কেন জিও থেকে সরে দাঁড়ালেন মুকেশ আম্বানি?
৩০ বছর বয়সি আকাশ জিও ইনফোকমের প্রধান কৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। নেটওয়ার্ক কাঠামো তৈরি করার পাশাপাশি জিও চ্যাট, জিও টিভি, জিও সিনেমার মতো অ্যাপ্লিকেশনের পিছনে অন্যতম কারিগর আকাশই।
সময়ের নিয়মেই দায়িত্ব হস্তান্তর। রিলায়েন্স জিও থেকে সরে দাঁড়ালেন মুকেশ আম্বানি। এবার সংস্থার যাবতীয় দায়িত্বভার তিনি তুলে দিলেন তাঁর বড় ছেলে আকাশ আম্বানির হাতে। মঙ্গলবার ডিরেক্টর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মুকেশ আম্বানি। তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন বোর্ডের সদস্যরা।
বোর্ড অফ ডিরেক্টরস-এর চেয়ারম্যান হিসেবে মুকেশ আম্বানির ছেলে আকাশ আম্বানিকে নিয়োগ করা হয়েছে। ২৭ জুন, ২০২২ সংস্থার বোর্ড মিটিংয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার আকাশের নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছে রিলায়েন্স জিও-র বোর্ড। রিলায়েন্স জিও ইনফোকম লিমিটেড হলো রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের ডিজিটাল সংস্থা।
সংস্থার তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মুকেশ আম্বানি ওই ইউনিটের ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। আর ওই পদেই তাঁর ছেলে আকাশকে নিয়োগ করেছে বোর্ড। আকাশ ২০১৪ সালে রিলায়েন্স জিও-র বোর্ডে যোগ দেন। এতদিন সংস্থার নন-একজিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজ সামলেছেন তিনি। কোম্পানির অন্যান্য নিয়োগের মধ্যে ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে ২৭ জুন থেকেই দায়িত্ব নিয়েছেন পঙ্কজ মোহন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য পঙ্কজকে এই পদে নিয়োগ করেছে সংস্থা। এছাড়াও রমিন্দর সিং গুজরাল ও কেভি চৌধুরিকে স্বাধীন ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে সংস্থার তরফে।
আরও পড়ুন: বিশ্বখ্যাত তারকারা ছিলেন এই প্রসাধনী ব্র্যান্ডের মডেল, কেন আজ দেউলিয়া রেভলন?
২০২১ সালেই এমন একটি গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল যে, পরবর্তী প্রজন্মের হাতে ব্যবসার ভার তুলে দিতে তৎপর হয়েছেন মুকেশ আম্বানি। অনেকেই এই খবরের সত্যতা নিয়ে তখন প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকী, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির উঁচু পদে থাকা কর্তারাও বিষয়টিকে অসত্য বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর এক বছরও কাটল না, সেই জল্পনাই সত্য বলে প্রমাণিত হলো। রিলায়েন্স জিও-র চেয়ারম্যান পদ ছাড়লেন মুকেশ। তবে জিও-র চেয়ারম্যান পদ ছাড়লেও জিও প্ল্যাটফর্ম লিমিটেডের চেয়ারম্যান থাকছেন মুকেশ আম্বানিই। গত বছর বাবা ধীরুভাই আম্বানির জন্মদিনে রিলায়েন্সের নেতৃত্বে বদলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুকেশ। তিনি ওই অনুষ্ঠানে বলেন, "বড় স্বপ্ন হোক কিংবা অসম্ভব লক্ষ্যপূরণ, সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন সঠিক ব্যক্তি ও সুযোগ্য নেতৃত্ব। রিলায়েন্স এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। আমার প্রজন্মের সিনিয়রদের থেকে তরুণ নেতাদের পরবর্তী প্রজন্মের দিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।"
