জেলনস্কি বলছে, জয় মাত্র কয়েক হাত দূরে! বছর ঘুরে কোথায় দাঁড়িয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

Russia Ukraine Conflict : বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর একটি দেশের বিরুদ্ধে এক অসম লড়াইয়ে ইউক্রেন কতদিন টিকতে পারবে, তা নিয়ে অনেকেই ছিলেন সন্দিহান। কিন্তু স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে লড়াই যে কতটা জান কবুল হতে পারে তা দিই একটা বছর...
দেখতে দেখতে গোটা একটা বছর কেটে গেল, এখনও বাতাসে লেগে রয়েছে যুদ্ধের গন্ধ। ২০২২ সালের ২৪ ইউক্রেন ফেব্রুয়ারি প্রথম আক্রমণ চালায় রাশিয়া। তার পর থেকে নানা কিছুই ঘটেছে। নিমেষের মধ্যে তলিয়ে গিয়েছে দেশের ভিত। সারা বিশ্ব এখনও যেন তটস্থ হয়ে রয়েছে, এই বুঝি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন হয়ে পড়ল! এই এক বছরে বিদ্ধস্ত হয়েছে ইউক্রেন। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের জেরে প্রাণ হারিয়েছে দুই দেশের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। একটা বিভিৎস লড়াই, একটা জেদ আর বিরাট একটা হামলা, কতটা বদলাতে পারলো পরিস্থিতি? পাওয়ার থেকে হারানোর তালিকাটাই কি বেশি ভারী নয়? প্রশ্নগুলো ক্রমশ জমাট বাঁধছে। পুরনো বছরের দিকে ফিরে তাকালে কেবল হাহাকার, কেবল ধ্বংস, জমাট বাঁধা চাপ চাপ রক্ত...
 
পুতিন বনাম জেলেনাস্কি বিবাদের শেষ ঠিক কোথায়? সঠিক জবাব খোঁজার তাগিদেই বদলে গেল রাশিয়া এবং ইউক্রেন সহ গোটা বিশ্বের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ছবিটা। বিশ্বজুড়ে জ্বালানিসংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিটি দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। অথচ এক বছর পরেও সংঘাত থামার চিহ্ন নেই। প্রাথমিক ভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন চেয়েছিলেন পুরো ইউক্রেন দখল করে নিতে। যদিও জায়গা ছাড়তে নারাজ ইউক্রেনও। তবে ইউক্রেনের পাঁচ ভাগের একভাগ এলাকা এখন রাশিয়ার দখলে। যদিও জেলেনস্কি বারবার বলেছেন, রাশিয়াকে তাদের জমি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ইউক্রেনের আছে। এমনকী ক্রিমিয়াকেও রাশিয়ার দখল থেকে মুক্ত করার দাবি তাঁর।
 
আরও পড়ুন - দরিদ্র অন্তত ৪০ লাখ! অন্ধকার ভবিষ্যতের সামনে ইউক্রেনের একরত্তি শিশুরা
 
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, অতর্কিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান ঘোষণা করলেন৷ তারপরেই কৃষ্ণসাগরের গাঁ ঘেঁষে থাকা ছোট্ট ইউক্রেনে আছড়ে পড়ে বোমা৷ সেই শুরু যুদ্ধের। তারপর থেকেই গোটা একটা বছর ধরে কেবলই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। প্রতিপক্ষকে বেসামাল করার জন্য যে যার মতো করে আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগ করেছে। শুরু থেকেই ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হয়ে যায়। মাঝে কয়েকমাস পরিস্থিতি খানিকটা শিথিল হয়ে পড়লেও আবারও বদলে যায় পরিস্থিতি। শুরু হয় পাল্টা আঘাত ফিরিয়ে দেওয়া পালা। যদিও গত কয়েক মাসে ইউক্রেন সেনাদের আক্রমণে দক্ষিণের খেরসন, মাইকোলিভ এবং উত্তর পূর্ব দিকে খারকিভ সহ্য বহু জায়গা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় রাশিয়া। শুধু তাই নয় এই কয়েক মাসে প্রায় ৮০ হাজার রুশ সেনা মারা গিয়েছেন বলেও জানিয়েছে একটি সমীক্ষা। আর ঠিক এসবের পরেই শীতকাল। পরিস্থিতির আবার ভোল বদল! কঠিন শীতে ক্রমশ জীবনধারণের রসদ ফুরিয়ে আসতে শুরু করে ইউক্রেনের, আর ঠিক এই সুযোগটার অপেক্ষায় যেন করেছিল রাশিয়া। শীত একটু পাকাপাকি হতেই আচমকা ড্রোন হামলা চালায় রাশিয়া। 
 
