'যেদিন শ্রমিকরা বেরোবেন সেদিনই ক্রিসমাস'! কেন বলছেন আর্নল্ড ডিক্স?
Uttarakhand Tunnel Rescue : আর্নল্ড বলছেন, পাহাড় কতদিন ধরে এই মানুষদের সূর্যের আলো দেখতে দেয়নি, কিন্তু পাহাড়ই এই শ্রমিকদের উষ্ণ রেখেছে।
সার দিয়ে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স, রয়েছে হেলিকপ্টার, অস্থায়ী হাসপাতাল, সমস্ত জরুরি পরিষেবা, আর রয়েছে কয়েক কোটি ভারতীয় দৃষ্টি। উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে ধসে পড়া সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিক ঠিকমতো বেরিয়ে আসতে পারবেন তো? ১২ নভেম্বর থেকে গর্তেই বাস তাঁদের। ধসে পড়া সুড়ঙ্গে ১৭ দিন ধরে বন্দি হয়ে রয়েছেন সকলে। উদ্ধারে র্যাট-মাইনিং বিশেষজ্ঞরা উঠে পড়ে লেগেছেন, সামান্যই বাকি আর। তারপরেই মুক্তি! পাহাড়ের গর্ভে রয়েছেন শ্রমিকরা। দিনের আলো দেখেননি ১৭ টা দিন! সোমবার ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে নতুন করে ড্রিলিং শুরু হয়, এই অন্তিমলগ্নে সুড়ঙ্গের ঝুঁকি আর শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে যে মানুষটি সারাক্ষণ পরামর্শ জুগিয়ে গেছেন, আস্থা বাড়িয়েছেন তিনি আর্নল্ড ডিক্স। অস্ট্রেলিয়ার এই মানুষটি আসলে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ। ভারতে এই বিশেষ উদ্ধার অভিযানে সাহায্য করতে যেদিন তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছন, সেদিনই সবটা দেখে সাহস জুগিয়েছিলেন, ক্রিসমাসের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাবেন শ্রমিকরা।
ক্রিসমাস? বড়দিন তো বহুদূর! ঠিক এই প্রশ্নই তাঁকে করেছিলেন এক সাংবাদিক। আর্নল্ড বলেন, যেদিন শ্রমিকরা বেরোবেন, সেদিনই বড়দিন! পাহাড়ের গর্ভে, অনিশ্চিত অন্ধকারে যে শ্রমিকরা আটকে রয়েছেন তারা দেশের নানা রাজ্যের খেটে খাওয়া পরিযায়ী শ্রমিক। দীর্ঘ অন্ধকার শেষে যেদিন তারা বেরোবেন বাইরে, আলো দেখবেন, সেইদিন যদি বড় দিন না হয়, তবে এর চেয়ে বড় দিন কোথায়ই বা আছে লুকিয়ে আর!
মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর দুপুর দেড়টা নাগাদ রাজ্য সরকারের তথ্য দপ্তরের বংশী ধর তিওয়ারি জানান খনন কাজ শেষ। এর কিছুক্ষণ পরে, মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী সোশ্যাল মিডিয়ায় নিশ্চিত করে জানান, ড্রিল করা প্যাসেজে বের করে আনার পাইপ বসানো হয়েছে। শিগগিরই সমস্ত কর্মীদের বের করে আনা হবে। আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিকের এই উদ্ধারকার্যকে অদ্ভুত এক কাহিনির মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন আর্নল্ড ডিক্স। তিনি ঈশ্বর বিশ্বাসী, তিনি প্রকৃতি বিশ্বাসীও। আটকে পড়া, আটকে পড়ে বেঁচে থাকা, উদ্ধারের গতি শ্লথ হওয়া, উদ্ধারের দিন ঘনিয়ে আসা সবটাকেই মহাকাব্যের মতো দেখছেন তিনি।
আর্নল্ড বলছেন, গোটা বিষয়টিই তাঁর কাছে ৩০০০ বছর প্রাচীন কোনও মহাকাব্যের মতো। একটি আস্ত পাহাড় ৪১ জন মানুষকে নিজের মধ্যে নিয়ে রেখে দিয়েছে। নিজের ভেতরে, নিজের গর্ভে রেখে দিয়েছে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে। এই ৪১ জন মানুষ নিতান্তই সাধারণ, খেটে খাওয়া মানুষ, ভালো মানুষ, কোনও অন্যায় করেননি। পাহাড় যেন তাঁদের নিরাপত্তা দিচ্ছে, বলছেন আর্নল্ড। যে খননকাজ চলছে, যেভাবে শ্রমিকদের কাছে খাবার পাঠানো হচ্ছে, ক্যামেরা পাঠিয়ে তাঁদের অবস্থা পরিবারকে জানানো হচ্ছে, আর্নল্ডের বিশ্বাস সবটাই পাহাড় চাইছে বলেই হচ্ছে।
Internation tunneling expert Arnold Dix is totally humbled with the spiritual side of the universe in the #UttarakhandTunnelRescue.pic.twitter.com/qWfLaura34
— Shining Star 🇮🇳 (@ShineHamesha) November 28, 2023
আর্নল্ড বলছেন, পাহাড় কতদিন ধরে এই মানুষদের সূর্যের আলো দেখতে দেয়নি, কিন্তু পাহাড়ই এই শ্রমিকদের উষ্ণ রেখেছে। আর এই উদ্ধারে নিযুক্ত সবাই যেন পাহাড়ের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছে, সন্তানদের ফিরিয়ে দেওয়ার। পাহাড় তাতে যেন খানিক গম্ভীর হয়ে বলছে, ‘হুম তা দিতে পারি হয়তো’! "তাই আমরা যখন খুঁড়ছি, খুঁড়েই যাচ্ছি পাহাড় হয়তো অল্প অল্প হাসছে, কারণ আমরা তো ভাবছি দারুণ কাজ হচ্ছে! তাই যখনই মনে হলো এই বুঝি কাজ শেষ, দরজা খুলে যাবে, পাহাড় আবার দরজা বন্ধ করে দিল! আমরা রাতে ভেবেছিলাম উদ্ধার হয়ে যাবে, সকালেও দরজা খোলেনি, দুপুরেও না। এখন মেশিনপত্রকেই বিশ্রাম দিতে হচ্ছে," বলেছেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ।
এতদিন ধরে সুড়ঙ্গে আটকে থাকার ফলে শ্রমিকরা দুর্বল হবেন তা স্বাভাবিক। তবে আস্ত একটা অংশ ধসে পড়ার পরেও কেউ কিন্তু আহত হননি। আর্নল্ডের মতে, পাহাড়ই সবটা নিয়ন্ত্রণ করছে। পাহাড় যদি এই মানুষদের মুক্তি দিতে না চায়, তাহলে কেউই পারবে না বের করে আনতে। পাহাড় মানুষকে নম্র হতে শিক্ষা দেয়। আর্নল্ড নম্রতার কথা বললেও, আসলে পাহাড়ের দুর্বলতা, জমির নমনীয়তা সত্ত্বেও এখানে সরকারের এই সুড়ঙ্গ তৈরি হচ্ছে। জোশীমঠ ক্রমে বসে যাওয়ার পর থেকেই এই টানেল নির্মাণ নিয়ে একাধিক সওয়াল উঠেছিল। উন্নয়নের নামে ভূপ্রকৃতিগতভাবে দুর্বল জায়গাকে কি আরও বিপন্ন করে তোলা হচ্ছে না? এই শ্রমিকদের উদ্ধার শিগগিরই শেষ হবে কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর কি মিলবে আদৌ?