শ্লীলতাহানি করলে 'যমরাজ' ব্যবস্থা নেবে, বলছেন যোগী! কী বলছে হাথরাস, উন্নাও?
Uttarpradesh Rape & Molestation: দিনের আলোয় দলিত মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়া, ধর্ষণ করে গাছে টাঙিয়ে দেওয়া যোগীর রাজ্যেই ঘটে।
রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে ছাত্রীটি। আমজনতার সড়ক। মোটরসাইকেলে চেপে আসছেন দুই ব্যক্তি। লক্ষ্য এই ছাত্রীটিই। মেয়েটিকে 'দরকার'। মেয়ে যদি না চায়, মেয়ে যদি 'না' বলে তা শোনার কোনও প্রয়োজন নেই। প্রকাশ্য রাস্তায় ওই সাইকেলে চাপা ছাত্রীর ওড়না ধরে টান দেয় দুই ব্যক্তি। টাল সামলাতে না পেরে, ভয়ে আতঙ্কে সাইকেল থেকে রাস্তায় পড়ে যায় ছাত্রীটি। পিছন থেকে বেগে ধেয়ে আসা একটি অন্য মোটরবাইক তাঁকে পিষে দিয়ে চলে যায়! ঘটনা এটুকুই, ঘটনা এমনটাই, দেশ জুড়েই। অলিতে গলিতে, সড়কে, নিভৃতে- ঘটনা তো এটাই। ছাত্রীটি উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। সেই উত্তরপ্রদেশ যেখানে মেয়েদের অবস্থা নতুন করে আর না বললেও চলে। হাথরাস, উন্নাও মানুষ ভুলে গেছে, এই ছাত্রীটিকেও আমরা ভুলে যাব। ছাত্রীটির এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, কেউ যদি রাজ্যে মহিলাদের হেনস্থার মতো অপরাধ করে, তার জন্য 'যমরাজ' অপেক্ষা করছে। আর আইন, আদালত, পুলিশ? যমরাজের হাতে ছেড়ে নিশ্চিন্ত একজন মুখ্যমন্ত্রী?
আম্বেদকরনগরে এই ঘটনাটি ঘটার পর তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, এই অভিযুক্তদের মধ্যে দুইজনের গুলি লেগেছে। পুলিশি হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় একজনের পাও ভেঙেছে। জেলায় ৩৪৩ কোটি টাকার ৭৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী বললেন, রাজ্যে মহিলাদের শ্লীলতাহানির মতো অপরাধ করলে যমরাজই তাঁর জন্য অপেক্ষা করবে। পুলিশ এই অভিযুক্তদের ধরে গুলিও করল। অপরাধীদের জন্য যমরাজ অপেক্ষমান কিনা জানা নেই, তবে ছাত্রীটির জন্য তো নিশ্চিতভাবেই ছিল। মেয়েদের জন্য মৃত্যুই অপেক্ষা করে সাধারণত।
আরও পড়ুন- খোদ উত্তরপ্রদেশেই ইন্ডিয়ার কাছে হেরে ভূত বিজেপি! কেন এই শোচনীয় হার?
দিনের আলোয় দলিত মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়া, ধর্ষণ করে গাছে টাঙিয়ে দেওয়া যোগীর রাজ্যেই ঘটে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) ২০২১ সালের তথ্য বলছে, দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যে প্রতি তিন ঘণ্টায় একজন করে মহিলা ধর্ষিত হন। কেন্দ্রে এই কালে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকারই 'মহিলা শক্তি মিশন' এবং 'বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও' প্রকল্প আনে। অথচ বেটিরা মরে।
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ দু'টি কুখ্যাত গণধর্ষণ মামলায় উদাসীন ছিল। উন্নাওতে ২০১৭ সালে ক্ষমতাসীন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ এবং ২০২০ সালের ভয়াবহ হাথরাস গণধর্ষণ দেখিয়ে দেয় যোগীর রাজ্যে পুলিশ বিশেষ ক্ষেত্রে চুপই থাকে। যোগীর যমরাজও নিদ্রা যান।
২০১৪ সালে যখন রাজ্যে অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে সমাজবাদী পার্টির সরকার ছিল তখন পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বুদাউন জেলার একটি গ্রামে দুই তরুণীকে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, হালের লখিমপুরের ঘটনার মতোই। নিহত মেয়েরা দলিত। শ্বাসরোধ করে হত্যার আগে গণধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁদের। একাদশ শ্রেণির ছাত্রীর ওড়না টেনে হেনস্থা এবং পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু একটি সংখ্যামাত্র। পুলিশের এক্ষেত্রে অতি তৎপরতাও একটি ব্যতিক্রম মাত্র। তাতে উত্তরপ্রদেশের মেয়েদের জীবন সম্মানের হয় না। তাতে দলিতদের অবস্থাও বদল হয় না।