পরিস্থিতি এতটাই বেহাল হয়ে পড়ে যে মৃত্যুকে কার্যত স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথই যেন খোলা থাকে না। বিদ্যুৎ এবং জলের জোগান অনিশ্চিত করে দেওয়া হয়। ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের মনবল ভেঙে দিয়ে মোক্ষম প্রতিশোধ নেয় রুশ বাহিনী। সেই যুদ্ধ এখনও চলছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে ইউক্রেন। হাল ছাড়েননি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নায়ক ভোলোদিমির জেলেনস্কি। সম্প্রতি আবারও পারমাণবিক হামলা চালায় রাশিয়া। আকাশপথে আক্রমণের জেরে একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কিভ-সহ ইউক্রেনের একাধিক শহর। গত এক বছরে ইউক্রেন দেশটি বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু আরও বড় কথা, বোঝা গিয়েছে, আধুনিক ইতিহাসের একটি মাইলফলক হয়ে থাকতে চলেছে এই যুদ্ধ, সমগ্র বিশ্বই পাল্টে যেতে বসেছে অনেক প্রকারে। আগামী প্রজন্ম দিন দিন পর্যবসিত হয়ে একটা ঘোরতর অন্ধকারের মধ্যে। 
 
দুই পক্ষের নেতৃত্বের মুখেই লড়াই, এবং জয়ের দাবি স্পষ্ট। বছর পূর্তিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাঁর দেশ সাফল্যের সঙ্গে লড়বে এবং জয়ী হবে। ইউক্রেনে রুশ হামলার বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব কথা বলেন জেলেনস্কি। মাঝে বেশ কয়েকবার আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ঠিকই তবে আদতে তা কোনও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি পরিস্থিতি বদলের ক্ষেত্রে। 
 
আরও পড়ুন -  জল নেই বিদ্যুৎ নেই পর পর ক্ষেপনাস্ত্রের হামলা, ইউক্রেন কি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে?
 
আগের বছর যখন রুশ বাহিনীর হাজার হাজার সৈন্য আচমকা হামলা চালায়, তখন অবশ্য সাময়িকভাবে মনেই হয়েছিল অচিরেই ইউক্রেনের পরাজয় আসন্ন। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর একটি দেশের বিরুদ্ধে এক অসম লড়াইয়ে ইউক্রেন কতদিন টিকতে পারবে, তা নিয়ে অনেকেই ছিলেন সন্দিহান। কিন্তু স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে লড়াই যে কতটা জান কবুল হতে পারে তা দিই একটা বছরে বারবার দেখিয়ে দিয়েছে ইউক্রেন। ভয় পেয়ে এক ছিল জমিও ছাড়েনি তারা। যার ফল স্বরূপ যুদ্ধ এখনও চলছে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, শান্তির গন্তব্য বহু দূরে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নেবে তা এখনও ধোঁয়াশা। 
 
যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই বিরাট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু তারও মধ্যে সবথেকে বেশি যা অবাক করেছে, তা হলো রাশিয়ার মতো এক বিরাট ক্ষমতাধর দেশের সামরিক দুর্বলতা। যুদ্ধে প্রথমদিকে কিছু সাফল্য পেলেও ক্রমশ ইউক্রেনের পাল্টা আঘাতে অনেক এলাকা থেকেই পিছু হটতে বাধ্য হয় পুতিন বাহিনী। যদিও জেদ এখনও ষোলো আনাই বহাল দুই পক্ষের। সাধারণ মানুষের প্রাণ যায় যাক, গদির লড়াইয়ে জয় সুনিশ্চিত করতেই হুংকার দিচ্ছেন তাঁরা। আর এইসবের মধ্যে ক্রমশ ঘোলাটে হচ্ছে পরিস্থিতি। বছর পার করে এসে যুদ্ধ শেষের বার্তার বদলে বরং যুদ্ধের পরিধি আরও বাড়তে পারে ভেবেই জোরালো হচ্ছে আশঙ্কা।
 

More Articles