চাইলেও মৃত্যু হয় না কখনও, পৃথিবী হোক বা মহাকাশ, সর্বত্র কার্যত অমর এই আণুবীক্ষণিক জীব
Tardigrades Indestructible : তার ওপর এই নিয়ম খাটে না। মৃত্যু এই প্রাণীটিকে ছুঁতে পারে না; কার্যত অমর এই ছোট্ট জীবটি।
ধরা যাক, আপনার সামনে অমর হওয়ার সুযোগ এল, মানে আপনার কখনও মৃত্যু হবে না, কী করবেন? সেই বিশেষ ‘বর’ নেবেন? সেটা অবশ্য ব্যক্তিবিশেষের চিন্তা। পুরাণে, শাস্ত্রে নানা সময় অমরত্বের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনও মানুষ আজ পর্যন্ত সেই দিকে যেতে পারেনি। মানুষ তো পারেনি, কিন্তু বাকি প্রাণীরা? ‘জন্মিলে মরিতে হবে’, এটাই কি তাহলে জীবজগতের চরম সত্য? এটাই ঠিক হলেও, পৃথিবীতে একটি প্রাণী আছে, যার ওপর এই নিয়ম খাটে না। মৃত্যু এই প্রাণীটিকে ছুঁতে পারে না; কার্যত অমর এই ছোট্ট জীবটি।
সালটা ১৭৭৩। জার্মান জীববিজ্ঞানী জোহান আগস্ট গোয়েৎজে হঠাৎই একটি নতুন প্রাণী আবিষ্কার করেন। এতটাই ছোট এটি যে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এটি দেখা যায় না। তখন তিনি এর নাম দিয়েছিলেন ‘লিটল ওয়াটার বিয়ার’, বা ছোট্ট জলজ ভালুক। ঠিক তিন বছর পর, ১৭৭৬ সালে ইতালির বিজ্ঞানী লাজারো এস্পালানজানি এই প্রাণীটির নামকরণ করেন ‘টারডিগ্রেড’। ‘টারডিগ্রাডা’ গ্রুপের ভেতরেই এই প্রাণীটি পড়ে। এখনও অবধি ১৩০০ টারডিগ্রেড প্রজাতির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে রয়েছে এরা। আট পা-ওয়ালা এই আণুবীক্ষণিক জীবটি দেখতেও অদ্ভুত ধরনের। একটাই সরু মুখ, কিন্তু কোনও চোখ নেই। আট পায়েই সাঁতরে ঘুরে বেড়ায় এরা।
বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, টারডিগ্রেডকে পৃথিবীর সবচেয়ে ‘শক্তিশালী’ প্রাণী বলাই যায়। না, বাঘ, হাতি, সিংহ কিংবা আদিম কালের ডাইনোসর, ম্যামথের মতো বিশালদেহী, হিংস্র নয় এরা। কিন্তু এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, শারীরিক গঠন, কাজ একেবারে অন্যরকম। যা এদের ‘শক্তিশালী’ করে তুলেছে। কীরকম? প্রথমত, টারডিগ্রেডদের মৃত্যু হয় না। এরা কার্যত অমর। এদের শরীরের একটি বিশেষ প্রক্রিয়াই অমর রাখতে সাহায্য করে।
কীরকম? টারডিগ্রেডের বিপাকের হার খুব কম। এদের শরীরের কোষগুলি একপ্রকার বিশেষ প্রোটিন দিয়ে ঘেরা থাকে। খুব কঠিন পরিস্থিতিতে টারডিগ্রেড নিজের দেহের ৯৫ শতাংশ জল বের করে দেয়। এই প্রোটিনগুলি একেবারে শক্ত হয়ে দেহটিকে আটকে রাখে। ঠিক শুঁয়োপোকার গুটির মতো। প্রায় সমস্ত জল বেরিয়ে যাওয়ার পর টারডিগ্রেডের দেহ একদম মৃতের মতো হয়ে যায়। কিন্তু তাদের প্রাণ তখনও অক্ষুণ্ণ থাকে। কোষের বাইরের ওই প্রোটিনের শক্ত আস্তরণ ভেতরটাকে সুরক্ষিত রাখে। এভাবে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে পারে টারডিগ্রেড। তারপর একটু জলের সংস্পর্শে এলেই প্রোটিনের শক্ত আস্তরণ নরম হয়ে যায়। টারডিগ্রেডও বেঁচে ওঠে। এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে বলে ক্রিপটোবায়োসিস।
এটা তো গেল একটা দিক। টারডিগ্রেডের আরও একটা ‘ভয়ংকর’ দিক রয়েছে। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে, মহাকাশের যে কোনও জায়গায় বেঁচে থাকার সামর্থ্য রয়েছে এই প্রাণীটির। অন্তত ২৫-৩০ বছর কিছু না খেয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারে এরা। তাছাড়াও শূন্য থেকে প্রায় ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও বহাল তবিয়তে থাকে টারডিগ্রেড। চরম ঠাণ্ডা বা প্রচণ্ড গরমেও তার কিছু হয় না। তাহলে? অমর আর শক্তিশালীর তকমা নিশ্চয়ই দেওয়া যায় এই আণুবীক্ষণিক প্রাণীটিকে।