এত দুর্নীতি, হিংসা, অস্থিরতার পরেও, কেন 'বর্ষসেরা দেশ' হলো বাংলাদেশ?
Bangladesh The Country of the Year 2024: এই পুরস্কারটি সবচেয়ে ধনী, সুখী বা সবচেয়ে গুণী দেশ হওয়ার জন্য নয়। গত ১২ মাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির উপর নির্ভর করছে 'কান্ট্রি অফ দ্য ইয়ার' হওয়া।
সেই জুলাই থেকে শুরু করে ডিসেম্বর সারা বিশ্বের সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। বছর শেষের মুখে এসে ভারত আর বাংলাদেশের সম্পর্কের সমীকরণ ভাবাচ্ছে গোটা বিশ্বকেই। সরকারি চাকরিতে কোটার প্রতিবাদ, আন্দোলন, চরম অভ্যুত্থান, হাসিনা সরকারের পতন, মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব এবং ক্রমেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হিংসার অভিযোগ — এই ডামাডোলের মধ্যে একটি বিশেষ শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। প্রতি বছরই ডিসেম্বর মাসে দ্য ইকোনমিস্ট একটি 'কান্ট্রি অফ দ্য ইয়ার' ঘোষণা করে। সাধারণত যে দেশটি গত বছরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখিয়েছে সেই এই বিশেষ শিরোপা অর্জন করে। এই বছর, সিরিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পোল্যান্ডকে ছাপিয়ে বাংলাদেশ হয়েছে 'কান্ট্রি অফ দ্য ইয়ার'।
যে দেশটি বছরের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে অশান্ত, যেখানে স্থায়ী সরকার নেই, যেখানে জনগণের একটা বড় অংশই বিক্ষুব্ধ সেই দেশ কীভাবে 'কান্ট্রি অফ দ্য ইয়ার' হতে পারে? দ্য ইকোনমিস্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, এই পুরস্কারটি সবচেয়ে ধনী, সুখী বা সবচেয়ে গুণী দেশ হওয়ার জন্য নয়। গত ১২ মাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির উপর নির্ভর করছে 'কান্ট্রি অফ দ্য ইয়ার' হওয়া। দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদদাতাদের মধ্যে প্রবল বিতর্ক হওয়ার পরে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ বিজয়ী হয়, সিরিয়া হয় দ্বিতীয়।
আরও পড়ুন- কেন চিন্ময় দাসের আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন অর্জুন সিং, কার্তিক মহারাজরা?
বাংলাদেশ গত এক বছরে কী এমন উন্নতি দেখাল যে 'কান্ট্রি অফ দ্য ইয়ার' হয়ে গেল? দ্য ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনই এই শিরোপা অর্জনের মূল কারণ। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে,
“আমাদের বিজয়ী বাংলাদেশ, এই বছর একজন স্বৈরাচারীকে উৎখাত করেছে। অগাস্টে, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে, যিনি ১৫ বছর ধরে ১৭৫ মিলিয়নের দেশ শাসন করেছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি নিপীড়নমূলক শাসন, নির্বাচনে কারচুপি, বিরোধীদের জেলে পাঠানো এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রতিবাদকারীদের গুলি করার নির্দেশ দেন। তাঁর আমলে বিপুল পরিমাণ টাকা চুরি হয়েছে।
ক্ষমতার হাত বদল হওয়ার পরে বাংলাদেশে প্রতিশোধমমূলক হিংসার ইতিহাস রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বেপরোয়া। ইসলামী চরমপন্থাও হুমকি দিচ্ছে। তবুও এই বদলটি এখনও পর্যন্ত উত্সাহজনক।”
ওই প্রতিবেদনে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা তুলে ধরে বলা হয়েছে, “একটি অস্থায়ী টেকনোক্র্যাটিক সরকার, যার নেতৃত্বে আছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মহম্মদ ইউনূস, ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়িক এবং সুশীল সমাজ— তারা দেশের শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করেছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছে।”
আরও পড়ুন- ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ! যে ভয়াবহ অভিযোগ উঠছে হাসিনা ও পরিবারের বিরুদ্ধে
দ্য ইকোনমিস্টের ওই প্রতিবেদনে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুনর্গঠন এবং ২০২৫ সালে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা সহ বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জগুলিকেও স্বীকার করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, "আদালতের নিরপেক্ষ হওয়া এবং বিরোধীদের সংগঠিত হওয়ার সময় দিতে হবে। এর কোনটাই সহজ কাজ হবে না কিন্তু স্বৈরাচারের পতন ঘটানো এবং আরও উদার সরকারের পক্ষে অগ্রসর হওয়ার জন্য বাংলাদেশ আমাদের কাছে বর্ষসেরা দেশ।”
বাংলাদেশের মতোই শাসকের পতন ঘটেছে সিরিয়াতে। স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা সিরিয়া এই তালিকায় আছে দ্বিতীয় স্থানে। আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য স্বীকৃতি অর্জন করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পোল্যান্ড খারাপ সরকারকে প্রত্যাখ্যান এবং নতুন প্রশাসন গঠনের জন্য প্রশংসিত হয়েছে। ২০২৩ সালে বর্ষসেরা দেশ হয়েছিল গ্রিস। দীর্ঘ আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে একটি মধ্যপন্থী সরকারকে পুনঃনির্বাচিত করার জন্য সেবার এই খেতাব জেতে তারা।
এবারের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছে কলম্বিয়া (এক দশকের গৃহযুদ্ধের অবসানের জন্য), ইউক্রেন (বিনা প্ররোচনায় আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য), এবং মালাউই (গণতন্ত্রীকরণের জন্য)।