কেন এত তাড়াতাড়ি চলে যেতে হল অভিষেককে, রোগের আসল রহস্য জেনে সতর্ক হোন

ফের এক তারার আকস্মিক মৃত্যু। বছরের প্রথম বাংলায় থেকেই যে মৃত্যুমিছিল শুরু হয়েছিল তা ক্রমশ দীর্ঘ হয়ে চলেছে। সে তালিকায় এবার নতুন অন্তর্ভুক্তি বাংলা বিনোদন জগতের অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ভোররাতে নিজের বাড়িতেই তিনি মারা যান। আগের দিনও গিয়েছেন শ্যুট করতে। কিন্তু অসুস্থ বোধ করায় ফিরে আসেন বাড়িতে। বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। 'খড়কুটো' সিরিয়ালের অভিনেত্রী তৃণা সাহা জানিয়েছেন একেবারেই শরীরের যত্ন নিতেন না অভিষেক। তবে কি সে কারণেই ঘনিয়ে এলো মৃত্যু? 

বর্তমান সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গতি যত বেড়েছে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লাইফস্টাইল ডিজিজের পরিমাণও। রোজকার জীবনে স্ট্রেসও বেড়েছে অধিক মাত্রায়। চিকিৎসকদের মতে ,এসবই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।এখন শুধু বয়স্করা নয়, অল্পবয়সীরাও প্রাণ হারাচ্ছেন হৃদরোগে। কিন্তু কোনো উপায় কি নেই? আসুন জেনেনি এই রোগের খুঁটিনাটি- 

হৃদরোগে কী হয় ? 

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হল এমন অবস্থা যখন হৃৎপিণ্ডের ভিতর রক্ত জমাট বেঁধে যায় ,ফলে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলস্বরুপ হৃৎপিণ্ডের কোষে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে থাকে এবং কোষগুলির মৃত্যু হতে শুরু করে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু )- এর পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে বিশ্বে ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষের হৃৎপিণ্ডের অসুখে মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৮৫% মানুষের মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক। হু আরও জানিয়েছে, বিশ্বের ৩৮ % মানুষের অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী হৃদরোগ। 

কী কী কারণে হৃদরোগ হতে পারে? 

হু- এর রিপোর্ট অনুযায়ী, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, স্থূলতা, হাইপারটেনশন, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, ধূমপান এবং অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহল পান করলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়।

অভিষেকের একসময়ের নায়িকা ইন্দ্রানী সেন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন ওজন বাড়লেও তার জন্য ব্যায়াম বা জিম করতেন না অভিনেতা।ভুলেও একই ভুল আপনি করবেন না। আগেই থেকেই সাবধান হোন।

হৃদরোগের লক্ষণগুলি কী? 

 হৃদরোগের লক্ষণগুলি জানা থাকলেও অনেক সময় রোগীকে সঠিক সময়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে লক্ষণগুলি হল বুকের মাঝে যন্ত্রণা অনুভব হয়। এ যন্ত্রণা খুব তাড়াতাড়ি বাঁ কাঁধে, হাতে বা শরীরের বামদিকের অংশে ছড়িয়ে পড়ে।হাত,পা ও মুখ অসাড় হতে শুরু করে এসময়। রোগী ঠিকভাবে কথা বলতে পারেন না, দৃষ্টিশক্তি আবছা হয়ে যায় এবং দাঁড়ানো বা হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। বমি বমি ভাব বা বমিও হয় আক্রান্ত ব্যক্তির।অনেকক্ষেত্রে রোগী প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা অনুভব করেন এবং অজ্ঞানও হয়ে যান। তাই আপনার আশেপাশের কোনও মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁর সাথে কথা বলতে থাকুন এবং একইসাথে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।

যদিও অনেকেই অকস্মাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেঘোরে প্রাণ হারান।তবে কিছুক্ষেত্রে সপ্তাহখানেক আগে থেকেও শরীরে লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়। এক্ষেত্রে ব্যক্তি কোনরকম কাজের সময় বুকে ব্যাথা অনুভব করেন এবং একটু সময় বিশ্রামের পর তা দূরও হয়ে যায়।

চিকিৎসা

কোনো ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মতই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন(সার্জারি বা ননসার্জিক্যাল)। এই পদ্ধতিগুলি ব্যথা উপশম করবে এবং ভবিষ্যতেও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। 

সাধারণ পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে : 

১. স্টেন্ট: স্টেন্ট হল একটি তারের জাল টিউব। চিকিৎসকেরা এনজিওপ্লাস্টির পরে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য এটিকে ধমনীতে প্রবেশ করান।

২. অ্যানজিওপ্লাস্টি: এক্ষেত্রে একটি বেলুন ব্যবহার করে বা তৈরি হওয়া প্লাক অপসারণের মাধ্যমে অবরুদ্ধ ধমনী খুলে দেওয়া হয়। 

৩.হার্ট বাইপাস সার্জারি : বাইপাস সার্জারিতে, চিকিৎসকেরা ব্লকের চারপাশের রক্তকে পুনরায় চলাচলের পথ বা রুট তৈরি করে দেন ।

৪. হার্টের ভালভ সার্জারি: ভালভ মেরামত বা প্রতিস্থাপন সার্জারিতে হৃৎস্পন্দনে সাহায্য করার জন্য ফুটো ভালভ মেরামত বা প্রতিস্থাপন করে দেন।

৫. পেসমেকার: পেসমেকার হল একটি যন্ত্র যা ত্বকের নিচে লাগানো হয়। এটি রোগীর হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৬.হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট: চিকিৎসকেরা হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের সুপারিশ করতে পারেন । তবে এক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের কারণে বেশিরভাগ হার্টের স্থায়ী টিস্যু নষ্ট হলেই ট্রান্সপ্লান্টের পথে হাঁটেন চিকিৎসকেরা। 

এছাড়া চিকিৎসকেরা হৃৎপিণ্ড বা হার্টের অবস্থা বিচার করে ওষুধ দিয়ে থাকেন। 

More Articles