'পাঁচতারা'-র স্বাচ্ছন্দ্য! গরম জলে স্নানের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে যা যা থাকছে বন্দে ভারত স্লিপারে

Vande Bharat Express : সুরভিত শৌচালয়, অপেক্ষাকৃত অনেক বড় জায়গা, আয়না ও বেসিনের ব্যবস্থার সঙ্গেই গরম জলে স্নানের ব্যবস্থা। সবই মিলবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস স্লিপারে

ট্রেনের শৌচাগার মানেই অপরিষ্কার, নোংরা একটা ব্যাপার। চেন দিয়ে বাধা মগ, দুর্গন্ধ। আর সে ট্রেন যদি দূরপাল্লার হয় তো, কথাই নেই। পারতপক্ষে খুব অসুবিধা না হলে ট্রেনের শৌচালয় ব্যবহার করার কথা বিশেষ ভাবেন না যাত্রীরা। তবে সেই সব এখন অতীত। এবার পাঁচতারা হোটেলের মতোই শৌচাগারের সুবিধা মিলবে ট্রেনে। বিশ্বাস হচ্ছে না তো? তবে চক্ষু-কর্ণের সেই বিবাদ ঘটাবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের স্লিপার কোচে উঠলেই।

বিশ্বমানের ট্রেন, দ্রুততম যাত্রা, এসব কিছুর প্রতিশ্রুতি নিয়েই নরেন্দ্র মোদি সরকার নিয়ে এসেছিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এবার সেই ট্রেনে মিলবে গরম জলের স্নানের ব্যবস্থা। না, রানিং হট ওয়াটার সার্ভিস নয়। বরং শৌচাগারের ভিতরেই থাকছে গরম জলের শাওয়ার। ফলে চাইলেই সেই গরম জলে স্নান করে একেবারে তরতাজা হয়ে ট্রেন থেকে নামতে পারবেন যাত্রীরা।

আরও পড়ুন: বন্দে ভারতেই যত উন্নতি! রেলের বাজেটে কী পেলেন আম-আদমিরা?

গোড়া থেকেই একাধিক ঝাঁ চকচকে ফিচার নিয়ে হাজির হয়েছে ভারতের আধুনিকতম এই স্লিপার ট্রেন। আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই দেশ জুড়ে বিরাট প্রতিরোধ-বিক্ষোভের মুখে পড়েছিল বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। জায়গায় জায়গায় অবরোধ, এমন পাথর ছোড়ারও মুখে পড়েছিল ট্রেনটি। তবে ক্রমশ সেই সব বাধা কাটিয়ে নিজের ছন্দেই যাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ট্রেনটি। ট্রেনের কামরায় আধুনিক আসন, টিভি-তে সর্বক্ষণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখ, খাওয়াদাওয়াপ ব্যবস্থা, সেসবের পাশাপাশি এবার আধুনিকতম সংযোজন ট্রেনে স্নানের ব্যবস্থা। ভারতের দূরপাল্লার ট্রেনে এর আগে এমন সুবিধা সম্ভবত মেলেনি।

বহু যাত্রী, বহু মানুষের কাছেই সবচেয়ে বড় সমস্যা ট্রেনের শৌচাগার। ছোট্ট একফালি শৌচাগার, তা-ও আবার নোংরা। চেনে বাধা মাটিতে রাখা মগ, যা দেখলেই আপনার গা ঘিনঘিন করবে, স্পর্শ করা তো দূর। তবু প্রয়োজনের তাগিদে সেই শৌচাগারই বাধ্য হয়ে ব্যবহার করে এসেছেন যাত্রীরা এতদিন। তবে এবার সেই অসুবিধার হাত থেকেই মুক্তি দিতে চলেছে। সুরভিত শৌচালয়, অপেক্ষাকৃত অনেক বড় জায়গা, আয়না ও বেসিনের ব্যবস্থার সঙ্গেই এবার মিলবে গরম জলে স্নানের ব্যবস্থা।

এতদিন দেশের সবচেয়ে বিলাসবহুল, দ্রুতগামী ট্রেন ছিল রাজধানী। দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহণের হিসেবে রাজধানীই ছিল দেশের পয়লা নম্বর ফাইভস্টার ট্রেন। তবে রাজধানীর সেই এতবছরের কৌলিন্যে এবার ভাগ বসাতে চলেছে বন্দে ভারত। শুধু ভাগ বসাচ্ছে বললেও ভুল বলা হবে, কার্যত বন্দে ভারতের প্রতাপে পিছিয়ে পড়েছে সে। স্টার রাজধানীর পরিষেবা ও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যকে বলে বলে দশ গোল দিচ্ছে বন্দে ভারত।

