আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম 'টাইমড আউট'! ২২ গজের এই বিশেষ নিয়ম সম্পর্কে জানেন?
Timed Out in World Cup 2023: ক্রিকেটের এক বিরলতম ঘটনা এই ধরনের টাইমড আউট। এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর ঘটেনি কখনও।
বাইশ গজের যুদ্ধ বলে কথা, সেই যুদ্ধের ডানপাশে, বামপাশে কত যে নিয়ম, কত যে আইন! তা মাঝেমধ্যে ভুলে যান ক্রিকেটাররাই স্বয়ং। যেমন সোমবারের ম্যাচে ভুলে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার তারকা ক্রিকেটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। নিয়ম নিয়মের মতো ছিল। সেভাবে ব্যবহার হয়নি কোনওদিন। তবে সেই নিয়ম যে এতদিন বাদে মাঠে এসে গুলিয়ে দেবে সব হিসেব-নিকেশ, ব্যাট না ধরেই গ্যালারিতে ফিরতে হবে ম্যাথিউজকে, তা কি দুঃস্বপ্নেও ভেবেছিলেন এই তারকা ক্রিকেটার। কিন্তু তেমনটাই হল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ৩৮তম ম্যাচে, দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে।
সোমবার সেই ম্যাচটি ঘিরে অনেকটাই দোটানা ছিল। যেভাবে রাজধানী ঘিরেছে বায়ুদূষণ, তাতে আদৌ অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ম্যাচ হবে কিনা, তা নিয়েও ছিল যথেষ্ট সংশয়। তবে শেষপর্যন্ত ম্যাচ হয়, এবং তা দিল্লির ওই স্টেডিয়ামেই হয়। তখন ২৪.২ ওভার চলছে। এমন সময় চতুর্থ উইকেটটি পড়ে শ্রীলঙ্কার। উইকেট নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক শাকিব নিজেই। যথারীতি পরের ব্যাটার হিসেবে মাঠে নামেন ম্যাথিউজ। ক্রিজে নেমেই হেলমেট নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন ম্যাথিউজ। সম্ভবত তাঁর হেলমেটের স্ট্যাপটি ছিঁড়ে গিয়েছিল। গার্ড না নিয়েই ডাগ-আউটের দিকে হেলমেট আনতে বলেন তিনি।
ততক্ষণে আম্পায়ারের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন সাকিব। কথাও বলছেন তাঁর সঙ্গে। ততক্ষণে আম্পায়ার-শাকিব কথাবার্তায় যোগ দিয়েছে ম্যাথিউজও। রীতিমতো উত্তেজিত তিনি। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন, হেলমেটের স্ট্র্যাপের সমস্যা ছিল। তার পরেও ম্যাথিউজকে আউট ঘোষণা করে দেন আম্পায়ারেরা। শাকিবের সঙ্গেও কথা বলেন ম্যাথিউজ। তবে আউটের আবেদন ফেরাননি শাকিব। ফলে বাধ্য হয়েই ড্রেসিং রুমে ফিরতে হয় ম্যাথিউজকে।
আরও পড়ুন: টাইমড আউট হতে পারতেন সৌরভ গাঙ্গুলিও! ১৬ বছর আগে কীভাবে বেঁচে যান তিনি?
