বৃষ্টিতে, মৃত্যুতে ভেসে যাচ্ছে হিমাচল! ভারতের পাহাড় কি ধ্বংসের মুখে?
Himachal Pradesh Flood: ভারতের কিছু অঞ্চলে, যেখানে চরম বৃষ্টিপাত বেড়েছে সেগুলি এমনই জায়গা যেখানে 'অরোগ্রাফিক লিফটিং’-এর কারণেই বৃষ্টিপাত হয়৷
কখনও ভূমি ধসে যাওয়া, কখনও বীভৎস বৃষ্টি এবং বন্যা। ভারতের উত্তরের পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে এই দুই অবস্থাই এখন সবচেয়ে আশঙ্কার। কিছুকাল আগেই জোশীমঠে একের পর এক বাড়িতে ফাটল দেখিয়ে দিয়েছিল প্রাকৃতিকভাবে দুর্বল জমির উপর মানুষের লাগামছাড়া উন্নয়নের করুণ পরিণতি। এবার গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হিমাচলে প্রায় ১২০ জনের মৃত্যু বলছে, সঙ্কটকে এড়িয়ে বাঁচা অসম্ভব! বিশেষজ্ঞরা গত দুই দিনের উত্তর ভারতের নানা অংশে বিধ্বংসী বন্যার নেপথ্যে আবহাওয়ার দু'টি মারাত্মক অবস্থার সংযোগকেই দায়ী করছেন। আর সেই সংযোগের পিছনে হাত আখেরে মানুষেরই! আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মৌসুমী বায়ুর দুটি অবস্থা এবং একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝার মিথস্ক্রিয়াতেই এই দুর্যোগ। ২০১৩ সালে যখন মারাত্মক বন্যা ঘটে উত্তরাখণ্ডে, সেবারও এমন অবস্থাই ঘটেছিল। এই ধরনের মিথস্ক্রিয়া ঘটছে কেন? উষ্ণায়নের বিশ্বে চরম বৃষ্টি ও বন্যা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে চলেছে। উষ্ণায়নের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা মানুষেরই।
উত্তর ভারতে, বিশেষ করে হিমাচল প্রদেশের মানালিতে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীগুলি। হিমাচল প্রদেশের কুলুতে হড়পা বানের ফলে বিয়াস নদীর তীর ভেসে যাচ্ছে। অন্যদিকে, হরিয়ানার দু'টি জায়গা থেকে যমুনায় ১,০০,০০০ কিউসেক জল ছাড়ার পরে দিল্লি সরকারও বন্যা সতর্কতা জারি করেছে। সারা উত্তরভারত জুড়েই বন্যা পরিস্থিতি, রাস্তা বন্ধ, মানুষের দুর্ভোগ! কেন বারবার এমন চরম অবস্থা?
আরও পড়ুন- নিরাপদ নয় দার্জিলিংও! কীভাবে জোশীমঠের মতোই তলিয়ে যাওয়ার পথে পাহাড়ের রানি?
গত কয়েক দিন ধরে উত্তর ভারতে দু'টি আবহাওয়া ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রের ব্যাখ্যা, রাজস্থান থেকে উত্তর আরব সাগর পর্যন্ত পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সঙ্গে যুক্ত একটি খাদের মতো ছিল। একই সময়ে, শক্তিশালী মৌসুমী বায়ুর কারণে বঙ্গোপসাগর থেকে বাতাসও উত্তরে গিয়ে পৌঁছয়। এই দুইয়ের সঙ্গমটিই জম্মু-কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশের চারপাশে কেন্দ্রীভূত হয়। এই অঞ্চলগুলি আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর দু'টি থেকেই আর্দ্রতা পেয়েছে, যার ফলে প্রচণ্ড ভারী বর্ষণ হয়েছে। তবে এমন দুই চরম অবস্থার মধ্যে এই ধরনের মিথস্ক্রিয়া কিন্তু অস্বাভাবিক নয়, বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম ভারতের পাহাড়ে।
২০১৩ সালের জুনের মাঝামাঝি সময় একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বঙ্গোপসাগর থেকে আসা একটি নিম্নচাপ থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয়। সেবার রেকর্ড সময়ে (১৬ জুনের মধ্যে) পুরো দেশে বর্ষা আসে এবং কেদারনাথে মেঘ ফেটে উত্তরাখণ্ডে প্রলয় ঘটে!। পাহাড়ে এমনটা হয়। সারা বিশ্বই গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে উষ্ণ, সেখানে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বাড়বেই। এই বছর বর্ষা শুরু হওয়ার এক মাসেরও কম সময়ে হিমাচল প্রদেশে এখনও পর্যন্ত ৪১টিরও বেশি ভূমিধস, ২৯টি হড়পা বান এবং একটি মেঘ ফাটার ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গে অবিরাম বর্ষণ। বৃষ্টির কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়াচ্ছে।
পরিবর্তিত জলবায়ুতে দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ি অঞ্চল এবং আশেপাশের এলাকা- তা সে হিমালয়ের পাদদেশেই হোক বা পশ্চিমঘাট ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভূমিধস লেগেই থাকছে। সারা বিশ্বের উষ্ণায়নের কারণে বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা রয়েছে এবং পাহাড়গুলি এই আর্দ্রতার প্রবাহকে বন্ধ করে দেয় এবং তাকে উঁচুতে তোলে, যা ভারী বৃষ্টিপাত হিসাবে নেমে আসে। ভারতের কিছু অঞ্চলে, যেখানে চরম বৃষ্টিপাত বেড়েছে সেগুলি এমনই জায়গা যেখানে 'অরোগ্রাফিক লিফটিং’-এর কারণেই বৃষ্টিপাত হয়৷
মেঘ ফেটে বৃষ্টি হবে কিনা বা অতিবৃষ্টির কারণে কখন হড়পা বান হবে তার পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন। এই ঘটনাগুলির পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাসের জন্য এই ধরনের বিপজ্জনক পরিবেশে রাডারের উপর নির্ভর করতে হয়। রাডারের সাহায্যে এই ধরনের ঘটনার প্রায় 3 ঘণ্টা আগে সর্বোচ্চ লিড টাইম মেলে। তবে তাতে সতর্ক হওয়া গেলেও বিপর্য্য ঠেকানো যায় না। পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন এবং উন্নয়নের নানা কর্মকাণ্ডগুলিকে না ঠেকালে বিপর্যয়ের বীভৎসতাও কমবে না।