ট্রাম্প ৭৮, বাইডেন ৮১! যুক্তরাষ্ট্র দখলের লড়াইয়ে দুই বৃদ্ধ, মানুষের কথা কে ভাববে?

Joe Biden Vs Donald Trump: যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ।

তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন। বয়স ৮১। যত দিন যাচ্ছে অসংলগ্ন হচ্ছে আচরণ। ভুলে যাচ্ছেন, ভ্রমে থাকছেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষপদে আসীন হতে চান তিনি। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হতে চাইছেন জো বাইডেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয় তাঁকে। জো বাইডেন গত বেশ কয়েক মাস ধরেই অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। কিছুকাল আগেই বর্ষীয়ান ডেমোক্র্যাট নেতা শি জিনপিংকে ‘রাশিয়ার মাথা’ বলে ফেলেছিলেন তিনি। এমন নানা টুকরো ভুল তিনি করেই চলেছেন। প্রশ্ন উঠছে, মানসিকভাবে আদৌ সুস্থ তো তিনি? মানসিক অসুস্থতা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদে তাঁকে মেনে নেবে জনতা? ট্রাম্পের বয়সও কম নয়। আদৌ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার এই লড়াই আমেরিকার উন্নয়নের লক্ষ্যে? নাকি কেবল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের দখল রাখাই লক্ষ্য? 

নিজের মানসিক ফিটনেস নিয়ে অবশ্য কোনও প্রশ্নই কানে তুলছেন না বাইডেন। উল্টে প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে আক্রমণ করেছেন। নিজের অসংলগ্ন কথাবার্তার প্রেক্ষিতে বাইডেন ট্রাম্পের বয়সের দিকেও আঙুল তুলেছেন। ট্রাম্পের বয়স এখন ৭৮। বাইডেনের অভিযোগ, ট্রাম্পও নিজের স্ত্রীর নাম মনে রাখতে পারেন না। কিছুকাল আগে একটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্প নিজের স্ত্রীর নাম ধরে ডাকার সময় দেখা যায় তিনি অন্য একটি নামে ডাকছেন তাঁকে। বয়স শারীরিক, মানসিকও। তাহলে কেন নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব দিতে চাইছেন না এই দুই বৃদ্ধ নেতা?

আরও পড়ুন-বছর ২০-র যুবক! ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করল কে?

যুক্তরাষ্ট্রের আম জনতার কাছে কি বাইডেনের বয়স বা সেই সংক্রান্ত মানসিক অসংলগ্নতা আদৌ বিশেষ চিন্তার কারণ? ৮১ বছরের বাইডেনের বয়স নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে তিন-চতুর্থাংশ ভোটারের। অন্যদিকে ট্রাম্পের বয়স ৭৮ হলেও তাঁকে নিয়ে কারও এই ধরনের উদ্বেগ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বারবার বাইডেনের ভুলে যাওয়া কিংবা উল্টোপাল্টা উক্তির কারণেই মানুষের মনে বাইডেনের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। ইউক্রেনের নাগরিকদের ইরানি বলে ফেলা বা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে ‘ভ্লাদিমির’ বলা অথবা প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের নাম গুলিয়ে ফেলার মতো ঘটনা বারবার ঘটছে বাইডেনের সঙ্গে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে, বাইডেন হঠাৎ করেই আনমনা হয়ে পড়েন। ওবামা সেখানকার পরিস্থিতি সামলে নেন। অশীতিপর বাইডেনের শারীরিক তথা মানসিক সুস্থতা নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, স্মৃতিভ্রংশের অসুখ জাঁকিয়ে বসছে। নেতাদের নাম দূর অস্ত, প্রাতঃরাশে কী খেয়েছেন তাও ভুলে যাচ্ছেন বাইডেন।

এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেনের প্রার্থীপদ প্রত্যাহারে চাপও বাড়ছে। ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক পর্বে বিপুলভাবে জয়ী হয়ে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হয়ে আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাই দলীয় নেতারা প্রার্থী হিসেবে তাকেই সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিন্তু বাইডেনের বারবার এমন ভুল নিয়ে দলের পৃষ্ঠপোষক ও নীতিনির্ধারকদের একাংশ উদ্বিগ্ন। এমনকী বাইডেনের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের অনেকেই চাইছেন না, ৮১ বছর বয়সি বাইডেন নভেম্বের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ।

আরও পড়ুন- মোদির দেশে কতটা স্বাধীন সংবাদমাধ্যম? দিল্লি ছেড়ে ভিয়েতনামে গিয়ে কী বললেন বাইডেন?

তাহলে এই মুহূর্তে ট্রাম্পই সবচেয়ে যোগ্য?

জো বাইডেনে যাতে কোনওভাবেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ না করতে পারেন তার জন্য ট্রাম্পের সমর্থকরা ইউএস ক্যাপিটলে হামলা চালায়। সংঘর্ষে মারা যান অনেকে, আহত হন আরও অনেক বেশিজন। হোয়াইট হাউস গ্রাউন্ডের বাইরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তৃতায় উত্তেজিত হয়ে, বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের হামলা করে। ইউএস ক্যাপিটল পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট দিয়েও বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পারেনি। ট্রাম্প সমর্থকদের হিংসা কোন পর্যায়ে যেতে পারে তা ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের ঘটনা প্রমাণ করে দেয়। ক্ষমতা দখলের জন্য ট্রাম্প মরিয়া। তাঁর উপর সম্প্রতি গুলি চালানোর ঘটনায় কি সহামুভূতির ভোট পাবেন তিনি?

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আমেরিকার উন্নয়নের লক্ষ্যে কী কী করলেন বাইডেন? কী করেছিলেন ট্রাম্প? ট্রাম্পের উপর বন্দুকবাজের হামলা একটি বিষয় স্পষ্ট করে দেয় যে বন্দুকের, গুলিগোলার অবাধ চর্চা বাড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। আতঙ্ক কমাতে কোন পদক্ষেপ করেছে বাইডেন সরকার? নাকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বন্দুকের রাজনীতিকেই ফলাও করে প্রচার করতে চাইছেন, তাতে আখেরে ক্ষমতার লাভ। মার্কিন মহিলাদের গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অন্দরে অন্দরে ফুঁসছেন সেই দেশে মহিলারা। অথচ এই বিষয়গুলি নিয়ে সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপ নেই। আছে কেবল ক্ষমতা ধরে রাখার মরিয়া, আগ্রাসী মনোভাব।

দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন বনাম ট্রাম্প লড়াই অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ। যে চ্যালেঞ্জে বয়স এবার সত্যিই হয়ে উঠেছে 'ফ্যাক্টর'। ট্রাম্প সমর্থকদের উগ্রতাকে নিজের প্রচারে ব্যবহার করেছেন বাইডেনও। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকদের ভাঙচুর এবং লুটতরাজের ছবি, ভিডিও পোস্ট করেছিলেন তিনি। তবে তা কি তাঁর প্রতি সমর্থন বাড়াবে? ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসাবে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন রবার্ট এফ কেনেডি (জুনিয়র) এবং মারিয়ানা উইলিয়ামস। করোনাকালে আমেরিকায় টিকা বিরোধী আন্দোলনের একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন রবার্ট এফ কেনেডি। মারিয়ানা লেখালেখি করেন। ট্রাম্প আর বাইডেনের পাশাপাশি কি তারাও এবারের নির্বাচনে অন্যতম বড় মুখ হয়ে উঠবেন?

More Articles