সরকারি চাকরি ছেড়ে মডেলিং, কেমন ছিল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের জীবন?
কেরিয়ারের শুরুতে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির সুযোগ মিললেও অভিনয়জগৎকেই বেছে নেন অর্পিতা। পরবর্তীতে মডেলিং এবং অভিনয় দিয়ে যাত্রা শুরু করেন।
সাম্প্রতিক সময় স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক নতুন তথ্য সামনে এসে চলেছে। একদিকে যখন ময়দান চত্বরে চাকরি পাওয়ার দাবিতে ক্রমশ আন্দোলন করে চলেছে চাকরিপ্রার্থীরা, আবার অপরদিকে কলকাতা হাই কোর্ট এই মামলায় তদন্তের দায়ভার সিবিআইকে দেওয়ার পর তদন্তে বেশ কিছু অগ্রগতি দেখা গেছে। পরেশ অধিকারী থেকে শুরু করে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়, মন্ত্রীকন্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে শিক্ষকতার চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে এই সব খবরকে ছাপিয়ে সম্প্রতি শিরোনামে উঠে এসেছে এসএসসি মামলায় তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি প্রসঙ্গ।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বঙ্গরাজনীতিতে নাটক অব্যহত রয়েছে। ২২ জুলাই পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বাড়ি এবং অন্যান্য একাধিক স্থানে তল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অফিসাররা। প্রসঙ্গত, ২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কারও বাড়িতে সিবিআই এলে তাদের বসাবেন এবং মুড়ি খাওয়াবেন।" তবে তার পরের দিনই এভাবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বঙ্গরাজনীতিতে বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে করা হচ্ছে। ২২ জুলাই তল্লাশির মাঝে অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি টাকা, বিপুল পরিমাণ সোনার গয়না, ২০টি মোবাইল ফোন এবং একাধিক বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে ইডি। পরবর্তীতে জানা যায় যে, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তবে এই বিশাল পরিমাণ অর্থ এবং মোবাইল ফোন কী করে এল অর্পিতার কাছে, কিংবা এই টাকার উৎসই বা কী, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এক্ষেত্রে তাদের অনুমান, এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশন-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার যোগসূত্র রয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্পিতার ঘনিষ্ঠতা
মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ক্রমশ জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে বঙ্গরাজনীতিতে। দীর্ঘদিন ধরেই অর্পিতার সঙ্গে পার্থর সুসম্পর্ক রয়েছে বলেই খবর। এমনকী, অতীতে কলকাতার নাকতলা উদয়ন সংঘ দুর্গাপুজোর বিজ্ঞাপনী মডেল হিসেবেও কাজ করেছেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, নাকতলা উদয়ন সংঘ দুর্গাপুজো কমিটির প্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও যে ফ্ল্যাট থেকে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি পার্থ চট্টোপাধ্যায় অর্পিতাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন বলেই সূত্র মারফত খবর মিলতে শুরু করেছে। তবে এক্ষেত্রে আরও তথ্য জানার জন্য ইতিমধ্যে তদন্তে নেমে পড়েছে ইডি।
আরও পড়ুন: তৃণমূল মানেই কি আর্থিক কেলেঙ্কারি? এক দশকে যা দেখলাম আমরা
অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কেরিয়ার-কাহিনি
বর্তমানে বাংলার রাজনীতিতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নামটি বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্ল্যাটের মধ্যে থেকে ২১ কোটি টাকা এবং একাধিক মোবাইল ফোন উদ্ধারের মাধ্যমে স্কুল সার্ভিস কমিশন দুর্নীতি মামলায় তাঁর যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেস দল কিংবা শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর কোনওরকম যোগসূত্র মেলেনি অতীতে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে, কেরিয়ারের শুরুতে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির সুযোগ মিললেও অভিনয়জগৎকেই বেছে নেন অর্পিতা। পরবর্তীতে মডেলিং এবং অভিনয় দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। 'স্পর্শ' নামক একটি সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়জগতে হাতেখড়ি হয় তাঁর, যদিও সেই ছবি মুক্তি পায়নি। ২০১১ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে সংঘমিত্রা চৌধুরীর (বর্তমানে বিজেপির জেলা সভাপতি) 'বিদেহীর খোঁজে রবীন্দ্রনাথ' নামে একটি ছবিতে অভিনয় করেন অর্পিতা।
সুপারস্টার জিতের 'পার্টনার' এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত 'মামা ভাগ্নে'-তে অভিনয় করেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তবে শুধুমাত্র বাংলা ছবি নয়, পরবর্তীতে উড়িয়া এবং তামিল ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। এছাড়াও ফোটোশুট এবং শরীরচর্চাতেও বিশেষ ঝোঁক ছিল তাঁর। বিভিন্ন সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় শরীরচর্চা-সম্পর্কিত একাধিক পোস্ট করতেও দেখা যায় পার্থ-ঘনিষ্ঠ এই মহিলাকে। তবে কেবলমাত্র অভিনয়ের মাধ্যমে কীভাবে এই পরিমাণ অর্থ এল তাঁর কাছে, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
ইডির জালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়
গতকাল সকালে তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দেয় ইডি অফিসাররা। পরবর্তীতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে কোটি কোটি অর্থ উদ্ধার করার পর জিজ্ঞাসাপর্ব আরও দীর্ঘায়িত হয় এবং দীর্ঘ ২৬ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে গ্রেফতার করা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এক্ষেত্রে প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জোকা ইএসআই হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে শারীরিক পরীক্ষা শেষে আদালতে পৌঁছে যায় ইডির গাড়ি। বর্তমানে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পার্থর ঘনিষ্ঠতা এবং এসএসসি-সংক্রান্ত মামলায় আরও নতুন কি তথ্য উঠে আসে ইডির হাতে, এবং তৃণমূল নেতার ভবিষ্যৎ কী হয়, তা দেখার।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মোট সম্পত্তি
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মোট সম্পত্তির পরিমাণ বেশ নজরকাড়া। উল্লেখ্য, বিধানসভা ভোটের সময় নির্বাচন কমিশনকে একটি হলফনামা জমা দিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, যেখানে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ উঠে আসে বাংলার সামনে। সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ১৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৮৬৩ টাকা। অপরদিকে, অস্থাবর সম্পত্তি ৯১ লক্ষ টাকার আশেপাশে। তবে আরেকটু পিছনে ফিরে গেলে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যে হলফনামা পেশ করা হয়, সেখানে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল বেশ অনেকটা বেশি! টাকার অঙ্কে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ ৫৯ হাজার। এর থেকে বোঝা যায় যে, গত পাঁচ বছরে সম্পত্তির পরিমাণ খানিকটা কমেছে পার্থর। যদিও ২০১১ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পত্তি ছিল এক কোটির অনেক কম (৬৯ লক্ষ)। তবে বর্তমানে এই সম্পত্তির পাশাপাশি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বেআইনি আরও সম্পত্তি রয়েছে বলে অনুমান ইডি-র। তবে পরবর্তীতে আদালতে এই বিষয়ে কোন কোন নথি এবং প্রমাণ পেশ করে ইডি, তা দেখার।