বিপ্লব দেবকে কেন সরানো হল! ভোটের আগেই ত্রিপুরায় আত্মসমর্পণ বিজেপির?

রাজনৈতিক মহলের সাফ কথা, ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী বদলে শাসক দলে সংকট বাড়বে৷

ভাবমূর্তি বদলের লক্ষ্যেই নাকি ত্রিপুরায় মুখ বদল করেছে বিজেপি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনে হয়েছে, এখনই মুখ বদল করা না গেলে গড় রক্ষা করা যাবে না৷ প্রশ্ন উঠেছে, দিল্লি বিজেপির এই 'বৈপ্লবিক' সিদ্ধান্তে ত্রিপুরার বিজেপি বাঁচবে তো? দলেরই একাংশ বলছে, এই বদল ঘটিয়ে দিল্লির নেতারা ত্রিপুরায় বিজেপির সাফল্য দেখতে চান? না কি, ত্রিপুরায় বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম বা বাংলা থেকে যাওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের পালে হাওয়া দিতেই শাহ-নাড্ডারা পরিকল্পিতভাবে নিজের নাক কেটে দেখালেন? অথচ, ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহলের অভিমত, ২০২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া জয় নিশ্চিত ছিল, যা এখন প্রশ্নের মুখে পড়ল৷ বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী বদল করার ফলে কি বাড়তি অক্সিজেন পেল বিরোধীরা?

 

সরকারের মেয়াদ শেষ হতে আর বাকি মাত্র মাসদশেক। বিধানসভার ভোট এগিয়ে আসার সম্ভাবনাও প্রবল৷ এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা আদৌ বুদ্ধির পরিচয় দিলেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজের ইচ্ছায় ইস্তফা দেননি বিপ্লব। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপেই তিনি রাজ্যপালকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। এর পরেই ত্রিপুরা বিজেপির তরফে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, হারাকিরির পথ কেন বেছে নিল বিজেপির সর্বোচ্চ মহল? প্রশ্ন উঠেছে, ভোটের মুখে বিরোধীদের হাতে এভাবে প্রচারের হাতিয়ার তুলে দেওয়ার আদৌ কি কোনও প্রয়োজন ছিল? বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রী পদে না রাখার সিদ্ধান্ত তো বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরেও নেওয়া যেত৷ সামগ্রিকভাবে বিজেপির বিশ্বাসযোগ্যতাকেই এভাবে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত ঠিক কোন কেন্দ্রীয় নেতা নিয়েছেন, তা জানতে চাইছে ত্রিপুরার বিজেপি৷ তারা জানতে চাইছে, চরম অরাজনৈতিক এই সিদ্ধান্ত যিনি নিয়েছেন, যিনি ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার দায়িত্ব পেয়েছেন, শীর্ষ স্তরের যে নেতারা এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর লাগিয়েছেন, তারা আদৌ কি বিজেপির ভালো চান?

 

এসব প্রশ্ন উঠলেও তার উত্তর দেওয়ার জন্য কাউকেই নজরে আসছে না৷ তবে এককথায় সব উত্তর সেরে দিতে পারে পদ্ম-বাহিনী৷ বলতে পারে, এসব দলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত, কাউকে কৈফিয়ত দেওয়ার দায় বিজেপির নেই৷ তা নেই ঠিকই, কিন্তু মোদি-শাহ জুটির এ ধরনের স্ট্যান্ড-আপ কমেডি এর আগে দু'বার দেখা গিয়েছে দিল্লির ভোটে, একবার বাংলার ভোটে৷ কোনও রাজ্যের নিজস্ব সেন্টিমেন্টকে রক্তাক্ত করে ভোটে জেতা যে অসম্ভব, দিল্লি ও বাংলায় তা টের পাওয়ার পরেও গেরুয়া-বাহিনীর শীর্ষ স্তর একই পথে হাঁটল ত্রিপুরায়৷

 

আরও পড়ুন: রেগে আগুন অমিত শাহ! বঙ্গ বিজেপির নেতারাই কি বারবার মুখ পোড়াচ্ছেন তাঁর?

