মহাকাশে যদি স্পেসস্যুট না পরেন, কী ঘটবে আপনার দেহের সঙ্গে? চমকে উঠবেন এই উত্তরে

Death in Space : বায়ুর চাপ না থাকায় তরলগুলি অনেক কম তাপমাত্রায় বাষ্পীভূত হয়।

মহাকাশে গেলে বিশেষ একটি পোশাক পরতেই হয় মহাকাশচারীদের। সেই বিশেষ পোশাক অর্থাৎ স্পেসস্যুট মহাকাশের পালটে যাওয়া চাপে, তাপে, একজন মহাকাশচারীর দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু মহাকাশে যদি কোনওভাবে এই স্পেসস্যুট ছাড়াই মানুষ যান, কী হবে? গ্রহের চারপাশে কক্ষপথে এখনও অবধি ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ গিয়েছেন। মাত্র তিনজন মারা যান। মহাকাশচারী জর্জি ডোব্রোভলস্কি, ভ্লাদিস্লাভ ভলকভ এবং ভিক্টর পাটসায়েভ - কারমান লাইনের উপরে, মহাকাশে নিজেদের জীবন হারান। মানুষের শরীর যদি মহাকাশের ওই গভীর শূন্যতার সংস্পর্শে আসে তবে কী ঘটবে তা নিয়ে নানা গল্প শোনা যায়। সত্যটা কী তা অনেকেরই অজানা।

মহাকাশে মানুষ যদি স্পেসস্যুট ছাড়া যান, বা স্পেসস্যুট খুলে ফেলেন তাহলে কিন্তু শরীর ফেটে যায় না, চোখ বেরিয়ে আসে না এবং মানুষ প্রবল চিৎকারও করে না। মাথার হেলমেট সরানোর মুহূর্তেই সব মাংসা-চামড়া গলে যাবে না। হ্যাঁ, সূর্য আপনাকে সেঁকে ফেলবে ঠিকই কিন্তু আপনি পুড়েও মারা যাবেন না। মহাকাশে মৃত্যু অনেক কম নাটকীয়, এবং অন্যান্য পরিস্থিতির তুলনায় অনেক কম বেদনাদায়ক। একজন মহাকাশচারী যদি স্পেসস্যুট না পরেন তাহলে প্রথমত দু'টি বিষয়ের অভাব ঘটে। প্রথমত বায়ুমণ্ডলীয় চাপের অভাব এবং দ্বিতীয়ত অক্সিজেনের অভাব। বায়ুমণ্ডলই না থাকায় মূল সমস্যা ঘটে।

বায়ুর চাপ না থাকায় তরলগুলি অনেক কম তাপমাত্রায় বাষ্পীভূত হয়। আমাদের শরীরের ক্ষেত্রে তাই চামড়ার উপরে থাকা সমস্ত কিছু - ত্বক, মুখ, চোখ খুব দ্রুত বুদবুদের মতো হয়ে উবে যাবে। চাপের অভাবে ইবুলিজম ঘটবে। ইবুলিজম হচ্ছে পরিবেষ্টিত চাপ হ্রাসের কারণে শারীরিক তরলে বুদবুদের গঠন। বেশিরভাগই চামড়ার নিচের বুদবুদ হবে, তবে তারা রক্তের মধ্যেও ঘটতে পারে, যার ফলে এম্বোলিজম হতে পারে।

আরও পড়ুন- চাঁদে বা মহাকাশে কীভাবে অন্তর্বাস কাচেন মহাকাশচারীরা? অবাক করবে যে তথ্য

তবে ধরুন আপনার দেহের যবতীয় তরল খুব দ্রুতই বুদবুদে পরিণত হতে থাকল। আপনার সারা শরীরে খুব দ্রুত ইবুলিজম সৃষ্টি হলো, তাও কিন্তু আপনি ফেটে যাবেন না। আমাদের ত্বকটি অনেক দূর অবধি প্রসারিত হতে পারে। তাই আপনি ফেটে যাবেন না, বরং আপনার স্বাভাবিক আকারের দ্বিগুণ ফুলে যেতে পারেন। এই অবস্থায় সাধারণত শ্বাস আটকে না রাখাই উচিত। আকস্মিক ডিকম্প্রেশনের কারণে ফুসফুসের বাতাস প্রসারিত হবে এবং সেগুলো ফেটে যাবে।

এই সময়ই অক্সিজেনের অভাব শুরু হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার বাতাস না থাকলে, আপনি প্রায় ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই জ্ঞান হারাবেন। এটাই একমাত্র ভালো খবর। জ্ঞান হারালেও আপনি হয়তো আরও এক মিনিট বেঁচে থাকবেন।

সেই সময়ে ধরা যাক কোনওভাবে আপনাকে উদ্ধার করা গেল, উপরের ঘটনাগুলি ছাড়াও আরেকটি বিপদ ঘটবে সূর্য থেকে আসা বিপজ্জনক বিকিরণের কারণে। অতিবেগুনি রশ্মির ফলে দেহ অদ্ভুতভাবে রোদে পোড়ার মতো হয়ে যাবে, এবং এক্স-রে-র মতো আরও শক্তিশালী রশ্মি আপনার ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে আপনার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।

More Articles