রাজনীতি ছাড়ছেন দিলীপ ঘোষ? কেন হঠাৎ চরম সিদ্ধান্ত বিজেপি নেতার?

Dilip Ghosh: রাজ্যে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির তরী। এরই মধ্যে বিজেপি ছাড়ার কথা বললেন দলের অন্যতম বরিষ্ঠ সদস্য দিলীপ ঘোষ।

রাজনীতি ছাড়ছেন দিলীপ ঘোষ। এই লোকসভা ভোটে দেশে আসন সংখ্যা কমেছে বিজেপির। রাজ্যে কার্যত ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির তরী। এরই মধ্যে বিজেপি ছাড়ার কথা বললেন দলের অন্যতম বরিষ্ঠ সদস্য দিলীপ ঘোষ।

আশঙ্কা অবশ্য ছিলই। এই লোকসভা ভোটে মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র দিলীপ ঘোষকে মেদিনীপুরের বদলে দুর্গাপুর-বর্ধমানের মতো নতুন কেন্দ্রে দাঁড় করায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তা নিয়ে মনে মনে ক্ষুব্ধ ছিলেন দিলীপ। তবু সঙ্ঘের অনুশাসন মেনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকেই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। সারা বছর ধরে মেদিনীপুরের মাটিতে হোমওয়ার্ক করেছেন দিলীপ। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে বলাই বাহুল্য তার জন্য সময় পাননি দিলীপ। তার পর যা হওয়ার তাই হয়েছে। দিলীপ তো দুর্গাপুর-বর্ধমান কেন্দ্রে হেরেইছেন, একই সঙ্গে বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে মেদিনীপুরের আসনটিও। ভোট মেটার পরেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত নিয়ে খানিকটা হলেও ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন দিলীপ। এর নেপথ্যে রয়েছে কাঠিবাজি, বলেও নাম না করে তোপ দাগেন তিনি।

আরও পড়ুন: তিক্ততা ভুলে নতুন শুরু, জেলায় জেলায় ঘুরে ঘর গোছাচ্ছেন দিলীপ ঘোষ

এর মধ্যেই তিনি রাজ্যনেতৃত্বকে না জানিয়েই চলে গিয়েছিলেন বিভিন্ন জেলাসফরে। সেখানকার বিজেপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকও সারেন। তা নিয়ে দলের অন্দরে কথাবার্তাও শুরু হয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন, ভোট শেষ হতেই জমিগোছানো শুরু করেছেন দিলীপ ঘোষ। অনেকে এ-ও ভেবেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর তরফে কোনও বার্তাও পেয়ে থাকতে পারেন তিনি। তবে তার মাস ঘুরতে না ঘুরতেই বিস্ফোরক দিলীপ। জানিয়ে দিলেন, দল নির্দিষ্ট কাজ না দিলে দলকে 'টা টা- বাই বাই' বলে বিদায় জানাবেন তিনি। প্রাক্তন হয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া বেশি দিন সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে। পরিস্থিতি না পাল্টালে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন বলেও জানিয়ে দেন দিলীপ ঘোষ।

এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই, তাঁর হাত ধরেই বাংলায় বিজেপির উত্থান। তিনি বিজেপির রাজ্যসভাপতি থাকা কালীন উল্কাগতিতে রাজ্যে বেড়েছিল বিজেপির ভোট। সেখান থেকে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হন দিলীপ ঘোষ। তার পরে হয়েছেন সাংসদ। একে একে তার হাত থেকে খোয়া গিয়েছে সব পদ। এবারের লোকসভা ভোটে হেরে হাতছাড়া হয়েছে সাংসদপদও। সেই নিয়ে দলের উপর অনেকদিন ধরেই ক্ষুব্ধ দিলীপ। সঙ্ঘসেবক থেকে বিজেপি নেতা, এই সফরের মধ্যে দলের জন্য অনেক কিছুই করেছেন তিনি। কিন্তু তাঁকেই যেন বারবার ব্রাত্য করেছে দল। রাজনৈতিক সব বড় পরিচয় হারানোর পরে এখন তিনি শুধুই সাধারণ বিজেপি নেতা। দলের তরফে কোনও কর্মসূচী দেওয়া হয় না, এমনকী রাজ্য নেতৃত্বও তাঁর সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখে না বলে অভিযোগ বরিষ্ঠ নেতার। এই পরিস্থিতিতে দিলিপের সাফ বক্তব্য, "এভাবে আমি থাকতে পারব না। দল নির্দিষ্ট কাজ না দিলে এবার রাজনীতিকে টা টা-বাই বাই বলে দেব। যতক্ষণ দলে আছি, ততক্ষণ কাজ করে গেলেও একটা সময়ের পর তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। রাজনীতি ছাড়াও সমাজের অনেক কাজ রয়েছে।"

লোকসভা ভোটের ফলাফল বেরোনোর পর থেকে একবারই দলের নতুন রাজ্য দফতরে গিয়েছিলেন নাকি দিলীপ। এর পর কোর কমিটির বৈঠকের পরে রাজ্য সফরে বেরিয়ে পড়েছিলেন দিলীপ। সে নিয়ে চর্চা চললেও কলকাতা ফেরার পরেও দাপুটে এই বিজেপি নেতার সঙ্গে রাজ্যদলের তরফে কেউ যোগাযোগ করেননি বলে অভিযোগ। কানাঘুষো শোনা যায়, শুভেন্দু অধিকারীর উত্তরোত্তর ক্ষমতাবৃদ্ধি নিয়েও খানিকটা ক্ষুব্ধ দিলীপ ঘোষ। এমনকী তাঁর হাত থেকে মেদিনীপুর কেন্দ্র ছিনিয়ে নেওয়ার নেপথ্যেও শুভেন্দুর কলকাঠি রয়েছে বলে মনে করেন দিলীপ অনুগামীরা। যদিও আভাস দিলেও এখনও পর্যন্ত তেমন চরম কোনও সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেননি দিলীপ। সিদ্ধান্ত কবে ঘোষণা করবেন জিজ্ঞেস করা হলে দিলীপ বলেন, ‘আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করব। দলের তরফ থেকে কিছু জানানো হয় কিনা সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। তবে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আজও নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার কথা আছে আমার। তবে অপেক্ষা করারও একটা সীমা থাকে’।

আরও পড়ুন: ‘কাঠিবাজী’ই কি কাঁটা জয়ের মুখে! কীসের আভাস দিতে চাইলেন বেসুরো দিলীপ

সূত্রের খবর, রাজনীতি ছেড়ে অন্য কাজে যাওয়ার কথা ইতিমধ্যেই ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন তিনি। RSS-কেও এই বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যাদের বলা প্রয়োজন, তাঁদের আমি বলে দিয়েছি। এভাবে কাজ করতে পারব না। আমায় অন্য সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হলে সেখানে আমি যেতে পারি। সেটা যদি না হয় তাহলে আমি নিজেই ঠিক করে নেব কোন ধরণের কাজ করা যায়। আমি বসে থাকতে পারব না’। সত্যিই যদি বিজেপি ছাড়েন, তাহলে কী হতে চলেছে দিলীপবাবুর পরবর্তী পদক্ষেপ? নতুন কোনও দলের শুরু করতে চলেছেন নাকি অন্য কিছু? উঠে গিয়েছে একগুচ্ছ প্রশ্ন।

More Articles