 

নিজেদের 'ইচ্ছা' চাপিয়ে দেওয়া হলো ত্রিপুরায়৷ দিল্লি এবং বাংলায় রাজ্য বিজেপিকে পকেটে পুরে কেন্দ্রীয় বিজেপি ওই দু'জায়গাতেই নিজেদের স্টাইলে ভোট করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল৷ দু'জায়গা থেকেই খালি হাতে ফিরেছেন মোদি-শাহ৷ লজ্জাজনক প্রত্যাখ্যানের পরেও কোনও শিক্ষাই যে তাঁরা পাননি, তা বোঝা গেল ফের একই কায়দায় নিজেদের মতামত জোর করে ত্রিপুরার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পর৷ ভোটের মুখে বিপ্লব দেবকে সরানোর চড়া দাবি ত্রিপুরার বিজেপি ইদানী‌ং করেনি, বিরোধী দলগুলিও মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিপ্লবকে সরানোর জোরালো দাবি তোলেনি, তাহলে কেন সরানো হলো তাঁকে? এ প্রশ্নই আজ বড়ভাবে দেখা দিয়েছে ত্রিপুরার রাজনীতিতে৷ বলা হচ্ছে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব সিজারের পত্নী নন, যে সব দোষের ঊর্ধ্বে তাঁরা৷ ২০২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় বিজেপির জয় এক রকম সুনিশ্চিতই ছিল৷ সেই পরিস্থিতিকে ঘোলা করা হয়েছে নিশ্চয়ই বৃহত্তর কোনও লক্ষ্যে৷ হতে পারে, টিম মোদি-শাহ দেশে গেরুয়া রাজ্যের সংখ্যা হ্রাস করতে চাইছেন৷ সেই কারণেই ত্রিপুরায় আনা হয়েছে মানিক 'সরকার'৷ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে মানিকের সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের উপ মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মণ। তবে জিষ্ণুকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেলেন মানিক। গত এপ্রিল মাসেই রাজ্যসভায় গিয়েছেন তিনি৷ শপথ নেন ৩ এপ্রিল। সাংসদ জীবনের দু’মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন তিনি।

 

বিপ্লব দেব ইস্তফা দেওয়ার পর কে হবেন তাঁর উত্তরসূরি, তা ঠিক করতে বিজেপির দুই কেন্দ্রীয় নেতা, বিনোদ তাওড়ে ও ভূপেন্দ্র যাদবের উপস্থিতিতে 'সাজানো' বৈঠকে বসেছিল বিজেপির পরিষদীয় দল। সেখানেই দিল্লি থেকে ঠিক করে আসা মানিক সাহার নাম ত্রিপুরার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। কোনও বিধায়ককেই কোনও কথা বলতে দেওয়া হয়নি৷

 

আমবাসার বিধায়ক পরিমল দেববর্মা প্রশ্ন তোলেন, "কেন একতরফাভাবে কেন্দ্রীয় নেতারা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করবেন? বিধায়কদের সামনে কোনও কথাই বলা হলো না কেন? কেন বিধায়কদের কোনও কথা বলতে দেওয়া হলো না?" এসব যথেষ্ট অপমানজনক কথা হলেও তা গায়ে মাখেননি তাওড়ে এবং যাদব৷ এই ইস্যুতে আলোচনা শুরু করলেই দিল্লি বিজেপিকে বৈঠক ছেড়ে পালাতে হতো৷ এই দুই নেতাকে পাঠানো হয়েছিল 'দলের স্বার্থে' স্রেফ নাম ঘোষণা করে বৈঠক শেষ করতে৷ এরাও 'দলের স্বার্থে' সেই কাজই করেছেন৷

ট্যুইটটি দেখুন: 

