কাস্তে হাতুড়ি ছেড়ে ঘাসফুল! কেন সিপিএমের হোলটাইমার পঙ্কজ যোগ দিলেন তৃণমূলে?

Pankaj Roy Sarkar TMC: এক সময় কেন্দ্র সরকারের চাকরি করতেন। ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নিরুপম সেনের স্নেহধন্য।

কাস্তে হাতুড়ির ভার নামিয়ে জোড়াফুলের পতাকা তুলে নিলেন হাতে। রাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরোধিতা করে এসেছে যে দল, সেই সিপিআইএম ছেড়ে তৃণমূলে চলে গেলেন সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর প্রাক্তন সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার। কিছু সময় আগেই দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। রবিবারই পঙ্কজ রায় সরকারকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছিল সিপিএম। বেলা গড়াতে না গড়াতেই শাসকশরণে চলে গেলেন একদা লাল ঝাণ্ডা বওয়া নেতা।

সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটি বলছে, ক্রমাগত পার্টি লাইনের বিরোধিতা করেছেন পঙ্ক রায় সরকার। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পঙ্কজ রায় সরকারের সম্পর্ক বেশ পুরনো। দীর্ঘদিন ধরেই সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। দলীয় শৃঙ্খলাও ভেঙেছেন একাধিকবার। সেই কারণেই তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এক সময় কেন্দ্র সরকারের চাকরি করতেন। ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নিরুপম সেনের স্নেহধন্য। সেই পঙ্কজ রায় সরকার ইসিএলের পাকা চাকরি ছেড়ে সিপিএমের হোলটাইমার হন। যে দলের আদর্শের সঙ্গে তৃণমূলের নীতি মেলার কথা নয় সেই দলেই কীভাবে যোগ দিলেন পঙ্কজ?

আরও পড়ুন- মেয়ের বদলে মা! মানিকতলা থেকে কেন সরিয়ে দেওয়া হলো সাধন কন্যা শ্রেয়াকে?

পঙ্কজ জানাচ্ছেন, তিনটি কারণে সিপিএম ছেড়েছেন তিনি। দল তাঁকে বহিষ্কার করার আগেই নাকি দল ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে নেতৃত্বকে চিঠি দেন তিনি। পঙ্কজ বলছেন, তিনটি কারণে আমি সিপিএমকে ত্যাগ করেছেন তিনি। "প্রথমত, বামফ্রন্টের ভোট কেন বিজেপিতে যাবে? সেই ভোট কেন আটকানো সম্ভব হচ্ছে না? ২০১৪ সাল থেকে প্রত্যেকবারই দেখা যাচ্ছে যে, বামফ্রন্টের ভোট কমে যাচ্ছে। সেই ভোটটা চলে যাচ্ছে বিজেপিতে। আমার কথা কেউ শোনেনি। দ্বিতীয়ত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা এ রাজ্যের সরকার গরিবের কল্যাণের স্বার্থে যে প্রকল্পগুলি নিয়ে এসেছে, তা নিয়ে কটাক্ষ না-করে তার সমর্থন করে মানুষের স্বার্থে অন্য দাবি করা যেত। বলা যেতে পারত যে, এক হাজার টাকার বদলে বারোশো টাকা দিতে হবে বা ১৫০০ টাকা দিতে হবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে, তা হলে সাধারণ মানুষই উপকৃত হতেন। সাধারণ মানুষ সিপিএমের থেকে অনেকটাই দূরে চলে গিয়েছে। বিশেষত, গরিব শ্রেণি। আর তৃতীয়ত, কংগ্রেস-আইএসএফের সঙ্গে জোট কোনওভাবেই মেনে নেননি রাজ্যবাসী। কারণ, বামপন্থার সঙ্গে তাদের আদর্শ কোনও দিক দিয়ে কোনও ভাবে মেলে না। এই বিষয়েও আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু আমি সমস্ত বৈঠকে সংখ্যালঘু হয়ে গিয়েছিলাম।’’

এবারের লোকসভা নির্বাচনে একটি আসনও পায়নি বামেরা। মহম্মদ সেলিম বাদে সমস্ত আসনেই তৃতীয় স্থানে বামেরা, কিছু আসনে চতুর্থও। ভোটের ফল প্রকাশ্যে আসার পর লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে 'ভিক্ষে' বলে উল্লেখ করেন অনেক বাম সমর্থক। ভিক্ষে দিয়ে ভোট কেনার রাজনীতিকে আক্রমণ চলে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। বিষয়টি সামলাতে বিবৃতিও দেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এই ঘটনার পরপরই পঙ্কজ রায় সরকারের দলত্যাগে এবং শাসকদলে যোগদান কি রাজ্য জুড়েই সিপিএমের ভঙ্গুর দশাকে আরও প্রকট করে তুলল না?

আরও পড়ুন- 

রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস পঙ্ক রায় সরকারের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দিয়ে বলছেন, ‘‘সিপিএম দলে আর কিছু নেই। তাই ভালো মানুষ যাঁরা এখনও সিপিএম দলে রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করুন, এটাই আমাদের আবেদন।’’ পঙ্কজ রায় সরকারের সাংগঠনিক ক্ষমতা বেশ ভালো। তৃণমূল সেটাকেই কাজে লাগাতে চায়। সোশ্যাল মিডিয়াতে পঙ্কজ লিখেছিলেন, ‘‘নিস্তব্ধতা বলে এই ভূদেশে কিছু আছে না কি?’’ পরে অবশ্য সেই পোস্ট-সহ পেজই ডিলিট করে দেন।

দুর্গাপুরে সিপিএমের সংগঠন দেখাশোনার ভার ছিল তাঁর ওপর। রাজ্য সিপিএমের আইটি সেলের দেখাশোনাও করতেন তিনি। সিপিএমের হয়ে জেলায় বহু আন্দোলনের মুখ তিনি। দুর্গাপুর পুরসভার ভোট রয়েছে আগামীতে। সেখানে বামেদের দলীয় সংগঠন সামলানোর অভিজ্ঞতা তৃণমূলের কাজে আসবে বলে মনে করছে শাসকদল। সিপিএম বলছে, পঙ্কজ রায় সরকার দলে থাকলেন, বা না থাকলেন, তাতে কোনও প্রভাবই পড়বে না।

More Articles