ভাঙল অনিল বসুর ‘অজেয়’ রেকর্ড! সব বাধা ঠেলে ডায়মন্ডহারবারে হ্যাটট্রিকের পথে অভিষেক

Lok Sabha Election 2024: প্রতিবারের মতো এই লোকসভা ভোটেও ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন অভিষেক। এই হীরক বন্দর এতদিনে কার্যত অভিষেক ব্যানার্জির গড়ে পরিণত হয়েছে। আর সেই গড়ে তাঁকে হারানো যে মোটেও সোজা কথা ন...

বছর শুরু হতে না হতেই লোকসভা ভোটের বাদ্যি বেজে গিয়েছিল। সাত দফা ভোট শেষে মঙ্গলবার সেই গণতন্ত্রের উৎসবের চূড়ান্ত দিন। ভোটের ফলাফল। ইতিমধ্যেই বাংলায় লোকসভা ভোটের ফল মোটামুটি স্পষ্ট। প্রায় সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষাকে পিছনে ফেলে এ রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উঠে আসছে তৃণমূল। আর সেই জয়ের সবচেয়ে ভারী পতাকাটি বোধহয় নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়।

প্রতিবারের মতো এই লোকসভা ভোটেও ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন অভিষেক। এই হীরক বন্দর এতদিনে কার্যত অভিষেক ব্যানার্জির গড়ে পরিণত হয়েছে। আর সেই গড়ে তাঁকে হারানো যে মোটেও সোজা কথা নয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে লোকসভা ভোটের ফলাফল। সত্যি কথা বলতে, এতদিনের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন অভিষেক। সেখানে হ্যাটট্রিক করা থেকে অল্পই দূরে রয়েছেন তৃণমূল সেনাপতি।

এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬ লক্ষ ৯৩ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে তৃণমূল। সংখ্যালঘু ভোটের অঙ্ক ভালোমতোই রয়েছে ডায়মন্ডহারবারে। তবে যেখানে অভিষেক দাঁড়িয়ে পড়েন, ভিড় যে এখন সেখান থেকেই শুরু হয়, তা বললে বোধহয় খুব ভুল বলা হয় না। এই কেন্দ্রটিতে নওশাদ সিদ্দিকিকে প্রার্থী করবে বলে মনস্থির করেছিল আইএসএফ। অথচ শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলায় তারা। এদিকে বাম-কংগ্রেস জোটও আস্থা রেখেছিল আইএসএফে। শেষ মুহূর্তে জোটে বেঁকে বসে পেশায় আইনজীবী মজনু লস্করকে ডায়মন্ডহারবার থেকে প্রার্থী করে ISF। বিপদ বুঝে বামেরাও নিজেদের মতো প্রার্থী ঘোষণা করে দেয় এই কেন্দ্রে। বামেদের তরুণ নেতা প্রতীক-উর রহমানে আস্থা রেখেছিল সিপিএম। দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে প্রতীক-উরের। বহু সময় পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। শেষ মুহূর্তে আরএসএস ঘনিষ্ঠ নেতা অভিজিৎ দাসকে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী দেয় গেরুয়া শিবির।

আরও পড়ুন: কোন কোন আসনে বিজেপিকে দুরমুশ করছে তৃণমূল?

প্রার্থীর ওজনই মোটামুটি বুঝিয়ে দিয়েছিল ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে আগেই হেরে বসে রয়েছে বিজেপি। লড়াই ছিল তরুণ প্রতীক-উরের সঙ্গে। কিন্তু অভিষেকের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীকে টেক্কা দেওয়ার মতো জনসংযোগ বা ওজন আদৌ কি ছিল তাঁর? ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক ঝড়ের মুখে কার্যত দাঁড়াতেই পারেনি অন্য়ান্যরা। বাংলা যে এখনও সব কিছুর পরে তৃণমূলকেই চায়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলার একাধিক কেন্দ্রই।

অভিষেকের এই রেকর্ড ভোট পাওয়া কার্যত মনে করিয়ে দিয়েছে সিপিএমের বর্ষিয়ান সাংসদ অনিল বসুর রাজনৈতিক জীবনকে। ১৯৮৪ সাল নাগাদ প্রথম আরামবাগ কেন্দ্র থেকে জিতে লোকসভায় পা রাখেন প্রয়াত এই বাম নেতা। এরপর টানা ৬ বার ওই লোকসভা কেন্দ্র থেকে তাঁকে প্রার্থী করেছিল কমিউনিস্ট পার্টি। এবং প্রতিবারই সেই আসনে বিপুল জয় নিয়ে ঘরে ফিরেছেন অনিলবাবু। যত দিন তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন, ততবারই জিতেছেন। ২০০৪ সালে তো রেকর্ড সংখ্যক ভোটে জিতেছিলেন। ওই বছর আরামবাগের সিপিএম প্রার্থী অনিল বসুর সঙ্গে নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের ব্যবধান ছিল ৫ লাখ ৯২ হাজার ৫০২। যে রেকর্ড ইতিমধ্যেই ভেঙে ফেলেছেন ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অভিষের বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৪ লোকসভা ভোটে ভদোদরা কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন নরেন্দ্র মোদি। যদিও অনিলবাবুর রেকর্ড ভাঙতে পারেননি তিনি। যা করে দেখিয়েছেন অভিষেক।

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে জিতলে তৃতীয় বার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হবেন অভিষেক। তিনি যে হীরক বন্দরের আক্ষরিক অর্থেই যুবরাজ, তা প্রমাণ করে দিয়েছে মানুষের রায়। এই কেন্দ্রে জয় নিয়ে গোড়া থেকেই আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে অভিষেককে। বিজেপি অভিজিৎ দাস ববিকে প্রার্থী করার পরই অভিষেককে বলতে শোনা গিয়েছিল, “ভোট মানুষ দেবেন। ইডি সিবিআই তো ভোট দেবে না। আমি তো বলেছিলাম এত রাগ যখন আমার বিরুদ্ধে, তাহলে ইডি সিবিআইয়ের ডিরেক্টরকে ডায়মন্ড হারবার থেকে দাঁড় করান।”

আরও পড়ুন:অপ্রতিরোধ্য মহুয়া! কৃষ্ণনগরে যে ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাম ও বিজেপির কৌশল

প্রার্থী দিতে দেরি হওয়া নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষও করেন অভিষেক। গর্বের সঙ্গে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “ডায়মন্ড হারবারের মানুষ এখানকার দায়িত্ব নিন। বাকি ৪১টার দায়িত্ব আমার।” তাঁকে নিরাশ করেনি ডায়মন্ড হারবারবাসী। কার্যত হাত উপুর করেই ভোট ঢেলে দিয়েছেন তাঁরা তৃণমূল সেনাপতিকে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৩১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। বিজেপি এখনও দশে। এই ব্যবধান টপকানো খুব সহজ হবে গেরুয়াশিবিরের পক্ষে, তেমনটা তো মনে হচ্ছে না।

More Articles