আঘাত পেলে গাছেরাও 'চিৎকার' করে ওঠে মানুষের মতোই! মাইক লাগিয়ে শুনলেন বিজ্ঞানীরা
Plant Trees Scream Science : হ্যাঁ, গাছেদেরও আঘাত লাগে। আর কষ্ট পেলে, আঘাত লাগলে তারাও চিৎকার করে মানুষের মতোই!
খেলতে খেলতে, বা দুর্ঘটনায় চোট আঘাত পাওয়া আমাদের অনেকেরই ভাগ্যে ঘটে। যে কারণেই হোক না কেন, আহত হলে যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠি আমরা। কিংবা মন ভেঙে গেলে, অবসাদ, দুশ্চিন্তা হলে চিৎকার করে কেঁদে উঠি। প্রিয় মানুষরা চলে গেলে আমাদের মন খারাপ হয়। এসবই মানুষের সহজাত স্বভাব। কতটা লেগেছে, কীরকম লেগেছে, কোথায় ব্যথা – সেসবও আমরা মুখ ফুটে বলতে পারি। কিন্তু উদ্ভিদ?
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অজস্র গাছপালা। নিত্যদিন তাদের ওপর চলে নানা রকম অত্যাচার। কখনও পাতা ছিঁড়ে নেওয়া হচ্ছে, কখনও ফুল অথবা ফল। নগরায়নের ঢেউয়ে পড়ে অজস্র গাছকে করাত দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হচ্ছে। কখনও আবার বড় বড় গাছের গায়ে খোদাই করে লিখে রাখা হচ্ছে নাম। আমরা, মানুষরা তো নিজেদের মতো করে এসব কাজ করে যাচ্ছি। গাছগুলো কি বিন্দুমাত্র কষ্ট পাচ্ছে না? সেই কবে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু বলে গিয়েছেন, ‘গাছেরও প্রাণ আছে’। প্রাণ যদি থাকে, তাহলে এই আঘাত, অত্যাচারে কোনও সাড়াশব্দ করছে না তারা?
আরও পড়ুন : অশান্ত কাশ্মীর ভরিয়ে তুলছেন সবুজে, দু’লাখের বেশি গাছ লাগিয়েছেন ‘বৃক্ষমানব’
এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সামনে আসে আসল সত্যি। হ্যাঁ, গাছেদেরও আঘাত লাগে। আর কষ্ট পেলে, আঘাত লাগলে তারাও চিৎকার করে মানুষের মতোই! বেশি ব্যথা লাগলে আমরা, মানে মানুষরা যেমন যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকি, গাছেরাও তেমনই করে। কেবল মাটিতে গড়াগড়ি দিতে পারে না, এই যা। কিন্তু তাদেরও প্রচণ্ড কষ্ট হয়। আর সেই কষ্টের বহিঃপ্রকাশ করে চিৎকার করে!
ইজরায়েলের টেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই বিশেষ তথ্য তুলে ধরেন। এই পরীক্ষায় তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন টম্যাটো ও তামাক গাছকে। বেশ কয়েকটি গাছকে একসঙ্গে রেখে তাদের ‘কষ্ট’ দেওয়া হয়। পাতা ছিঁড়ে, ডাল ছিঁড়ে কিংবা আঘাত করে নানাভাবে পরীক্ষা করা হয়। সেইসঙ্গে গবেষকদের সঙ্গে থাকে বিশেষ কয়েকটি যন্ত্র। আঘাত করার পরই দেখা গেল, সেই গাছগুলির থেকে নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের শব্দ বেরোচ্ছে। যখনই আঘাত করা হচ্ছে, তখনই এমন শব্দ তরঙ্গ গাছগুলি থেকে নির্গত হচ্ছে।
সেখান থেকেই গবেষণার শুরুয়াৎ। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের বক্তব্য, কেবল আঘাত করাই নয়। মাটির নিচে জল শুকিয়ে গেলে, খরাপ্রবণ অঞ্চলে কিংবা ভয়ংকর বন্যায় ভেসে গেলেও প্রতিক্রিয়া দেখায় গাছ। অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষ কম্পাঙ্কের শব্দ নির্গত করে। তবে সামান্য কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের গন্ধ নিঃসরণ, কিংবা রং বদলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। কিন্তু আঘাত লাগলে এত চিৎকার করে গাছ, তাহলে আমরা, মানে মানুষেরা শুনতে পাই না কেন?
আরও পড়ুন : সম্পত্তির মালিক, নিজের মালিক গাছ নিজেই! মন ভালো করা যে কাহিনি লুকিয়ে আড়ালে
গবেষকরা বলছেন, এর জন্য দায়ী আমাদের কান। আমরা নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পাই। তার বাইরের শব্দ আমাদের কানে ধরা পড়ে না। ওই গবেষকদের সঙ্গে যে যন্ত্রগুলি ছিল, সেগুলি আলট্রাসনিক শব্দ ধরতে পারে। সেখান থেকেই জানা গিয়েছে, আঘাত লাগলে গাছগুলি মূলত ২০ থেকে ১০০ কিলোহার্ৎজ শব্দ বের করে। সেটাই তাদের ‘চিৎকার’। মানুষের কাছে উপযুক্ত যন্ত্র থাকলে তাঁরাও এটি ধরতে পারবেন। অদ্ভুতভাবে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বেশকিছু প্রাণী, যারা আলট্রাসনিক শব্দ শুনতে পায়, তারা এই ধরনের শব্দ বুঝতে পারে। অন্যান্য গাছেরাও এই কম্পাঙ্ক বুঝতে পারে।
বিজ্ঞানীরা আরও বলেছেন, এক একরকম যন্ত্রণায় গাছেদের এক একরকম চিৎকার। কেউ আঘাত করলে যে কম্পাঙ্কের শব্দ বেরোয়, খরাপ্রবণ অঞ্চলে অন্য কম্পাঙ্কের শব্দ বেরোয়। বিশেষভাবে তৈরি আলট্রাসনিক মাইক্রোফোন লাগিয়ে সেই শব্দ ধরতেও পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে গবেষণা এখনও শেষ হয়নি। এই বিষয় নিয়ে এখনও বিস্তারিত কাজ চলছে। কে জানে, ভবিষ্যতে নতুন কোনও তথ্য আমাদের সামনে উঠে আসবে কিনা!