কিন্তু মাঠে নেমেও গ্যালারিতে ফিরতে হল কেন ম্যাথিউজকে? ক্রিকেটের নিয়মে একে বলে টাইমড আউট। কী সেই নিয়ম? আদতে ব্যাটারকে আউট করার আরেকটি পদ্ধতি বলা যায় একে। ক্রিকেটের হ্যান্ডবুকে বলা আছে, আগের ব্যাটার আউট হওয়ার তিন মিনিটের মধ্যে পরবর্তী ব্যাটারকে প্রস্তুত হয়ে ক্রিজে পৌঁছোতে হবে। না, শুধু পৌঁছলেই হবে না, নিতে হবে স্ট্রাইক বা গার্ড, অথবা তার সঙ্গীকে পরের বলটি গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। এই শর্তগুলি পূরণ না হলে প্রতিপক্ষ দলের তরফে টাইমড আউটের আবেদন করা যাবে। যেমনটা করেছিলেন শাকিব।
ক্রিকেটের ইতিহাসে এ এক বিরলতম ঘটনা এই ধরনের টাইমড আউট। এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন ঘটনা আর ঘটেনি। যদিও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল আগেও। ২০০৭ সালে কেপটাউনে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ ছিল সেটি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক সম্ভবত শাকিবের মতো ততটা আগ্রাসী ছিলেন না। ফলে প্রথম টাইমড আউটের খেতাব জিততে জিততে বেঁচে যান সৌরভ।
সোমবারের ম্যাচ এমনিই কঠিন ছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার কাছে। একে দিল্লির পরিবেশ দূষণে এত দৌড়ঝাঁপের খেলা, তার উপর ধোঁয়াশার জন্য দৃশ্যমানতাও ছিল নিচের দিকে। সব মিলিয়ে খেলোয়ারদের স্ট্রেস ছিল বেশ বেশি। তার মধ্যে শাকিব ও ম্যাথিউজের এই দ্বৈরথ ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে সমালোচক থেকে নেটদুনিয়া। ধারাভাষ্যকার ও প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার ওয়াকার ইউনিস তো সেসময়েই তুলোধনা করেন শাকিবকে। এদিকে, শাকিবের পাশে দাঁড়ান ধারাভাষ্যকারদের অন্য একটি দল। তাঁরা সাফ জানান, শাকিব ভুল কিছু করেননি। ক্রিকেটের নিয়মে যা আছে, তা মেনেই আউটের আবেদন করেছিলেন তিনি। ক্রিকেট আইনের কোড ১৯৮০-তে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ রয়েছে এই আইনের। সবটা জানা সত্ত্বেও ম্যাথিউজের মতো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার কেন আগে থেকে সতর্ক হননি, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, হেলমেট পরিবর্তন করার সময় আম্পায়ার ও শাকিবকে আগে বলা উচিত ছিল ম্যাথিউজের। কারণ শেষে যখন দেরি করে ওভার শেষ করার জন্য বাংলাদেশকে ৩০ গজের বৃত্তের ভিতরে বাড়তি খেলোয়াড় রাখতে হত, তখন তো সেটা করতেই হত শাকিবদের। সেইসময় কি ম্যাথিউজ এসে বলতেন যে শ্রীলঙ্কা কয়েকটা রান কম নেবে! নেটবিশ্বেও বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আরও পড়ুন:বিশ্বকাপ খেলার মাশুল, আড়াই হাজার সিগারেট ‘খেতে’ বাধ্য হল শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
তবে মাঠে নেমে ব্যাট ধরার আগেই মাঠের বাইরে ছিটকে যাওয়ায় ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি ম্যাথিউজ। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ক্ষোভে দুঃখে ছুড়ে ফেলে দেন হেলমেট। তার পরেও হাল ছাড়েননি। ফের আম্পায়ারদের কাছে গিয়ে আবেদন জানান পুনর্বিবেচনার। তবের লাভের লাভ কিছু হয়নি। খালি হাতেই ফিরতে হয় তারকা এই ক্রিকেটারকে। এখনও তিনি গোটা ব্যাপারটি হজম করতে পারছেন না। তার সঙ্গে যা হয়েছে ঠিক হয়নি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। এমনকী ক্যামেরাবন্দি প্রমাণও হাজির করেছেন ম্যাথিউজ আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে। কিন্তু যা হওয়ার তো হয়েই গিয়েছে। হারা ম্যাচ তো আর শত অভিযোগেও ফেরত পাবে না ম্যাথিউজ ও তাঁর দল। কথায় বলে, 'নজর হঠি, দুর্ঘটনা ঘটি!' ম্যাথিউজের সঙ্গে যেন তেমনটাই ঘটেছে। যে আউট হওয়ার আশঙ্কা দুঃস্বপ্নেও করেননি তিনি, বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে তো বটেই, গোটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে নজিরবিহীন সেই আউটের শিকার হলেন শ্রীলঙ্কার এই ক্রিকেটার।