<blockquote class="twitter-tweet"><p lang="en" dir="ltr">Goodbye &amp; good riddance to the CM who failed thousands of people in <a href="https://twitter.com/hashtag/Tripura?src=hash&amp;ref_src=twsrc%5Etfw">#Tripura</a>!<br><br>Enough damage done.<br>So much so that even the top bosses at <a href="https://twitter.com/BJP4India?ref_src=twsrc%5Etfw">@BJP4India</a> are fed up of his INCOMPETENCE.<br><br>Folks at BJP seem very rattled by what <a href="https://twitter.com/AITCofficial?ref_src=twsrc%5Etfw">@AITCofficial</a> achieved in the state. CHANGE IS INEVITABLE. <a href="https://t.co/KtXY5WP2ae">https://t.co/KtXY5WP2ae</a></p>&mdash; All India Trinamool Congress (@AITCofficial) <a href="https://twitter.com/AITCofficial/status/1525428210468433920?ref_src=twsrc%5Etfw">May 14, 2022</a></blockquote> <script async src="https://platform.twitter.com/widgets.js" charset="utf-8"></script>

 

মুখ্যমন্ত্রী পদে আসা মানিক সাহা বর্তমানে ত্রিপুরা বিজেপির সভাপতি ও রাজ্যসভার সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই তাঁকে রাজ্য বিধানসভার কোনও কেন্দ্র থেকে জিতে আসতে হবে। বিপ্লব দেবকে সরানোর প্রধান কারণ হিসেবে দিল্লি বিজেপির বক্তব্য, রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল ক্রমবর্ধমান৷ তাই এই বদল জরুরি ছিল৷ মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে এনে রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল কতটা সমাধান করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷ মানিক সাহায় অসন্তুষ্ট মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনেই তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ বেশ কয়েকজন বিধায়ক বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনেই এই ইস্যুতে হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন। প্রথম দিনেই বোঝা গিয়েছে, রাজ্য বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল আগামী দিনে কোন পর্যায়ে যেতে পারে৷ দাঁতের ডাক্তার মানিক সাহা এসবের সমাধান করতে কতখানি দক্ষ এবং যোগ্য, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেই নাকি নাড্ডা-শাহরা মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী চেয়ারে বসিয়েছেন৷ প্রথম ঘণ্টাতেই স্পষ্ট হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে থাকা বিধায়কের সংখ্যাও কম নয়৷ ফলে কোন্দল সমাধানে দিল্লি যতই তাঁর উপর ভরসা করুক, মানিক সাহা জানেন, এই কাজ তাঁর পক্ষে আদৌ সহজ হবে না৷ তাহলে মুখ্যমন্ত্রী বদল করে কোন দলের লাভ হলো?

 

রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, সিপিএম না তৃণমূল কংগ্রেস, ঠিক কাকে খুশি করলেন শাহ এবং নাড্ডা? বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক ১০ মাস আগে আচমকা ত্রিপুরার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের ইস্তফায় লাভবান হলো কোন দল? ভোটের মুখে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তে বিজেপির লাভ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই৷ ভোটে বিজেপি-বিরোধী দলগুলির প্রচারের শক্তপোক্ত হাতিয়ার শাহ-নাড্ডার তরফেই উপহার দেওয়া হলো৷ সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেস এখনই বলা শুরু করেছে, বিজেপির শীর্ষ মহল টানা ৫ বছর দলেরই মুখ্যমন্ত্রীর ওপর ভরসা করতে পারে না, আস্থা রাখতে পারে না, এই দলকে পরবর্তী নির্বাচনে ভোট দেওয়া অর্থহীন৷ বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটপ্রচারের সুর এখনই তৈরি করে দিয়েছে দিল্লির বিজেপি৷ একাধিক বিজেপি বিধায়ক এদিনই বলেছেন, এই পরিবর্তনের তেমন কোনও প্রয়োজনই ছিল না৷ দলের অভ্যন্তরে তেমনভাবে শোরগোলও শোনা যায়নি৷ তাহলে হঠাৎ কেন এই বদল? ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন ১০ মাস পরই৷ রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, বিধানসভা ভোট এগিয়ে আনা হতে পারে৷ তাহলে হয়তো পরবর্তী নির্বাচনের ৬ মাসও বাকি নেই৷ তার আগে এই পরিবর্তন থেকে কোন সুফল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা ঘরে তুলবেন, তা ঈশ্বর জানেন৷

