মায়ের গন্ধ, হারানো মানুষের গন্ধ সত্যিই আলাদা? শরীরের গন্ধ দিয়ে কীভাবে মানুষ চেনা যায়?

Smelling Human: গবেষকরা বলছেন, অন্যান্য প্রাণীদের মতো মানুষও শরীরের গন্ধ থেকে সংকেত বের করতে পারে।

মানুষের ঘনিষ্ঠ হতে হতে সেই মানুষের গন্ধ আমাদের চেনা হয়ে যায়। চোখে দেখা, তাঁকে শোনা, তাঁর স্পর্শ পাওয়া- এসবের পরেও বাকি থেকে যায় তাঁর ঘ্রাণ। কী আশ্চর্য, প্রতিটা মানুষের ঘ্রাণ পৃথক। মায়ের গায়ের গন্ধ যেমন লেগে থাকে আমাদের আজীবনের বেড়ে ওঠায়, বাবার গন্ধ মেলে পুরনো কত দস্তাবেজে। হারিয়ে যাওয়া মানুষদের আমরা এখনও হামেশাই খুঁজি তাঁদের ফেলে যাওয়া পোশাকের মধ্যে। নাক ডুবিয়ে পেতে চাই তাঁর সেই ফেলে যাওয়া স্বতন্ত্র ঘ্রাণ। সত্যিই কি মানুষের দেহে এমন পৃথক পৃথক ঘ্রাণ থাকে? নাকি পুরোটাই আমাদের স্মৃতি মেদুরতার ভার? ২০১২ সালের একটি গবেষণা কিন্তু বলছে গন্ধ চিনে মানুষে মানুষে ফারাক করতে পারে মানুষই। মানুষ শুধুমাত্র গন্ধের উপর ভিত্তি করেই বলতে পারে সেই মানুষটি তরুণ নাকি বৃদ্ধ!

শরীরের গন্ধের কথা যদি আসে অবশ্যই তার উৎস হবে ঘাম, আরোপিত সুগন্ধি নয়। এই গবেষণায়, গবেষকরা বিভিন্ন বয়সের মানুষের শরীরের গন্ধ সংগ্রহ করেছিলেন। এই বিভিন্ন বয়সিদের ঘামের নমুনা পেতে আন্ডারআর্ম প্যাড সহ পাঁচ রাত বিছানায় টি-শার্ট পরে ঘুমোতে বলা হয়েছিল তাঁদের। তারপরে এই প্যাডগুলি কেটে বয়ামের মধ্যে রাখা হয়েছিল। পরে প্রতিটি প্যাডকে শুঁকতে বলা হয়েছিল ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সি কিছু স্বেচ্ছাসেবকদের। সেই গন্ধ কেমন, কী অনুভব হচ্ছে ইত্যাদির পাশাপাশি ওই গন্ধের যে মালিক তাঁর বয়সও অনুমান করতে বলা হয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, এই পরীক্ষাটি থেকে খুব স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল যে অন্যান্য প্রাণীর মতোই, মানুষ শরীরের গন্ধের উপর ভিত্তি করে বয়সের ফারাক করতে সক্ষম এবং এই প্রভাবটি মূলত বৃদ্ধ মানুষদের শরীর থেকে নির্গত গন্ধে বেশি লক্ষণীয়। কিন্তু কেন এমন হয়? মানুষ হোক বা অন্য প্রাণী, গন্ধ চিনে মানুষ চেনার নেপথ্যের প্রক্রিয়াটি এখনও অজানাই।

আরও পড়ুন- ক্যান্সারের গন্ধ কেমন? মানুষের ক্যান্সার শুঁকে বলে দিতে পারে এই প্রাণীরা!

তবে বুড়ো মানুষের গায়ের গন্ধ বা 'নার্সিং হোমের গন্ধ' বিষয়টি খানিক আন্তঃসাংস্কৃতিকও। জাপানে এই বিষয়টিকে কারিশু নামে ডাকা হয়। বয়স্কদের ঘামের একটি স্পষ্ট গন্ধ থাকে যা অল্প বয়সিরা খুব একটা পছন্দ করেন না। স্নায়ুবিজ্ঞানী জোহান লুন্ডস্ট্রোমের মতে, বৃদ্ধ মানুষের গন্ধ আমাদের নস্টালজিক করে বিষয়টি একটু গোলমেলে। বয়স্কদের বগলের ঘামের গন্ধ আলাদা, শরীরের অন্য অংশের ঘামের গন্ধ বা শ্বাসের গন্ধ আলাদা।

একটি পৃথক গবেষণায় দেখা গেছে, গন্ধ উত্পাদনকারী উপাদান ২-নোনেনাল আসলে চর্বিযুক্ত এবং ঘাসের গন্ধযুক্ত একটি অসম্পৃক্ত অ্যালডিহাইড। মানুষের ত্বকে কিছু লিপিড মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। এইগুলিই প্রতিটি মানুষের স্বতন্ত্র গন্ধ তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

এই গন্ধগুলি তৈরি এবং শনাক্ত করার ভালো উপায় হচ্ছে উপযুক্ত 'সঙ্গী' খুঁজে বের করা। গবেষকরা দেখেছেন, বয়স্ক পুরুষ পোকামাকড়গুলি অল্পবয়সি পোকামাকড়ের চেয়ে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। বয়স্ক পোকাদের প্রজননের সাফল্য কমবয়সি পোকাদের থেকে ঢের বেশি। আর পোকারা গন্ধ দ্বারাই আকর্ষণ করে।

গবেষকরা বলছেন, অন্যান্য প্রাণীদের মতো মানুষও শরীরের গন্ধ থেকে সংকেত বের করতে পারে। এই গন্ধই আমাদের জৈবিক বয়স চিহ্নিত করতে, অসুস্থ ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলতে, উপযুক্ত সঙ্গী বাছতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় কে আত্মীয় এবং কে স্বজন নয়, তাও আলাদা করতে শেখায় গন্ধই! কীভাবে গন্ধ এত ক্ষমতা ধরে? এর সঠিক কারণ এবং মানুষের ক্ষেত্রে এর সুবিধা কী কী তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

More Articles