নিজের জন্ম শহর দিল্লিতেই কোণঠাসা শাহরুখ! কেন দেখানো হচ্ছে না জওয়ান?

SRK's Jawan Movie Release: জওয়ান মুক্তি পাচ্ছে ৭ তারিখ, বৃহস্পতিবার। মানে ওই সপ্তাহান্তে হল উপচে পড়া ভিড় হবেই!

তিনি ফের আসছেন। রাত পেরোবে, ভক্তদের ঢেউ এসে পড়বে শহরের ছোট বড় হলগুলিতে। ট্রেলার কাঁপিয়ে তিনি বলে দিয়েছেন "বেটে কো হাত লাগানে সে পেহলে বাপ সে বাত কর"। তাতেই উত্তেজত ভক্তকুল! পাঠানের সাফল্যের পরই প্রমাণ হয়ে গেছিল এই দেশে এখনও শাহরুখই শেষ তারকা। শাহরুখের 'কামব্যাক' সিনেমা পাঠানের সাফল্যের রেশ এখনও টের পাওয়া যায়। এরই মধ্যে নতুন সিনেমা জওয়ান হাজির। পাঠান মুক্তির আগে থেকেই #BoycottBollywood গ্যাং মাঠে নেমে পড়েছিল। বয়কট গ্যাংয়ের মুখে ছাই দিয়ে পাঠান রেকর্ড ভাঙা ব্যবসা করল দেশে, বিদেশেও! ৭ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাচ্ছে জওয়ান। বয়কট সদস্যরাও প্রস্তুত। শাহরুখের কাছেও এসব নতুন না। তবে, এবার কারণটি বেশ ভিন্ন আর স্থানটিও অবাক করা! শাহরুখের জন্ম-বেড়ে ওঠার শহর দিল্লিই হল দিচ্ছে না শাহরুখকে! কেন?

রাজধানী এখন G20 শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত। এই সম্মেলন আর শাহরুখের জওয়ান মুক্তির দিনক্ষণে ব্যাপক সংঘর্ষ। জওয়ান মুক্তি পাচ্ছে ৭ তারিখ, বৃহস্পতিবার। মানে ওই সপ্তাহান্তে হল উপচে পড়া ভিড় হবেই! আর ঠিক ওই সপ্তাহান্তে, ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর G20 শীর্ষ সম্মেলন আয়োজিত হতে চলেছে দিল্লিতে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন সহ বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন। ফলে ওই সপ্তাহান্তে NDMC এলাকার কিছু অংশে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

আরও পড়ুন- নক্ষত্রের অবসর নেই, খুচরো জনতার খড়কুটো আজীবন শাহরুখই

৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের নানা বিধিনিষেধ জারি থাকবে দিল্লিতে এই শীর্ষ সম্মেলনের জন্য। স্কুল, অফিস, রেস্তোরাঁ, শপিং মল, স্থানীয় বাজার, এমনকী সুপ্রিম কোর্টও জনসাধারণের জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। দিল্লির প্রগতি ময়দানে অবস্থিত সম্প্রতি নির্মিত ভারত মণ্ডপম কনভেনশন সেন্টারে এই শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। পিভিআর-আইনক্স লিমিটেডের কার্যকর্তারা জানিয়েছেন, চারটি PVR থিয়েটার— PVR প্লাজা, রিভোলি, ওডিয়ন এবং ECX চাণক্যপুরী এই G20 সামিট চলাকালীন বন্ধ থাকবে। এগুলি সিঙ্গল স্ক্রিন থিয়েটার, আসন ২০০০ করে। অথচ মুক্তির পরের প্রথম সপ্তাহান্তেই শাহরুখের সিনেমা দেখতে পাবেন না এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। অনলাইন টিকিট বুকিং প্ল্যাটফর্ম BookMyShow-এর তথ্য বলছে ইতিমধ্যেই ৭৫০,০০০ টি টিকিট বুক করা হয়েছে জওয়ানের। জওয়ান একটি থ্রিলার। শাহরুখের পাশাপাশি এতে আছেন বিখ্যাত তারকা বিজয় সেতুপতি এবং নয়নতারা। হিন্দি, তামিল এবং তেলগু ভাষায় মুক্তি পাবে জওয়ান৷

