জল নেই বিদ্যুৎ নেই পর পর ক্ষেপনাস্ত্রের হামলা, ইউক্রেন কি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে?

Ukraine Russia War : ইতিমধ্যে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে প্রায় ৬০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।

শীতের প্রতীক্ষাতেই ছিল রাশিয়া। খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার এমন মোক্ষম অস্ত্র আর কিছুই নেই। চলতি বছরের শুরু থেকেই ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হয়ে যায়। মাঝে কয়েকমাস পরিস্থিতি খানিকটা শিথিল হয়ে পড়লেই পাল্টা আঘাত ফিরিয়ে দিতে থাকে ইউক্রেন। গত কয়েক মাসে ইউক্রেন সেনাদের আক্রমণে দক্ষিণের খেরসন, মাইকোলিভ এবং উত্তর পূর্ব দিকে খারকিভ সহ্য বহু জায়গা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় রাশিয়া। শুধু তাই নয় এই কয়েক মাসে প্রায় ৮০ হাজার রুঢ সেনা মারা গিয়েছেন বলেও জানিয়েছে একটি সমীক্ষা। ফলে ভিতরে ভিতরে আগুন বসে রেখেছিল রাশিয়া। তারা জানতো শীতকাল এলেই জীবনধারণের রশিদ ফুরিয়ে আসবে ইউক্রেনে আর সেই সুযোগ নিয়ে ফিরতি হামলা চালায় রাশিয়া।

আরও পড়ুন - ইউক্রেনকে পরাস্ত করতে কেন শীতের অপেক্ষায় রয়েছে রাশিয়া

গত ১৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে ইউক্রেনের ওপর ড্রোন হামলা চালায় রুশ সেনাবাহিনী। আক্রমণ হবে হয় দেশের ইমারজেন্সি পরিষেবার ওপর। এর আগেও অক্টোবর মাসের শেষ দিকে ইরানের তৈরি ‘শাহিদ-১৩৬ কামিকাজে’ ড্রোন দিয়ে লাগাতার হামলা চালানো হয়েছিল। তার জেরে ইতিমধ্যেই ব্যাহত হয়েছিল বিদ্যুৎ পরিষেবা। এরপর শীত বাড়ায় এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ দিকে এগয়। তার ওপর ফের এই হামলা তাতে ঘৃতাহুতি দেয়। রুশ আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়তেই নাস্তানাবুদ ইউক্রেন। বিপর্যস্ত দেশের বিদ্যুৎ পরিষেবা। অন্ধকারে দিন কাটছে ইউক্রেনবাসীর, ব্যাহত জল পরিষেবাও।

ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের ওপর কৌশল করে হামলা চালাতে থাকে রাশিয়া। তারা আগে থেকেই জানত আমজনতার জীবন ব্যাহত করতে পারলে তা ভিতরে ভিতরে আঘাত করবে দেশের সামগ্রিক ভিতেই। মানুষের মনোবল ভেঙে গেলে লড়াই করার জোর কমে আসবে। তাই জয় সুনিশ্চিত করতে এই পন্থা নেয় রুশ সরকার। জানা গিয়েছে, রাশিয়ার দুটি বিমান ঘাঁটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পাল্টা ফিরিয়ে দিতেই তারা আক্রমণ চালায়। ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিঝিয়া এ ঘটনায় মারা জন দুজন। শুধু তাই নয় অন্ধকারে পর্যবসিত হয় আরও অনেক অনেক শহর। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি বলছে, এ হামলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে একাধিক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। ওডেসায় জল সরবরাহেও বিঘ্ন ঘটেছে।

অন্যদিকে, দক্ষিণের খেরসন শহর থেকে রুশ সেনাবাহিনীকে একপ্রকার সরিয়ে স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্ধিতে মত্ত বাসিন্দারা। অথচ সে শহরেও রয়েছে যুদ্ধের দগদগে ঘা। কোণায় কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে অন্ধকার। এখনও সে শহরে জল নেই, নেই বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাও। কবে যে এ অন্ধকার করবে সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেনি ইউক্রেনের সরকার। ক্রমশই ফুরিয়ে আসছে রসদ। উপরন্তু রাশিয়াও থেমে নেই। এক জায়গা থেকে পিছু হটলে নতুন করে হামলা চালাচ্ছে অন্য জায়গায়। এবং প্রতিবারই হামলা করা হচ্ছে জীবনধারণের প্রয়োজনীয় পরিষেবার ওপরই। একদিকে শীতের দাপট অন্য দিকেই এই বারংবার আক্রমণ ক্রমশ কঠিন পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে ইউক্রেন।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা জানান, ইতিমধ্যে বিভিন্ন শহরে প্রায় ৬০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়া বারবার রণক্ষেত্রে ইউক্রেনের কাছে পরাজিত হয়েছে বলেই এইভাবে হামলা চালানোকে কৌশল করেছে তারা। যাতে ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যায় দেশটি। এই দাপুটে শীতে এভাবেই যদি আরও কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া, তবে হয়তো চিরতরে অন্ধকারের দিকেই এগোবে ইউক্রেন, আশঙ্কা অমূলক নয়।

More Articles