একমাত্র এই চালেই পরাজিত হতে পারে বিজেপি, যে উপায় বাতলে দিলেন প্রশান্ত কিশোর

Prasant Kishor on BJP Defeat : বছর গেলেই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের মহারণ। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিও নিজেদের নীল নকশা তৈরি করে নিচ্ছে।

নতুন বছর ২০২৩-এর সবেমাত্র তিনটি মাস পেরিয়েছে। তার মধ্যেই বেশকিছু ঘটনা দেখে নিয়েছে গোটা বিশ্ব। রোহিঙ্গাদের বিপর্যস্ত অবস্থা, তুরস্কের ভূমিকম্প, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তি – ঘটনার ঘনঘটা লেগেই রয়েছে। বাদ নেই আমাদের দেশও। ভারতেও বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ, ক্রিকেট ইত্যাদি তো রয়েছে। তবে ভারতের মতো দেশে সবসময় চর্চার শিখরে থাকে রাজনীতি। বিশেষ করে ২০২২-এর শেষ দিক থেকে গোটা দেশ ভোট মরসুমে মত্ত। প্রথমে গুজরাত, হিমাচল নির্বাচন; তারপর ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড বিধানসভা – রাজনৈতিক উত্তাপ একেবারে চরমে। আগামী দিনে আরও বেশ কয়েকটি নির্বাচন আসছে। রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর বছর গেলেই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের মহারণ। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিও নিজেদের নীল নকশা তৈরি করে নিচ্ছে।

এদিকে ২০২৪-এর অঙ্ক ঠিক কী হতে চলেছে, তা নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কে দাঁড়াবেন, সেটাই বারবার মূল প্রশ্ন হয়ে উঠে আসছে। সেইসঙ্গে ফিরে ফিরে আসছে মহাজোটের প্রসঙ্গ। বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে বিজেপির গেরুয়া ঝড় থামাবে, এমনই স্বপ্ন দেখছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা। কিন্তু বারবার সেই মহাজোটের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। বিজেপির বক্তব্য, এসব নামেই জোট, আদতে অনেকগুলো টুকরোয় ভেঙে আছেন এই বিরোধী নেতা নেত্রীরা। ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে সেই ব্যাপারগুলিকেই আরেকবার ছুঁয়ে গেলেন প্রশান্ত কিশোর।

সম্প্রতি এনডিটিভি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে আসন্ন নির্বাচন ও তার পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিতভাবে বলেছেন ভারতীয় রাজনীতির ‘পিকে’। এর আগে বিজেপি, পরে তৃণমূলের স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। আর প্রশান্ত কিশোরের বক্তব্য, তাঁর পর্যবেক্ষণ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বারবার। সাক্ষাৎকারে তাঁর কাছে মূল প্রশ্ন ছিল, বিজেপির বিপরীতে তিনি কাকে দেখছেন? মহাজোটকে? গেরুয়া ঝড়কে থামানোর কি কোনও রাস্তা আছে? কারণ, সাম্প্রতিক সময় দেখা গিয়েছে, একমাত্র গুজরাত ভোট ছাড়া বাকি নির্বাচনে বিজেপি একটু হলেও পিছলে পড়েছে। ত্রিপুরার মতো বেশকিছু জায়গায় জয় এলেও, আগের থেকে মার্জিন কমেছে বেশ খানিকটা। তাহলে কি মোদি ম্যাজিক ফিকে হওয়ার মুখে?

এখানেই সবিস্তারে উত্তর দিয়েছেন পিকে। তাঁর মতে, বিজেপিকে হারানো যে একেবারে অসম্ভব, তা একদমই নয়। গেরুয়া ঝড় ও মোদি-শাহকে পরাস্ত করা সম্ভব। সেই রাস্তাও বাতলে দিয়েছেন তিনি। প্রশান্ত কিশোরের মতে, বিজেপিকে হারাতে গেলে সবার আগে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একে অন্যের সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাত, চা-পান এসব নয়। পিকে এখানে গুরুত্ব দিয়েছেন আদর্শের জায়গাকে। তাঁর মতে, হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে তার পাল্টা কোনও আদর্শকে মানুষের সামনে আনতে হবে। মানুষের কাছে সেই আদর্শকে পৌঁছতে হবে। বিজেপির সঙ্গে লড়তে গেলে তার লড়াইয়ের ধরন, হিন্দুত্ব, উগ্র জাতীয়তাবাদের তত্ত্বকে ভালো করে বুঝতে হবে। তা না হলে পাল্টা আক্রমণ, পাল্টা আদর্শের জায়গা আসবে না।

এখানেই তিনি মনে করছেন, বিরোধীদের যে মহাজোটের কথা বারবার সামনে আসছে, সেটি আদতে কোনও কাজ করবে না। কেন? পিকে-র দাবি, সেখানে কোনও আদর্শগত স্থিরতা নেই। পিকে-র মতে, যদি একটা নির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট, প্রত্যাঘাতী আদর্শ না থাকে, তাহলে বিজেপিকে হারানো খুব মুশকিল। এভাবে টুকরো টুকরো হয়ে বিরোধী জোট হয়ে আখেরে কোনও লাভ হবে না।

সেইসঙ্গে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়েও বলেছেন তিনি। প্রশান্ত কিশোরের মতে, এই যাত্রা অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে, অনেকে কটু কথাও বলেছে। কিন্তু কংগ্রেস দলের নির্বাচনী প্রচার এবং সেই ভিত মজবুত করা ছাড়া আর কোনও কাজ করেছে কি? সরাসরি এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি। যদি প্রতিটা জায়গায় গিয়ে সেখানকার মানুষ, ভূপ্রকৃতি, পরিবেশ, সমস্যার কথা বুঝতে পারতেন রাহুল গান্ধী, তাহলে হয়তো আরও বড় কিছু হতে পারত। কে জানে, হয়তো প্রকারান্তরে সেটাই বিজেপির বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতী অস্ত্র হয়ে দাঁড়াত।

More Articles