ট্যুইটটি দেখুন:

<blockquote class="twitter-tweet"><p lang="en" dir="ltr">.<a href="https://twitter.com/ramprasadpalBJP?ref_src=twsrc%5Etfw">@ramprasadpalBJP</a>, feeling okay?<br><br>The entire <a href="https://twitter.com/BJP4Tripura?ref_src=twsrc%5Etfw">@BJP4Tripura</a> unit seems to be falling apart!<a href="https://twitter.com/AITCofficial?ref_src=twsrc%5Etfw">@AITCofficial</a> proves its might yet again!<a href="https://twitter.com/hashtag/ShameOnBJP?src=hash&amp;ref_src=twsrc%5Etfw">#ShameOnBJP</a> <a href="https://t.co/MfZy9vIyQC">pic.twitter.com/MfZy9vIyQC</a></p>&mdash; AITC Tripura (@AITC4Tripura) <a href="https://twitter.com/AITC4Tripura/status/1525466678825349120?ref_src=twsrc%5Etfw">May 14, 2022</a></blockquote> <script async src="https://platform.twitter.com/widgets.js" charset="utf-8"></script>

 

ওদিকে বেজায় খুশি সিপিএম৷ খুশি তৃণমূলও৷ তবে তৃণমূলের সেভাবে খুশি হওয়ার সংগত কোনও কারণ নেই৷ মাসকয়েক আগে আগরতলা ও সন্নিহিত এলাকার ভোটে তৃণমূল লড়াই করেছিল, কিন্তু একটি আসনও পায়নি৷ তবুও তারা খুশি৷ তৃণমূলের বক্তব্য, বিজেপির অভ্যন্তরীণ কলহ এতটাই প্রকট যে, মেয়াদ পূর্তির আগেই ইস্তফা দিতে হলো মুখ্যমন্ত্রীকে৷ সিপিএমও খুশি৷ বিপ্লব দেবের আমলে বামফ্রন্ট তেমনভাবে মাথাচাড়া দিতে পারেনি৷ এবার নিশ্চিতভাবেই ত্রিপুরার পরিস্থিতি কিছুটা ঢিলেঢালা হয়ে পড়বে৷ সেই সুযোগই নেবে সিপিএম-সহ বিরোধী শিবির৷ ফলে বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপির পক্ষে সুখকর পরিস্থিতি আগামী দিনে না থাকার সম্ভাবনাই প্রবল৷

ট্যুইটটি দেখুন:

<blockquote class="twitter-tweet"><p lang="en" dir="ltr">Hooliganism at best!<br><br>From Ram Prasad Pal to several other <a href="https://twitter.com/BJP4Tripura?ref_src=twsrc%5Etfw">@BJP4Tripura</a> MLAs, Ministers and leaders - breaking into chaos after <a href="https://twitter.com/BjpBiplab?ref_src=twsrc%5Etfw">@BjpBiplab</a>&#39;s resignation proves once again that the state, under BJP, is headed to its darkest times!<a href="https://twitter.com/hashtag/ShameOnBJP?src=hash&amp;ref_src=twsrc%5Etfw">#ShameOnBJP</a> <a href="https://t.co/VdZ1SW4aRW">pic.twitter.com/VdZ1SW4aRW</a></p>&mdash; AITC Tripura (@AITC4Tripura) <a href="https://twitter.com/AITC4Tripura/status/1525468924006920193?ref_src=twsrc%5Etfw">May 14, 2022</a></blockquote> <script async src="https://platform.twitter.com/widgets.js" charset="utf-8"></script>

