রাতের পর রাত চেষ্টা করেও ঘুম আসছে না? শোওয়ার ঘরে যে যে ভুল করে চলেছেন আপনি...

World Sleep Day: যাদের ঘুমের মান যত ভালো তাদের জীবনে শান্তি এবং সন্তুষ্টিও ঢের বেশি।

ঘুম না হওয়ার যন্ত্রণা যে কী, এই সময়ের অধিকাংশ মানুষই হাড়ে হাড়ে জানেন। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ঘুম আমাদের বিপাক এবং আমাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের কার্যকারিতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। তবে এই সময়ের জীবনে ঘুমের সমস্যা নেই এমন মানুষ পাওয়াই দুষ্কর প্রায়। ঘুম না আসার সমস্যা, যাকে সহজ কথায় অনিদ্রা বলেই ডাকেন অধিকাংশ, তা আরও জটিল স্বাস্থ্যসমস্যার দিকে নিয়ে যাচ্ছে মানুষকে। অনিদ্রা রোগ মানুষের ঘুম না আসার সমস্যা, তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে না উঠতে পারা এবং সারাটা দিন ধরে ক্লান্তি বা অবসাদের সমস্যায় ফেলে দেয়। অনিদ্রায় যারা ভুগছেন তাদের কাজে মনোনিবেশের অসুবিধা হয়, নানা বিষয় মনে রাখতে অসুবিধা এবং মেজাজের ঘনঘন পরিবর্তনের মতো বিবিধ সমস্যা দেখা দেয়।

অনিদ্রার কারণ কী?

অনিদ্রার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যেমন, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, নির্দিষ্ট ওষুধ এবং অস্বাস্থ্যকর ঘুমের ধরণ। অনিদ্রার অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে মাদকের অপব্যবহার, স্লিপ অ্যাপনিয়া, রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম এবং শিফট ওয়ার্ক। থাইরয়েডের সমস্যা, হাঁপানি এবং হৃদরোগের মতো কিছু রোগের কারণেও অনিদ্রা হতে পারে।

অনিদ্রার তীব্রতা এবং অন্তর্নিহিত কারণের উপর নির্ভর করে এই রোগের বিভিন্ন চিকিত্সা হতে পারে। অনিদ্রা যদি খুব গুরুতর না হয় সেক্ষেত্রে, সাধারণ জীবনধারা পরিবর্তন ঘুমের মান উন্নত করতে পারে। ঘুমের নিয়মিত সময়সূচি বজায় রাখা, ঘুমানোর আগে ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা, সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং ধ্যান বা যোগব্যায়ামের মতো কিছু বিষয় অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে পারে।

আরও পড়ুন- নাক ডাকিয়ে ঘুম মানেই সুখনিদ্রা নয়! মৃত্যুকে রোজ রাতে ডেকে আনছে আপনার ছোট্ট ভুলই

গুরুতর অনিদ্রার ক্ষেত্রে, ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। এই ওষুধগুলি অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শেই খাওয়া উচিত, নাহলে এই ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়ে যেতে পারে এবং অবাঞ্ছিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। কগনিটিভ বিহেভেরিয়াল থেরাপি (CBT) অনিদ্রার এক দুর্দান্ত চিকিত্সা। CBT মানুষের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আচরণ শনাক্ত করতে এবং তাদের সমাধানে সাহায্য করে, যাতে ঘুমের সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

অনিদ্রাকে পালটে ফেলা কি সম্ভব?

ওষুধ, আচরণ এবং জীবনধারা পরিবর্তনের ফলে ঘুমের সমস্যার সমাধান করতে পারে। সঠিক কাউন্সেলিং, ওষুধ এবং ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনের মাধ্যমে অনিদ্রার চিকিৎসা সম্ভব। অনিদ্রাকে পালটে দিতে হলে ঘুম না আসার অন্তর্নিহিত কারণ চিহ্নিত করতে হবে। যদি স্ট্রেস এবং উদ্বেগ অনিদ্রার কারণ হয়, তবে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল ঘুমের মান উন্নত করতে কার্যকরী হতে পারে।

কীভাবে সঠিকভাবে ঘুমানো উচিত?

CBT নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ বা দূর করতে সাহায্য করে। সাধারণত এটিই প্রাথমিক চিকিত্সা। এটি কখনও কখনও ঘুমের ওষুধের চেয়েও ভাল কাজ করে।

থেরাপিস্টরা সাধারণত প্রথমেই শোওয়ার ঘরে স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করেন যাতে আপনি শোওয়ার ঘরকে বসার ঘর, আড্ডা মারার জায়গা বা ল্যাপটপে কাজ করার জন্য ব্যবহার না করেন। কয়েক মিনিট শুয়ে থাকার পরও যদি আপনি ঘুমাতে না পারেন, তাহলে বিছানা ছেড়ে বেডরুম থেকে বের হয়ে যাওয়া দরকার। ম্লান আলোতে গান শুনুন বা কিছু পড়ুন কিন্তু টিভি দেখবেন না কারণ এটির আলোতে ঘুম আসে না। ঘুমের সময় অবশ্যই বিছানায় ফিরে যান। কিছু স্ট্রেচিং এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম শোবার সময় উদ্বেগ এবং চাপ কমাতে পারে। তারা হৃদস্পন্দনকেও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

আরও পড়ুন- কেন ঘুমের জন্য ওষুধের দরকার পড়ল মানুষের? অবাক করবে স্লিপিং পিল আবিষ্কারের ইতিহাস

খাবার গুছিয়ে যত্ন করে খেতে হবে এবং দুপুরের পর থেকে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন। রাতে প্রস্রাব করার প্রবণতা থাকলে রাতের খাবারের পর সবধরনের পানীয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। রাতের খাবারের পরে অ্যালকোহলও এড়িয়ে চলুন কারণ এটি ঘুমের গুণমান নষ্ট করে।

বিছানা যেন আরামদায়ক হয়, শোওয়ার ঘরটি শান্ত হতে হবে, তাপমাত্রা আরামদায়ক হতে হবে। দরকার পড়লে স্লিপ মাস্ক এবং ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করুন। সারাদিনে কী করেছেন তা নিয়ে চিন্তা করতে বসবেন না রাতে মোটেও বা পরের দিন কী কী কাজ এবং সময়সীমা তা নিয়েও চিন্তা করবেন না।

ঘুমের গুণমান, পরিমাণ এবং সময়

ঘুমের গুণমান এবং পরিমাণ দুই-ই স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য, তবে ঘুমের গুণমান বেশি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। যাদের ঘুমের মান যত ভালো তাদের জীবনে শান্তি এবং সন্তুষ্টিও ঢের বেশি। একইভাবে, ঘুমের সময়সীমাও গুরুত্বপূর্ণ এবং দিনে অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

ভালো মানের ঘুম ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম জোগায় এবং সতেজ বোধ করতে সাহায্য করে। ভালো ঘুম শরীর এবং মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে এবং মানসিক ভারসাম্যও বজায় রাখে। নিম্নমানের ঘুম সারা দিনের ক্লান্তি, বৌদ্ধিক দুর্বলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যসমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

More Articles