স্রেফ পেট্রলই নয়, আগুন দাম জীবনদায়ী ওষুধেরও, কোন যুক্তিতে আকাশছোঁয়া মূল্য?
দাম বাড়ল জীবনদায়ী ওষুধের, তাও এক-দু শতাংশ নয়, দশ শতাংশেরও বেশি মূল্যবৃদ্ধি হল। একদম নির্দিষ্ট ভাবে বললে ১০.৭৬৬০৭% দাম বাড়ল আটশোটিরও বেশি ওষুধের এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত কিছু যন্ত্রাংশের। এর মধ্যে রয়েছে খুব সাধারণ অসুখ-বিসুখের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধও, যেমন - জ্বর, সাধারণ ব্যথা, হার্টের অসুখ, সংক্রমণ, ত্বকের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ থেকে শুরু করে অ্যানিমিয়ার ওষুধও।
২০২১ এর নভেম্বরের শুরুর দিকেই একটি লবি গ্রুপ, যারা হাজারেরও বেশি ভারতীয় ওষুধ উৎপাদনকারীদের প্রতিনিধিত্ব করে, তারা প্রয়োজনীয় ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির জন্যে কেন্ত্রীয় সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছিল।
ওষুধের দাম প্রতি বছরই বাড়ে - ওষুধের হোলসেল প্রাইস ইন্ডেক্স ( Wholesale Price Index) বা ডাব্ল্যু.পি.আই. (WPI) ফী বছর বদলায় ড্রাগস প্রাইস কন্ট্রোল অর্ডারে (Drugs Price Control Order) বা ডি.পি.সি.ও., ২০১৩-এর (DPCO, 2013) ভিত্তিতে।
কিন্তু ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে অর্থাৎ অর্থনৈতিক বছরের (Fiscal Year) শুরু থেকে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির একাধিক কারণ রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক কেন বাড়ছে ওষুধের দাম, এবং কোন কোন ওষুধে কোপ পড়ছে দামের
কোন কোন ওষুধের দাম বাড়ল?
দাম বাড়ছে পেইনকিলার, প্যারাসেটামল (Paracetamol), অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotics) যার মধ্যে পড়ছে অ্যাজি়থ্রোমাইসিনও (Azithromycin) , অ্যান্টি-ইনফেক্টিভ, মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট, ভিটামিন সি (Vitamin C), মিনারেল ট্যাবলেট (Mineral Tablet) , কপার আই.ইউ.ডি. (Copper IUD) , ও.আর.এস. (O.R.S.) বা ওরাল রিহাইড্রেশন সল্ট, ইন্স্যুলিন ইঞ্জেকশন (Insulin injection), ফেনোবারবিটোন (Phenobarbitone), ফিনাইটোইন সোডিয়াম (Phenytoin Sodium) , সিপ্রোফ্লোক্সাসিন হাইড্রোক্লোরাইড (Ciprofloxacin Hydrochloride), মেট্রোনিডাজো়ল (metronidazole) কন্ডোম, প্রভৃতির।
আরও পড়ুন-আন্তর্জাতিক বাজারে দর পড়ছে, তবু কেন লাগামছাড়া পেট্রল?
তবে এখানেই শেষ না, যে মুহুর্তে কোভিডের চতুর্থ ঢেউ ভারতে আশার আশঙ্কা বাড়ছে, ঠিক সেই মুহুর্তে দাম বাড়ছে বেশ কিছু ওষুধের যেগুলি মাঝারি (Moderate) থেকে তীব্র (Severe) কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্যে ব্যবহার করা হয়। এবং পাশাপাশি দাম বাড়ছে কিছু স্টেরয়েডসেরও (Steroids)।
কেন বাড়ছে জীবনদায়ী ওষুধের দাম?
ওষুধের দাম বাড়ার মূল কারণ হল ওষুধ তৈরির প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, যা ঘটেছে মূলত বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারীর কারণে।
শিল্প-বিশেষজ্ঞদের মতে বিগত দুই বছরে মূল কিছু এ.পি.আই-এর (API) দাম বেড়েছে ১৫ থেকে এক লাফে ১৩০ শতাংশ। ফলত প্যারাসেটামলের মত দরকারী ওষুধ, যা কিনা সস্তায় পাওয়া যেত, তার দাম বাড়ছে ১৩০ শতাংশ। ওষুধ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কিছু রাসায়নিকের দাম ১৮ শতাংশ থেকে ২৬২ শতাংশর মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিটি তরল ওষুধ, ওরাল ড্রপ কিংবা জীবানুমুক্ত (Sterilize) করার জন্যে ব্যবহৃত তরলে বিপুল ভাবে গ্লিসারিন (Glycerin) এবং প্রপিলিন গ্লাইকল (Propylene Glycol) ব্যবহারের চল রয়েছে। সেই গ্লিসারিনের দাম বেড়েছে ২৬৩ শতাংশ, অন্যদিকে প্রপিলিন গ্লাইকলের দাম বেড়েছে ৮৩ শতাংশ।
এর পাশাপাশি খরচ বেড়েছে ওষুধ প্যাকেজিং-এর এবং পরিবহণের। ইন্ডিয়া রেটিং এন্ড রিসার্চের (India Rate and Research) সহকারী আধিকারিক (Associate Director) কৃষ্ণনাথ মুন্ডে জানিয়েছেন, ভারতের ওষুধনির্মান শিল্প বহুদিন ধরেই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যার একটি কারণ কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, যেগুলি মূলত চিন থেকে আমদানি হয়। এর মধ্যে পড়ছে মাল বহন এবং প্যাকেজিং-এর খরচও।
আগেও বেড়েছে ওষুধের দাম
প্রতি বছরই ওষুধের দাম বাড়ে। গত বছর এন.পি.পি .এ. (NPPA) ঘোষণা করেছিলো ওষুধের মূল্য বাড়বে ০.৫৩ শতাংহ। ২০২০ সালে মূল্য বেড়েছিল ১.৮৮ শতাংশ, ২০১৯ সালে দাম বেড়েছিল ৪.২৬ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে দাম বেড়েছিলো ৩.৪৩ শতাংশ।