রাজ্যপালের কাছে ইস্তফাপত্র পেশ করে দলের একজন নিষ্ঠাবান সৈনিকের সুরেই বিপ্লব দেব বলেছেন, "দলের নির্দেশেই ইস্তফা দিয়েছি৷ অতীতে দলের সভাপতি ছিলাম৷ সিপিএমের হাত থেকে ত্রিপুরাকে ছিনিয়ে এনেছি৷ দল মুখ্যমন্ত্রী করেছে, দায়িত্ব পালন করেছি৷" তিনি আরও বলেন, ‘‘এত দিন প্রধানমন্ত্রীর মার্গ-দর্শনে আমি কাজ করে এসেছি। আমি ত্রিপুরায় ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছি। এবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ইচ্ছাতেই সংগঠনের কাজ করব। এখন যদি দল আমাকে 'পৃষ্ঠাপ্রমুখ'-এর দায়িত্ব দেয়, সেই কাজই পালন করব৷" পাশাপাশি এক ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে পদত্যাগী মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “দল চাইছে ২০২৩-এর নির্বাচনের আগে সংগঠনের শক্তি বাড়াতে। দীর্ঘ সময় সরকারে থাকার জন্য সংগঠনের শক্তি বাড়ানোর দরকার। সংগঠন থাকলে তবেই সরকার থাকবে।’’ প্রসঙ্গত, গত ২০১৮ সালের ৯ মার্চ ত্রিপুরার প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন বিপ্লব দেব৷ পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনের মাসদশেক আগে দল তাঁকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করল৷ দিল্লি থেকে আগরতলায় আসা কেন্দ্রীয় নেতা ভূপেন্দ্র যাদব মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিপ্লব দেবের কাজের প্রশংসা করে বলেছেন, তাঁর আমলেই ত্রিপুরার বিকাশ ঘটেছে৷

 

পাশাপাশি ভূপেন্দ্র যাদব গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তাও দিয়েছেন৷ বলেছেন, "দলে গতি আনতেই এই পরিবর্তন৷" আর এইখানেই তিনি নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন৷ বিজেপির একাধিক নেতা এদিন বলেছেন, "বাম আমল থেকেই মাটি কামড়ে লড়াই করে বিজেপিকে সাফল্য এনে দিয়েছেন বিপ্লব দেব৷ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশানুসারেই ত্রিপুরার বিকাশ ঘটানোর কাজে ঝাঁপিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ভোটের মুখে আচমকাই তাঁকে সরিয়ে দলের গতি কোন ম্যাজিকে বৃদ্ধি পাবে, তা দিল্লিই বলতে পারবে৷"

 

দলের সিদ্ধান্ত মানতে রাজ্য বিজেপি রাজি, দলের নির্দেশ মেনেছেন বিপ্লব দেবও৷ তবে ত্রিপুরার মানুষ এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত নন৷ তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, "আগামী নির্বাচনে বিজেপির জয় যেখানে নিশ্চিত ছিল, সেখানে পরিস্থিতি নড়বড়ে করে দলের জয়কে প্রশ্নের মুখে কেন দাঁড় করাল হাই কম্যান্ড? এই রদবদল তো ভোটের পরেও করা যেত।" এদিকে সূত্রের খবর, মানিক সাহা ত্রিপুরা বিজেপির সভাপতি পদ ছাড়তে পারেন। ইস্তফা দেবেন রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকেও। ওই দুই পদেই নাকি নিয়ে আসা হতে পারে সদস্য ত্রিপুরার সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে।

 

তবে রাজনৈতিক মহলের সাফ কথা, ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী বদলে শাসক দলে সংকট বাড়বে৷ আড়াআড়ি বিভাজনও আশ্চর্যের কোনও ঘটনা হবে না৷ তেমন হলে নিশ্চিতভাবেই মহা বিপাকে পড়বে বিজেপি, ক্ষমতায় ফেরা আর হবে না৷ কিন্তু তখনও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভুলে গেলে চলবে না, যে তাঁরাই দিল্লিতে বসে ত্রিপুরার পাকা ঘুটি কাচিয়ে দিয়ে সুগম করেছেন পরাজয়ের পথ৷

 

More Articles