২০২৫-এর মধ্যেই কি অতিমারিতে পরিণত হবে ডায়বেটিস?
ভারতবর্ষে একটি সম্ভাব্য মহামারিতে পরিণত হতে চলেছে ডায়বেটিস, ইঙ্গিত তেমনই। ২০২৫ সালের মধ্যেই ভারতবর্ষে ডায়াবেটেস রুগীর সংখ্যা ৬ কোটি ৯০ লক্ষ ছাড়াবে। চিন্তার বিষয়, এদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই এই মারণব্যাধি শনাক্ত না হয়েই থাকবে। আইসিএমআর - ন্যাশানাল সেন্টার ফর ডিজি়জ ইনফর্ম্যাটিক্স অ্যান্ড রিসার্চের বর্তমান অধিকর্তা ড: প্রশান্ত মাথুরের তত্ত্বাবধানে করা একটি গবেষণা থেকে এমনই জানা যাচ্ছে।
এই গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে ভারতীয়দের মধ্যে খাওয়া-দাওয়ার প্রাথমিক ধরনের ক্রমপরিবর্তন এবং শারিরীক কাজকর্ম কমে আসা, এমনকী বেশ কিছু ক্ষেত্রে একেবারেই কায়িক পরিশ্রম না করা, ডায়াবেটিসের অতিমারির পথে পা বাড়ানোর অন্যতম দুটি কারণ। খাদ্যাভাসের পরিবর্তন এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাবের ফলে বাড়ছে ওবেসিটি এবং ওভারওয়েট হওয়ার প্রবণতা। তা অবার ডায়বেটিসের জমি তৈরি করছে। কিন্তু এর পাশাপাশি আরও একটি কারণ বাড়াচ্ছে ডায়বেটিসের হার, আর তা হল ডায়বেটিস নিয়ে সচেতনতার অভাব। সচেতনতার অভাব দেখা যাচ্ছে খাদ্যাভাস এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণেও, যা প্রকারান্তরে ডায়বেটিসের কারণ হয়ে উঠছে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে।
ড: মাথুরের তত্ত্বাবধানে করা খুব সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ভারতে ডায়াবেটিসের ঘটনা উর্ধ্বমুখী। ফ্রন্টিয়ার্স ইন পাব্লিক হেল্থ নামের সায়েন্টিফিক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে ভারতের শহরাঞ্চলগুলিতে (১৪.৩%) ডায়বেটিসের হার গ্রামাঞ্চলের (৬.৯%) তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি। আবার হয়তো কারোর ডায়াবেটিস নেই, অথচ খালি পেটে থাকলে রক্তে গ্লুকোজ় বা শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকছে। এখানেও আবার এগিয়ে শহরাঞ্চলের বাসিন্দারাই। এদিকে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ডায়াবেটিস থাকার ঘটনা পঞ্চান্ন থেকে চৌষট্টি বছর বয়স্কদের বেশি। কিন্তু এমন নয় যে গ্রামাঞ্চলেও ডায়বেটিসের হার বাড়ছে না।
অন্যদিকে ডায়বেটিস না থাকলেও খালি পেটে থাকাকালীন ব্লাড সুগার বেশি থাকার ঘটনাও হু হু করে বাড়ছে আর এই ঘটনা সবথেকে বেশি পঞ্চাশ থেকে উনসত্তর বছর বয়সিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলেও, বাদ যাচ্ছে না মধ্যবয়স্ক, এমনকি আঠেরো থেকে উনত্রিশের তরুণ-তরুণীরা।
ডায়বেটিস এবং কেবল খালি পেটে ব্লাড সুগারের প্রবণতা কিন্তু বেশি দেখা যাচ্ছে গ্রাম বা শহর নির্বিশেষে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের মধ্যে। সন্দেহের তীর মহিলাদের বিএমআই (অর্থাৎ বয়স, দৈর্ঘ্য, উচ্চতার পরিপ্রেক্ষিতে ওজন), মহিলাদের জীবনধারণের ধরণ, স্ট্রেস ইত্যাদির দিকেই। মহিলাদের বিএমআই পুরুষদের তুলনায় বেশি, পাশাপাশি রয়েছে লিঙ্গ-বিষয়ক শারীরিক সমস্যা - যার কারণেই মহিলাদের মধ্যে ডায়বেটিস এবং খালিপেটে ব্লাড সুগার বেশি থাকার প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় বেশি।
পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে মহিলাদের মধ্যে - বিশেষ করে যারা তরুণী, যুবতী এবং প্রোঢ়াদের মধ্যে - ডায়বেটিস বিষয়ে সচেতনার হার কম, মহিলাদের ক্ষেত্রে ডায়বেটিসের চিকিৎসার সুযোগও কম। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা কিন্তু এদিকে এগিয়ে। পুরুষদের মধ্যে ডায়বেটিস সচেতনা বেশি; এছাড়াও শহুরে লোকজন এবং বয়স্করা অনেক বেশি সচেতন ডায়বেটিস নিয়ে।
ড: মাথুরের মতে যারা সচেতন নয় ডায়বেটিস নিয়ে কিংবা ভাবতেই পারেন না কম বয়সেও ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে, তাঁদের ক্ষেত্রে দ্রুত সচেতনা বৃদ্ধি জরুরি এবং এই পদক্ষেপ গ্রাম-শহর নির্বিশেষেই নেওয়া উচিত। তার থেকেও জরুরি বিষয়, চিকিৎসার প্রাথমিক স্তরেই ডায়বেটিস শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা করার সুযোগ বাড়াতে হবে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষদের মধ্যে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কমবয়সিরা এবং মহিলারা ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার থেকে বাদ পড়ে যান, তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু এইবারে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে তাঁদের বিষয়েও।
ইতিমধ্যেই ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছিলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ভারতের স্থান তৃতীয়। এখনই সাবধান না হলে আগামী তিন বছরের মধ্যেই ডায়বেটিসের অতিমারিতে পরিণত হওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়।