উত্তরপ্রদেশই উলটে গেল! কে গিলে ফেলল রাম মন্দিরের সাফল্য?
Ayodhya Ram Mandir Lok Sabha Results: অযোধ্যা যে লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, সেই ফৈজাবাদেরও ভোট টানতে ব্যর্থ হচ্ছে রাম মন্দির।
রামের নামে ভোট টানা সম্ভব নয়, বিজেপি বুঝেছিল আগেই। তাই ২০২৪ সালের শুরুতে রামমন্দিরের বিশাল উদযাপনের পর থেকে একাধিক কৌশল ব্যবহার করতে হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টিকে। কখনও সিএএ, কখনও মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেফতারি, কখনও সরাসরি মুসলিমদের আক্রমণ। লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনার বেশ কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত। একটা জিনিস এতক্ষণে পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিজেপির গড়, খোদ উত্তরপ্রদেশেই ধাক্কা খাচ্ছে গেরুয়া আধিপত্য। তাও আবার ইন্ডিয়া জোটের থেকে, যে জোটকে ক্ষণে ক্ষণে অপদস্থ করেছে বিজেপি। এই মুহূর্তে বিজেপিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলেছে ইন্ডিয়া জোট। দুপুর অবধি আসা ফলে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের ইন্ডিয়া জোট উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৪৪টিতে এগিয়ে ছিল। এনডিএ জোট এগিয়ে আছে ৩৫টি আসনে।
২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি যথাক্রমে ৭১ এবং ৬২টি আসন পেয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। ভোটের পরে বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষাতে এইবারও একই প্রবণতার কথা বলা হচ্ছিল। তবে এখনও পর্যন্ত যা ফলাফল এগোচ্ছে তাতে স্পষ্টতই প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে, এক্সিট পোল ধ্রুব সত্য নয়৷ বেশ কিছু রাউন্ডে গণনা এখনও বাকি। এও সত্য যে, চিত্রপট যে কোনও সময় পাল্টে যেতে পারে। কিন্তু খোদ উত্তরপ্রদেশে, মোদি-যোগীর উত্তরপ্রদেশে বিজেপি এমন বড় ধাক্কা খাচ্ছে কেন?
আরও পড়ুন- কোন কোন আসনে বিজেপিকে দুরমুশ করছে তৃণমূল?
স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, রাম কি তবে ভোট এনে দিলেন না? রামমন্দির কি বিজেপিকে কোনও সাহায্যই করল না? এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয়গুলির মধ্যে একটি ছিল অযোধ্যায় বিশাল রাম মন্দির নির্মাণ। সেই ১৯৮০-র দশক থেকে বিজেপি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে রাম মন্দিরের। এবছর তা বাস্তব হয়েও যায়। ভোটের বছরে মন্দির উদ্বোধন ছিল অবশ্যই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফলাফলের বড় ফ্যাক্টর।
কিন্তু এখনও অবধি ভোটের ফলাফল বলছে, অযোধ্যা যে লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, সেই ফৈজাবাদেরও ভোট টানতে ব্যর্থ হচ্ছে রাম মন্দির। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ওই আসনে বিজেপির লাল্লু সিংয়ের বিরুদ্ধে সমাজবাদী পার্টির অবদেশ প্রসাদ ৪,০০০ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। প্রতিবেশী নির্বাচনী এলাকাগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। ফৈজাবাদের সীমান্তবর্তী সাতটি আসনের মধ্যে দু'টিতে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে - গোন্ডা এবং কায়সারগঞ্জ। অন্য পাঁচটির মধ্যে, কংগ্রেস দু'টিতে এগিয়ে রয়েছে, আমেঠি এবং বরাবাঁকি আর সমাজবাদী পার্টি তিনটিতে এগিয়ে, সুলতানপুর, আম্বেদনগর এবং বাস্তিতে।
অখিলেশ যাদব এবং রাহুল গান্ধি শেষবার ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে একসঙ্গে প্রচার করেছিলেন। কিন্তু ফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, বিজেপি পেয়েছে ৩০২টি আসন এবং কংগ্রেস-সপা জোট মাত্র ৪৭টি। সাত বছর পরে, দুই নেতা স্বাভাবিভাবেই রাজনৈতিকভাবে আরও পরিপক্ক হয়েছেন। ইন্ডিয়া জোটের শরিক হয়ে তারা লোকসভার লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন। বিজেপি বিরোধী শক্রি হিসেবে কংগ্রেস আর সপা এবার উত্তরপ্রদেশে 'গেম চেঞ্জার' হলেও হতে পারে। ইন্ডিয়া জোট এখন রাজ্যের ৮০টি আসনের মধ্যে ৪৪টিতে এগিয়ে রয়েছে, এনডিএ- ৩৫ টিতে এগিয়ে৷
আরও পড়ুন- অপ্রতিরোধ্য মহুয়া! কৃষ্ণনগরে যে ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাম ও বিজেপির কৌশল
মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বহুজন সমাজ পার্টি হামেশাই ভোটের আগে চমকে দেয়। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিএসপি উত্তরপ্রদেশে একটিও আসন পায়নি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ১০টি আসন জিতে যায় তারা। গত নির্বাচনে বিএসপি সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট করে ছিল কিন্তু এবার একলা চলো রে নীতি নিয়েছে। এদিকে সপা জুড়ে গেছে কংগ্রেসের সঙ্গে।
এখনও পর্যন্ত ফলাফল অনুযায়ী বিএসপি এবার আবার চূড়ান্ত হারের মুখ দেখবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গণনার চার ঘণ্টায় কোনও আসনেই এগিয়ে নেই মায়াবতীর দল। নাগিনা আসনে উঠতি দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং সেখানে বিএসপি চতুর্থ স্থানে রয়েছে। আজাদ এই আসনে জিতলে উত্তরপ্রদেশের দলিত রাজনীতিতে নতুন সূর্য উঠবে। কিন্তু এসবের মাঝে বিজেপি কই? রামের নামে ভোট টানতে না পারায় কত আসন মোট হারাতে পারে বিজেপি? ইন্ডিয়া জোট যদি এমন রক্ষণশীল গড়ে বিজেপিকে কোণঠাসা করতে পারে, তবে সারা দেশেই এর প্রভাব পড়বে।