্যায় ও বেআইনিভাবে বিশেষ পোশাকে রিকশা পরিচালনা করে এসেছে, সেই সব রিকশাগুলোকে বন্ধ করে, পায়ে চালিত বৈধ রিকশাগুলিকে চলাচলের সুযোগ দিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
এদিক রিকশাচালকদের এই অবরোধে ব্যাপক যানজট তৈরি হয় শাহবাগ এলাকায়। অসুবিধায় পড়েন নিত্যযাত্রীরাও। যে ভাবে বাংলাদেশে নিত্য় মাথাচাড়া দিচ্ছে বিক্ষোভ ও আন্দোলনের ঢেউ, এবং তা উঠে আসছে নানা স্তর থেকে, তা সামাল দিয়ে ঠিক মতো দেশ পরিচালনা করতে পারবে নয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নাকি ছোট ছোট বিক্ষোভের ঢেউগুলির বিরাট হয়ে ওঠা এখন সময়ের অপেক্ষা কেবল? কবে বাংলাদেশে ভোট, এ ব্যাপারেও তেমন কোনও দিশা দেখাতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। এখন বাংলাদেশের জন্য আর কী কী অপেক্ষা করছে, সেটাই দেখার।