১০০ বছর পর এসে পৌঁছল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের 'রহস্যময়' চিঠি, কী লেখা রয়েছে সেখানে?
100 Years old Letter Britain : কয়েকদিন আগের চিঠি নয় এটি! নয় নয় করে ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে লেখা হয়েছিল এটি।
ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের জমানায় হঠাৎই বাড়ির দরজায় চিঠি চলে আসার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। তবুও এখনও কয়েকজন চিঠিতে লিখে মনের ভাব প্রকাশ করতেই ভালোবাসেন। সেরকমই একটি চিঠি চলে এল ব্রিটেনের একটি বাড়িতে। হঠাৎ করে কে-ই বা চিঠি পাঠাতে যাবে? একটু পরীক্ষা করতেই চক্ষু চড়কগাছ! কয়েকদিন আগের চিঠি নয় এটি! নয় নয় করে ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে লেখা হয়েছিল এটি। তাহলে সেই সময়ের চিঠি এখন চলে এল কী করে? টাইম মেশিন কি আবিষ্কার হয়ে গেল? না কল্পবিজ্ঞানের নতুন কোনও গল্প?
না, এটা কল্পবিজ্ঞান বা কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য নয়। কিন্তু আগাগোড়া শুনে সিনেমার মতোই মনে হবে। সম্প্রতি ব্রিটেনে এমন ঘটনাই ঘটল। ব্রিটিশ নাট্য পরিচালক ফিনলে গ্লেনের সঙ্গেই ঘটল এমন অদ্ভুত ব্যাপার। ঘটনাটি ঠিক কী? কয়েকদিন আগে সাদা খামে মোড়া একটি চিঠি এসে পৌঁছয় ফিনলের কাছে। খামের ওপর লেখা, ‘৬ ফেব্রুয়ারি, ‘১৬’। ২০১৬ সালে কেউ তাঁদের কোনও চিঠি লিখেছিল? সেটা এসে এখন পৌঁছল? প্রথমে তেমনটাই ভেবেছিলেন ফিনলে এবং তাঁর বান্ধবী। কিন্তু চিঠিটি একটু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার পরই ‘ভুল’ ভাঙল। চিঠির ওপরে যে স্ট্যাম্প রয়েছে, সেখানে ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জের ছবি বসানো। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, সেখানে তো সদ্যপ্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবিযুক্ত স্ট্যাম্প থাকার কথা। কারণ, ২০১৬ সালে তিনিই ছিলেন বাকিংহামের সিংহাসনে।
খুঁটিয়ে দেখার পরই অবাক হয়ে গেলেন ফিনলে। ২০১৬ নয়, এটি আসলে ১৯১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির চিঠি! সালটা খেয়াল করুন। ১৯১৬, মানে তখনও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঝড় চলছে পৃথিবী জুড়ে। তাহলে কি সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কোনও দলিল রয়েছে এখানে? সেই ভাবনা নিয়েই ফিনলে যোগাযোগ করেন স্থানীয় সংবাদপত্র নরউড রিভিউয়ের সম্পাদক স্টিফেন অক্সফোর্ডের সঙ্গে। তখনই একটু একটু করে খোলসা হয় চিঠির ‘রহস্য’।
জানা গিয়েছে, চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল কেটি মার্শ নামের এক মহিলাকে। এই কেটি মার্শ ছিলেন ব্রিটেনের তৎকালীন এক স্ট্যাম্প ডিলার অসওয়ার্ল্ড মার্শের স্ত্রী। তাঁরই বান্ধবী ক্রিস্টাবেল মেনেল বাথ থেকে এই চিঠি পাঠিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ক্রিস্টাবেলের বাবা হেনরি মেনেল ছিলেন সেই সময়ের বেশ ধনী এক চা ব্যবসায়ী। বিস্তৃত চিঠিতে লেখা কয়েকটি লাইন – “আমি যা করেছি, তার জন্য অত্যন্ত লজ্জিত। যেখানে আছি সেখানে অত্যন্ত ঠাণ্ডার মধ্যে, কষ্টে রয়েছি।” ঠিক কী কারণে এমন কথা, কেন এই লজ্জার প্রসঙ্গ, সেটা এখনও অজানাই।
কিন্তু এত দেরিতে কেন এই চিঠি সামনে এল? ১০০ বছরেরও বেশি সময়ের পর এসে পৌঁছল এটি, সময়টা নেহাত কম নয়। তবে এই না পৌঁছনোর কারণ হিসেবে বেশকিছু সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। তার মধ্যে একটির দিকেই ঝুঁকেছেন নেটিজেনরা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সিডেনহ্যাম শর্টিং অফিস থেকে এই চিঠিগুলি নির্দিষ্ট ঠিকানায় চলে যেত। সেখানেই হয়তো ছোট্ট এই চিঠিটি হারিয়ে গিয়েছিল। কিংবা সেখানকার কর্মীদের চোখে পড়েনি এটি। তারপর অফিসটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন ফের সেই শর্টিং অফিসটি খোলা হয়েছে। তারপরই হয়তো এই চিঠিটি খুঁজে পেয়ে নির্দিষ্ট ‘ঠিকানা’য় পাঠিয়ে দেন কর্মীরা। কিন্তু যাঁদের পাঠানোর কথা ছিল, তাঁরা বহু আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আর কখনও কেটির কাছে তাঁর বান্ধবীর কোনও চিঠি পৌঁছেছিল কিনা, জানা নেই। কিন্তু এখন সেই চিঠিই পুরনো সময়ের দলিল হয়ে থাকল।