তলোয়ার উঁচিয়ে থানা ঘেরাও! পঞ্জাব কি তবে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে?
Lovepreet Singh Toofan: আধঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে পুলিশের ওপর তলোয়ার নিয়ে চড়াও হয় খালিস্তানের সমর্থকরা।
তীব্র সঙ্কটে পঞ্জাব। তরোয়াল, বন্দুক এবং লাঠি হাতে এমন রণংদেহী পঞ্জাবের রূপ থমকে দিয়েছে দেশকে। খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিংয়ের সহযোগী তুফানের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ বাতিলের দাবিতে পুলিশের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ, ব্যারিকেড ভাঙা এবং থানায় হামলার ঘটনায় হিংসার নতুন রূপ দেখছে উত্তরপশ্চিমের এই রাজ্য। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয়েছে লাভপ্রীত সিং তুফানকে। পঞ্জাবের আজনালা পুলিশ দাঙ্গা ও অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল এই লাভপ্রীতকে। ঠিক তারপর থেকেই ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’-র সদস্যদের হামলায় এক অন্যই চেহারা নেয় পঞ্জাব। থানায় হামলা, হেনস্থা সব মিলে ভয়াল পরিবেশ পঞ্জাবে। পরিস্থিতি এমনই দিকে বাঁক নেয় যে বৃহস্পতিবার খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং এবং তাঁর সমর্থকরা থানায় ব্যাপক হামলা চালানোর পরে ছেড়ে দেওয়া হয় লাভপ্রীত সিং তুফানকে।
অমৃতপাল পাল সিং এবং তাঁর সমর্থকরা পুলিশের কাছে দাবি করে, যে ঘটনাটির জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে তা হওয়ার সময় তুফান আজনালায় উপস্থিতই ছিলেন না। এই দাবির সপক্ষে প্রমাণও জমা দেন খালিস্তানপন্থী নেতা-কর্মীরা। ‘রাজ করেগা খালসা’ ও ‘অমৃতপাল সিং জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে গিয়ে অমৃতসর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন লাভপ্রীত সিং। “এটা স্পষ্ট যে শিখরা দাস এবং আমাদের অপমানিত হতে হবে। আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আমার কোনও ভূমিকা ছিল না। আমার মুক্তির জন্য আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ,” বলেছেন লাভপ্রীত সিং। তুফান জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর 'ওয়ারিস পঞ্জাব দে'-এর সদস্যরা তাঁকে উচ্ছ্বসিতভাবে স্বাগত জানায়। কিন্তু কে এই লাভপ্রীত সিং? যার গ্রেফতারি ও মুক্তিকে ঘিরে উত্তাল হলো পঞ্জাব?
তুফান আসলে ওয়ারিস পঞ্জাব দে-এর গুরুদাসপুর জেলার প্রধান এবং পেশায় একজন ছোট চাষি। তুফান তিবাদ গ্রামের বাসিন্দা এবং বিবাহিতও। সম্প্রতি তাঁর স্ত্রী সন্তানের জন্মও দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তুফান কৃষক বিক্ষোভের অংশ ছিলেন। তার বেশ কিছুকাল পরে অমৃতপাল সিংয়ের সঙ্গে যোগ দেন তুফান। অমৃতপাল সিংয়ের প্রাক্তন সহযোগী বারিন্দর সিং রূপনগর জেলার বাসিন্দা। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনিই একটি এফআইআর দায়ের করেন যার ভিত্তিতে আজনালা পুলিশ তুফানকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুন- ধূ ধূ মরুভূমিতে শস্য-শ্যামল কৃষিক্ষেত! যেভাবে অসাধ্যসাধন করেছিলেন রাজা গঙ্গা সিং!
লাভপ্রীত সিং তুফান, অমৃতপাল সিং, বিক্রমজিৎ সিং, পাপালপ্রীত সিং, কুলবন্ত সিং রোকে, গুরপ্রীত সিং এবং আরও ২০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি ছাড়াও আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। অভিযোগ, এই অভিযুক্তরা সকলেই আজনালা থেকে বারিন্দর সিংকে অপহরণ করে এবং তারপর তাঁকে মারধর করে। তাঁদের বিরুদ্ধে বারিন্দরের পাগড়ি খুলে ফেলা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগও রয়েছে।
আরও পড়ুন- উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাস দমনের, অপারেশন ব্লু স্টারই ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দেয়?
অমৃতপাল সিং আসলে কে?
অমৃতপাল সিং দীপ সিধুর শুরু করা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ওয়ারিস পঞ্জাব দে-এর প্রধান। গত বছরই দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন অমৃতপাল সিং। সম্প্রতি জার্নাইল সিং ভিন্দ্রাওয়ালের গ্রামে মোগা জেলার একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে ওয়ারিস পঞ্জাব দে-এর প্রধান নির্বাচন করা হয়।
কী ঘটেছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি আজনালা থানায়?
১৬ ফেব্রুয়ারি লাভপ্রীত সিংয়ের গ্রেফতারের পর, অমৃতপাল সিং ২২ তারিখ পুলিশকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে তুফানকে না ছেড়ে দিলে তিনি ২৩ ফেব্রুয়ারি বিশাল সমর্থকদের নিয়ে থানা ঘেরাও করবেন। সেই হুমকি মতোই অমৃতপাল সিংয়ের সমর্থকরা সকাল থেকে আজনালা স্টেশনে জড়ো হতে শুরু করেন।
প্রথমে সংখ্যা কম হওয়ায় পুলিশ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর অমৃতপাল সিং রাইয়ার গ্রাম জল্লুপুর খেরা থেকে আজনালায় পৌঁছন। আধঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে পুলিশের ওপর তলোয়ার নিয়ে চড়াও হয় খালিস্তানের সমর্থকরা। পরিস্থিতি সামলাতে বিকেল ৪ টে নাগাদই মুক্তি পান লাভপ্রীত সিং।
পুলিশ আপাতত তুফানকে ছেড়ে দিলেও এফআইআর এখনও বাতিল করা হয়নি। অমৃত পাল সিং এই 'ভুয়ো' এফআইআরকে বাতিল করার দাবি করলেও পঞ্জাব পুলিশ জানিয়েছে তথ্য ও নথি যাচাই করছে পুলিশ।