রাত দুপুরে সাংবাদিককে গ্রেফতার কেন? দেবমাল্য বাগচী আসলে কোন সত্য ফাঁস করেছিলেন?

Debmalya Bagchi Arrest: দেবমাল্য নিজের ফেসবুক পেজে লিখছেন, সেই রাতে সকলেই যে পুলিশ ছিলেন এমন মনে হয় না তাঁর।

রাতে সারা বাড়ি ঘিরে ফেলেছিল পুলিশ। বুধবার রাত্রে, নিজের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো আনন্দবাজার পত্রিকার খড়্গপুরের সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীকে। বেশ কিছুকাল ধরেই স্থানীয় চোলাই মদের কারবার নিয়ে তথ্যতালাশ করছিলেন দেবমাল্য। খবর খুঁড়তে গিয়ে পুলিশেরই অকর্মণ্যতা সামনে আসে। সেই ঘটনার জেরেই সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর খড়্গপুরের এই ঘটনায় নিজেদের অবস্থান সামনে এনে তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে মুহূর্তও অপেক্ষা করেনি বিজেপি। সাংবাদিক দেবমাল্যকে গ্রেফতারের ঘটনায় পুলিশের সমালোচনা করে টুইট করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সংবাদ মাধ্যমের কর্মীর উপর এমন আশ্চর্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে এবং দেবমাল্য বাগচীর মুক্তির দাবিতে বিবৃতিও দিয়েছে প্রেস ক্লাব। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছিল দেবমাল্যর সঙ্গে?

বুধবার রাতে, অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর দেবমাল্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ২৭ অগাস্ট আনন্দবাজার পত্রিকার খড়্গপুর সংস্করণে ওই শহরের সাঁজোয়াল এলাকায় চোলাই মদের রমরমা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কীভাবে পুলিশ প্রশাসনের অকর্মণ্যতার জন্যই এই রমরমা এবং কীভাবে বাড়িতে বসে বসেই চোলাইয়ের ব্যবসা চলছে তা বিশদে তুলে ধরেন দেবমাল্য। খবর প্রকাশের পরেই স্থানীয় মানুষের রোষের মুখে পড়ে পুলিশ। পুলিশ ওই চোলাই ঠেকের কয়েকজন মদ্যপকে ধরে জনরোষ সামাল দিতে চায় ঠিকই কিন্তু মূল অভিযুক্তরা পালায়। এই ঘটনার পর, যিনি এই অভিযোগ করেছিলেন তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে চোলাই মদের কারবারিরা। তাঁকে হুমকিও দেওয়া হয়।

শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনাটি টুইট করে (অধুনা এক্স) জানাচ্ছেন, ২৮ অগাস্ট চোলাইয়ের কারবারির আত্মীয়রা অভিযোগকারিণী ও সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীর নামে মামলা করে। চোলাই কারবারিদের অভিযোগকে মান্যতা দিয়ে পুলিশ নড়ে বসে। তফশিলি জাতি ও জনজাতিদের বিরুদ্ধে অত্যাচার প্রতিরোধ আইনের ৩ (১) (আর) (এস) ধারায় এফআইআর দায়ের হয়। ওই অভিযোগকারিণী বাসন্তী দাস এবং সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দেবমাল্য নিজের ফেসবুক পেজে লিখছেন, সেই রাতে সকলেই যে পুলিশ ছিলেন এমন মনে হয় না তাঁর। রাত্রে তাঁর বাড়ির বাইরে ভিড় বাড়াতেই তিনি ভিডিও করতে থাকলে বাইরে থেকে টর্চ মারা শুরু হয় বাড়ির ভেতরে।

১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয় বাসন্তী দাস ও সাংবাদিককে। পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানাচ্ছেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে বিজেপি এই বিষয়টিকে তৃণমূলের তথা শাসকের অত্যাচার হিসেবেই তুলে ধরছে। বিজেপির বক্তব্য, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করছে তৃণমূল সরকার। মিথ্যে মামলায় সাংবাদিককে ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূস জেলে যাবেন? যে ভয়াবহ অভিযোগে বিদ্ধ তিনি…

শুভেন্দু অধিকারী লিখছেন, অভিযোগকারিণী বাসন্তী দাস এবং এলাকার অন্যান্য মহিলারা ওইখানকার কিশোর-কিশোরীদের বাঁচাতে এই অবৈধ ব্যবসাকে আইনত বাধা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। ওই এলাকার পরিবেশকে এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল যে মহিলারা নিরাপদ বোধ করছিলেন না। পুলিশ, স্থানীয় কাউন্সিলর ও পৌরসভার চেয়ারপার্সনের কাছে সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে খবর হতেই শোরগোল পড়ে। মাতালদের ধরে আসলে পুলিশ মূল ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে চেয়েছে বলেই শুভেন্দুর অভিযোগ।

শুভেন্দু আরও লিখছেন, আনন্দবাজার ও এবিপি সংস্থার বাধ্যতা তাঁর কাছে অজানা নয়। তাঁরা 'নির্লজ্জভাবে নীরব' কারণ সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিজ্ঞাপন রাজস্বের উপর তাদের নির্ভর করে চলতে হয়। ছদ্ম উদারপন্থী এবং বুদ্ধিজীবীরাও খানিক এই কারণেই চুপ।

একটি বিবৃতি দিয়ে সাংবাদিকের মুক্তির দাবি জানিয়েছে প্রেস ক্লাব। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুরে কর্তব্যরত সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীর গ্রেফতারির বিষয়ে পুলিস ও প্রশাসনের ইতিবাচক হস্তক্ষেপের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সাংবাদিকদের এই সংগঠন। বৃহস্পতিবার বিধানসভার অধিবেশনের শেষে মুখ্যমন্ত্রীর কক্ষে কর্তব্যরত বহু সাংবাদিকের উপস্থিতিতে কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর ও সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সাংবাদিক দেবমাল্যর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ পুলিশের কাছে স্থানীয় জনজাতির পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়েছে তা আদালতের বিচারাধীন, এই বিষয়টি উল্লেখ করেই সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহের অধিকার সুরক্ষিত রাখার দিকটি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করা হয়েছে রাজ্য সরকারকে। দেবমাল্য বাগচীর পরিবারও আইন আদালতের উপরেই আস্থা রাখছেন। যে শাসকের পুলিশ সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে, সেই শাসকের উপরেই আস্থা রাখা ছাড়া উপায়ান্তরই বা কী!

 

More Articles