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অন্যতম শাখা এই জিও। তেল পরিশোধন, পেট্রোকেমিক্যাল থেকে রিটেল ব্যবসা, মিডিয়া, পুনর্নবীকরণ শক্তি উৎপাদন- সব ধরনেরই ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স সংস্থা। ৬৫ বছর বয়সি শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির তিন সন্তানের মধ্যে আকাশ এবং ইশা যমজ এবং ছোট ছেলে অনন্ত।
আকাশের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার পরেই ব্যাপক গুঞ্জন উঠেছে যে, ইশা ও অনন্তের কাঁধেও খুব তাড়াতাড়িই দায়িত্ব তুলে দেবেন মুকেশ আম্বানি। সেক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে, ৩০ বছরের ইশার কাঁধে পড়তে পারে সংস্থার রিটেল ব্যবসার দ্বায়িত্ব। মুকেশ-কন্যা এই মুহূর্তে আনন্দ পিরামিলের ঘরণী। আকাশ এবং ইশা- দু'জনেই রিলায়েন্স রিটেল ভেঞ্চারস লিমিটেডের বোর্ডে ছিলেন। এই সংস্থাটি সুপারমার্কেটগুলি পরিচালনা করে যা ইলেকট্রনিক্স, খাদ্য এবং মুদি, ফ্যাশন, জুয়েলারি, জুতো এবং পোশাক বিক্রি করে। সেই সঙ্গে অনলাইন রিটেল উদ্যোগ জিওমার্ট এবং জিও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম লিমিটেডের সঙ্গে (JPL) অক্টোবর, ২০১৪ থেকে জড়িত ইশা। ২৬ বছরের অনন্ত সম্প্রতি রিলায়েন্স রিটেল সংস্থার একজন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি ২০২০ সালের মে পর্যন্ত জেপিএলেরও অন্যতম পরিচালক ছিলেন।
আমেরিকার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক বড় ছেলে আকাশ আম্বানি। কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরেই আকাশ এবং তাঁর বোন ইশাকে পরিচালন পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন মুকেশ আম্বানি। ২০১৯ সালে ছোটবেলার বন্ধু শ্লোকা মেহেতাকে বিয়ে করেন আকাশ। পরের বছর জন্ম হয় ছেলে পৃথ্বী আকাশ আম্বানির। ক্রিকেটে-প্রেমী আকাশ আইপিএলের মুম্বই ইন্ডিয়ানস দলের অন্যতম পরিচিত মুখ।
৩০ বছর বয়সি আকাশ জিও ইনফোকমের প্রধান কৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। নেটওয়ার্ক কাঠামো তৈরি করার পাশাপাশি জিও চ্যাট, জিও টিভি, জিও সিনেমার মতো অ্যাপ্লিকেশনের পিছনে অন্যতম কারিগর আকাশই। তিনি যেভাবে মেটা ইনকর্পোরশন, আগে যা ফেসবুক ইনকর্পোরেশন নামে পরিচিত ছিল, তাদের ৫.৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ জিও-তে আনতে পরিশ্রম করেছিলেন, তাতেই সংস্থায় গুরুত্ব বেড়েছিল তাঁর। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত অনেকেরই মনে হয়েছিল, বাবা মুকেশের মতোই ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্টই দক্ষ হয়ে উঠেছেন আকাশ। ফলে, আকাশের কাঁধে যে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আসতে চলেছে, তা খানিক আঁচ করতেই পেরেছিলেন সংস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা। দীর্ঘ দিন ধরেই ভারতের টেলিকম বিভাগের শীর্ষস্থানে রয়েছে রিলায়েন্স জিও। সম্প্রতি সংস্থা জানিয়েছে, ২০২২ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে তাদের লাভের পরিমাণ ছিল ৩৬১৫ কোটি টাকা। চতুর্থ ত্রৈমাসিকে লাভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১৭৩ কোটি টাকা। আকাশের হাত ধরে এই লাভের অঙ্কটা বেড়ে কত হয়, তার দিকেই নজর থাকবে সকলের। তাছাড়া এই মুহূর্তে দেশে ফাইভজি নেটওয়ার্ক স্থাপনেরও কাজ শুরু হয়েছে, সেদিকেও নজর থাকবে সকলেরই।