রাজধানী তো বটেই, শতাব্দীর মতো বহু বিলাসবহুল ট্রেনের পরিষেবাই মার খাচ্ছে বন্দে ভারতের কাছে। প্রাথমিক ভাবে শুধু চেয়ারকার নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল বন্দে ভারত। পরবর্তী কালে স্লিপার, সাধারণ ট্রেন ও মেট্রোর বগি নিয়েও আসতে চলেছে মোদি সরকারের ড্রিম প্রোজেক্ট বন্দে ভারত। এই বছরের প্রথম ছ’মাসের মধ্যেই বন্দে ভারতের ‘মেট্রো’ এবং ‘স্লিপার’ সংস্করণ ট্র্যাকে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে রেলবোর্ডের। এর মধ্যে বন্দে ভারতের স্লিপার ভার্সনের যাত্রীরা অন্য দূরপাল্লার ট্রেনের মতোই শুয়ে শুয়েও ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে রেলকর্তাদের লক্ষ্য, বন্দে ভারত যাতে যাত্রীদেরকে বিশেষ স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারে।

অভিজাত ট্রেনের ধারনায় কার্যত বিপ্লব আনতে চলেছে বন্দে ভারত। ভারতীয় রেলের রোলিং স্টক বিভাগের কর্তারা জানাচ্ছেন, বন্দে ভারত স্লিপারের প্রোটো-টাইপ রেকটি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভারত আর্থমুভার্স লিমিটেডকে (বিইএমএল)। এই ট্রেনের স্লিপারের এক একটি রেকে মোট 16টি কামরা থাকবে। এর মধ্যে 11টি এসি থ্রি-টিয়ার, 4টি এসি টু-টিয়ার এবং একটি এসি ফার্স্ট কামরা। এই ধরনের ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা সর্বোচ্চ 823 হতে পারে। যা জানা যাচ্ছে, তাতে এই ট্রেনের কুশন-ব্যবস্থা রাজধানীর চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। এখানে স্প্রিংয়ের ব্যবহার এমন ভাবে করা হবে যাতে যাত্রীদের নামমাত্র ঝাঁকুনি লাগে। এছাড়াও রেকের কমন এরিয়ায় সেন্সর নিয়ন্ত্রিত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। নির্দিষ্ট সময় কোনও যাত্রী যাতায়াত না করলে ওই আলো নিভে যাবে। কোনও যাত্রী এলে আবার নিজে থেকেই আলো জ্বলে উঠবে। অন্ধকারে যাত্রীদের সুবিধার জন্য কামরার মেঝেয় আলোর স্ট্রাইপের ব্যবস্থাও থাকবে।

আর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ তো ট্রেনের শৌচাগার। বন্দে ভারত ট্রেনের এসি ফার্স্ট ক্লাসের যাত্রীদের জন্য থাকছে নির্দিষ্ট শৌচাগার, এবং তাতে থাকছে গরম জলের ব্যবস্থা। একই সঙ্গে মিলবে বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা বেসিনও। যেখান থেকে কোনও ভাবেই জল ছিটকে লাগবে না যাত্রীদের গায়ে। স্বাভাবিক ভাবেই, বন্দে ভারতের এই বিশেষ পরিষেবাটি নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই যাত্রীদের মধ্যে।

আরও পড়ুন: মাত্র ১ ঘণ্টায় শহর থেকে শহরে! বন্দে ভারতের পর খেল দেখাবে ‘নমো ভারত’

তবে এই বিলাসবহুল বন্দে ভারত ট্রেন কি কার্যত বাজার নষ্ট করবে দেশের অন্যান্য দূরপাল্লার ট্রেন। বন্দে ভারতকে 'পাঁচতারা' ট্রেন করে তুলতে গিয়ে মার খাবে না তো অন্যান্য ট্রেনের যাত্রীপরিষেবা। নিন্দুকেরা যা-ই বলুক না কেন, বন্দে ভারতের মতো বিশ্বমানের, আধুনিক প্রযুক্তির, দ্রুততম ট্রেন দেশের জন্য গর্বের তো বটেই। তবে একটি ট্রেনের উন্নতিসাধনে নেমে সার্বিক ট্রেনপরিষেবার বিচ্যুতিগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে না তো। একই সঙ্গে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্যও যাতে ট্রেনের সফর আরামদায়ক হয়, সে ব্যাপারে নজর রাখতে পারবে তো রেলমন্ত্রক। সেই প্রশ্নগুলোও কিন্তু কম জরুরি নয়।

More Articles