পুজোয় বাংলা থেকে এক বাসে নেপাল! পর্যটকদের সুবর্ণসুযোগ, রইল সব তথ্য
একই সঙ্গে এই দিন পশ্চিমবঙ্গর সঙ্গে নেপালের সরাসরি বাস পরিষেবার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালে ভারত ছাড়াও বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ প্রত...
দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ মেটাতে চুক্তি করল পশ্চিমবঙ্গ-সিকিম, এর ফলে লাভবান হতে চলেছে পর্যটকরা। ভারত-নেপাল সরাসরি বাস পরিষেবার সূচনা হতে চলেছে।
পর্যটকদের জন্য নিশ্চিতভাবেই এটি সুখবর। এবার থেকে সিকিম ঘুরতে গেলে ঝামেলা-ঝক্কি কমবে অনেকটাই। শিলিগুড়ি থেকেই পশ্চিমবঙ্গের গাড়িতে চড়ে পর্যটকরা সরাসরি সিকিমের হোটেলে নামতে পারবেন। আগে এই সুবিধে ছিল না। পাশাপাশি একইভাবে সিকিম থেকে আগত পর্যটকরাও সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের হোটেলে নামতে পারবেন। তবে পর্যটন কেন্দ্রে যেতে চাইলে স্থানীয় রাজ্যের গাড়ি ভাড়া নিতে হবে। মঙ্গলবার এ-বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হলো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ও সিকিম রাজ্য সরকারের মধ্যে। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সিকিমের পরিবহণমন্ত্রী সঞ্জিত খারেল। ফিরহাদ হাকিম বলেন, "এই চুক্তিতে দুই রাজ্যের পর্যটনে আরও জোয়ার আসবে।" আবার সিকিমের পরিবহন মন্ত্রী বলেন, "এটা ঐতিহাসিক দিন দুই রাজ্যের জন্য। এই চুক্তি দুই রাজ্যের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে।"
দুই রাজ্যের মধ্যে গাড়ি চলাচল নিয়ে দীর্ঘদিন একটা বড়সড় বিবাদ ছিল। সিকিম কোনওভাবেই এতদিন পশ্চিমবঙ্গের পর্যটকবাহী বাণিজ্যিক গাড়ি তাদের রাজ্যে ঢুকতে দিত না। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সিকিমের পর্যটকবাহী বাণিজ্যিক গাড়িকেও সীমান্তে আটকে দিত পশ্চিমবঙ্গ। দুই রাজ্যের বিবাদে এতে হেনস্থার মুখে পড়তে হতো পর্যটকদের। তাদের সীমান্তে নেমে আবার সংশ্লিষ্ট রাজ্যের গাড়ি নিয়ে হোটেল পৌঁছতে হত। অবশেষে দুই রাজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল যে, এখন থেকে কোনও রাজ্য গাড়ি পাকড়াও করবে না। পর্যটকরা গাড়ি নিয়ে হোটেল পর্যন্ত যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুতে শ্যামলীর জয়যাত্রা, যেভাবে জুড়ছে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা
পাশাপাশি পর্যটকদের সুবিধার জন্য এদিন বিভিন্ন রুটে গাড়ির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। শিলিগুড়ি-গ্যাংটক রুটে আগে সরকারি বাস ছিল ২৫টা, তা বাড়িয়ে ৩০টি করা হলো। আবার গ্যাংটক থেকে শিলিগুড়ি ৪৫টি বাস চলত, তা বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়েছে। এছাড়া শিলিগুড়ি-নামচি রুটে আগে ৩টি বাস ছিল, তা বাড়িয়ে ৪টা করা হলো। আবার গ্যাংটক থেকেও ৩টি বাস ছিল, তা বাড়িয়ে ৫টি করা হলো। এর বাইরে শিলিগুড়ি- নামচি একটি নতুন রুট চালু হলো। ওই রুটে যথাক্রমে শিলিগুড়ি থেকে যাবে ২টো বাস ও নামচি থেকে আসবে ৩টে বাস। দীর্ঘদিনের দাবি মেনে কোচবিহারের সিতাই থেকে গ্যাংটক পর্যন্ত বাস চালু হলো। এই রুটে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার চালাবে ২টো বাস ও সিকিম চালাবে ১টি বাস। এমনকী, ট্যাক্সির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। আগে রেজিস্টার ট্যাক্সি ছিল ২,৫০০; এখন তা করা হলো ৩,০০০। এই প্রসঙ্গে ফিরহাদ হাকিম বলেন, "দুই রাজ্য গাড়ি ঢোকার জন্য কোনও কর নেবে না। আর এই চুক্তিতে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে।" অন্যদিকে সিকিমের পরিবহন মন্ত্রী সঞ্জিত খারেল বলেন, "বহুদিনের সমস্যা মিটে যাওয়ায় সুবিধা হলো। এই উদ্যোগ নেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ।"
একই সঙ্গে এই দিন পশ্চিমবঙ্গর সঙ্গে নেপালের সরাসরি বাস পরিষেবার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালে ভারত ছাড়াও বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। বিশেষত পর্যটন ও ব্যবসার ক্ষেত্রে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এই বাসটির প্ৰত্যাশা করছিল দুই দেশের মানুষ। অবশেষে ৬ জুলাই থেকে যাত্রা শুরু হলো এই বাসের। আজ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ফিতে কেটে বাসের সূচনা করেন রাজের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, দার্জিলিং জেলার জেলাশাসক এস পুনাম্বালাম, মহকুমা শাসক শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাও পাটিল, পুলিশ কমিশনার গৌরব শর্মা, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়-সহ অন্যান্যরা। জানা গিয়েছে, বাসটি রয়েছে এনবিএসটিসি-র। তবে ওই বাসটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থাকে। তারা যৌথভাবে বাসটি পরিচালনা করবে। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসে একটি কাউন্টার দেওয়া হয়েছে ওই সংস্থাকে। যেখান থেকে যাত্রীরা টিকিট বুকিং করতে পারবে। টিকিটের দাম রাখা হয়েছে ১,৫০০ টাকা। সোম, বুধ ও শুক্র তিনদিন পরিষেবা দেবে এই বাস। মোট সিট রয়েছে ৪০টি। এই তিনদিনই দুপুর ৩টে থেকে বাস ছাড়বে। আজ উদ্বোধন থাকায় দুপুর ১টা থেকে বাস শুরু হয়। ফিরহাদ হাকিম বলেন, এই বাস পরিষেবা শুরু হওয়ায় ব্যবসা-সহ পর্যটনক্ষেত্রেও উন্নয়ন হবে। তিনি আরও বলেন, পরবর্তীকালে যাত্রী সংখ্যা বাড়লে শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্তও বাস পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।