জওয়ান হচ্ছে প্রথম হিন্দি ছবি যেটির মুক্তির দিনে ভোরবেলা শো রাখা হয়েছে। কলকাতায় ভোর পাঁচটায় জওয়ানের ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো, জয়পুরে ভোর ৬ টায়। এত ভোরে কে সিনেমা দেখবেন প্রশ্নটি যদি জাগে, জেনে রাখা ভালো হাউস ফুল শো গুলি! জওয়ান পাঠানের প্রথম দিনের রেকর্ড ভাঙবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

তবে শুধু দিল্লিতে না, সম্প্রতি মুম্বইয়ে মন্নাতের বাইরে বিক্ষোভের খবর পাওয়া মিলেছে। এই প্রতিবাদের পিছনে মূল কারণটি হচ্ছে, অনলাইন গেমিং সম্পর্কিত একটি সাম্প্রতিক বিজ্ঞাপন যাতে শাহরুখকে দেখা গেছে। একটি অনলাইন রামি পোর্টালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন শাহরুখ এবং এর জন্য একটি প্রোমোও শ্যুট করেছেন। সেখানে কিং খান বলছেন, ‘চলো সাথ খেলে'। এরপরেই, শাহরুখের বাড়ির বাইরে আনটাচ ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এই অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলি যুব সম্প্রদায়কে দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিপথগামী করছে বলে অভিযোগ। নতুন প্রজন্মের প্রচুর ছেলেমেয়েই রামি খেলেন অনলাইনে। কেউ বাইরে রামি বা জুয়া খেললে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে অথচ শাহরুখের মতো বলিউডের বড় বড় তারকারা অনলাইন গেমের প্রচার করে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছেন।

আরও পড়ুন- চরিত্রে অহিংস দেশ, প্রমাণ শাহরুখের ছবি-জীবন

এখানেই শেষ না, আরও এক বিচিত্র কারণে শাহরুখ খানের অ্যাকশন-থ্রিলার জওয়ান বয়কটের বাণী শুনছে। ডিএমকে মন্ত্রী এবং অভিনেতা উদয়নিধি স্টালিন প্রতিষ্ঠিত রেড জায়ান্ট মুভিজ জওয়ানের তামিল সংস্করণটি ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্বে আছে। সেই কারণেই অনেকে সিনেমা বয়কটের ডাক দিয়েছে কারণ স্টালিন সম্প্রতি সনাতন ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করছেন। উদয়নিধি স্টালিন বলেছিলেন, সনাতন ধর্মকে নির্মূল করতে হবে। দেশ জুড়ে শুরু হয় বিতর্ক। সনাতন একজন ধর্মগুরু তো তাঁর শিরচ্ছেদের নিদানও দিয়েছেন। এবার তাঁর প্রোডাকশন হাউস অর্থাৎ রেড জায়ান্ট সিনেমা থেকে জওয়ান সিনেমা বয়কট করে তাঁর ব্যবসা 'নির্মূল' করার লক্ষ্য নিয়েছে বয়কট গ্যাং।

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রেড জায়ান্ট মুভিজ হচ্ছে অভিনেতা এবং ডিএমকে মন্ত্রী উদয়নিধি স্টালিন সমর্থিত একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা এবং বিতরণ সংস্থা। রেড জায়ান্ট মুভিজ থালাপতি বিজয়ের কুরুভি (২০০৮), কমল হাসানের মনমাধন অম্বু (২০১০), এবং সুরিয়া ও শ্রুতি হাসানের কিছু চলচ্চিত্র তৈরি করেছে। দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস (২০১২), আর মাধবনের রকেট্রি: দ্য নাম্বি এফেক্ট (২০২২), এবং লাল সিং চাড্ডার (২০২২) মতো চলচ্চিত্রগুলির তামিল সংস্করণের ডিস্ট্রিবিউশনও করেছে এই প্রোডাকশন হাউজ। তবে এই ত্রিমুখী বাধার মুখে পড়ে কি পাঠানের মতোই ঝড় তুলতে পারবে জওয়ান? রাত পেরোলেই উত্তর।

More Articles