সময়সীমা পেরনোর আধঘণ্টা আগে আত্মসমর্পণ, মধ্যরাতে জেলে ফিরল বিলকিস-ধর্ষকেরা

Bilkis Bano case: বছর দুয়েক আগে কোনও এক স্বাধীনতা দিবসের দিন মুক্তি পায় বিলকিস বানোর ধর্ষকেরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে অবশেষে আত্মসমর্পণ করল বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডের সেই ১১ জন অপরাধী।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে অবশেষে আত্মসমর্পণ করল বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডের ১১ জন অপরাধী। বছর দুয়েক আগে কোনও এক স্বাধীনতা দিবসের দিন মুক্তি পায় বিলকিস বানোর ধর্ষকেরা। গুজরাট সরকার মুক্তি দিয়েছিল তাদের। ওই বছরই সেপ্টেম্বরে গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বিলকিস। সেই মামলায় অবশেষে জেলে ফিরল অপরাধীরা। রবিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ গোধরা সাব জেলে গিয়ে ধরা দেয় তারা। 

বিলকিস বানো। গোধরা কাণ্ডে সাম্প্রদায়িক অশান্তি শুরু হল যখন পরিবারের সঙ্গে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিলেন বিলকিস। তিনি তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সেসময় কাস্তে, তলোয়ার, লাঠি নিয়ে তাঁর উপর চড়াও হয়েছিল কুড়ি-তিরিশজনের একটি দল। নৃশংস ভাবে গণধর্ষণ করা হয়েছিল বিলকিসকে। পরিবারের চোদ্দ জনকে কুপিয়ে খুন করা হয় তাঁর চোখের সামনেই। তার মধ্যে ছিল বিলকিসের শিশু সন্তানও।

আরও পড়ুন: ঠিক কী ঘটেছিল বিলকিস বানোর সঙ্গে? মোদির মসনদ টলাতে পারবে ২২ বছরের লড়াই?

সেই ভয়ঙ্কর ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। অথচ প্রশাসন রাজি ছিল না প্রাথমিক ভাবে অভিযোগটুকু নিতে। অভিযুক্ত হিসেবে গ্রামের বারো জনকে চিহ্নিত করেছিলেন বিলকিস। কিন্তু এই মামলাকে ধামাচাপা দেওয়ার নানা ভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। কখনও এফআইআর-এ বিলকিসের ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাটি লেখে না পুলিশ। তো কখনও আবার অপরাধীদের খোঁজ মেলেনি বলে মামলা বন্ধ করার আবেদন জানায় পুলিশ। তবে শেষপর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়ে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়েছিল বিলকিস। সেই আর্জি শুনতে রাজি হয় সুপ্রিম কোর্ট। খারিজ হয়ে যায় পুলিশর তদন্ত রিপোর্ট। একপরে সিবিআই তদন্ত করে কুড়ি জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। যার মধ্যে ৬ জন পুলিশ অফিসার ও দুই চিকিৎসকেরও নাম। এর পর জল গড়িয়েছে অনেক দূর। অবশেষে ২০০৮ সালে ৬ বছর পরে সুবিচার পান বিলকিস। বিলকিস বানোর ধর্ষণে ও তাঁর পরিবারকে খুনের ঘটনায় ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

না, তার পরেও বাদী-বিবাদী দুই পক্ষেরই আদালত দৌড়োদৌড়ি চলেছে অনেক দূর। বিলকিস বানোর মামলার সুরাহা যথাযথ ভাবে হয়নি। তার মধ্যেই আবার ২০২২ সালে আসে গুজরাট সরকারের দোষীমুক্তির সিদ্ধান্ত। সেই মামলায় গত ৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, ফের জেলে ফিরতে হবে অপরাধীদের। রবিবার রাতেই গুজরাটের পঞ্চমহল জেলায় গোধরা সাব-জেলে গিয়ে ধরা দেয় তারা।

আসলে আত্মসমর্পণের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। রবিবারই শেষ হচ্ছিল সেই সময়। আর রবিবার সাড়ে ১১টা নাগাদ দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি করে জেলের সামনে উপস্থিত হয় বিলকিস বানো মামলার ১১ জন অপরাধী। গত ৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, দোষী ১১ জনকেই দু-সপ্তাহের মধ্যে জেলে ফিরতে হবে। সেই রায় শুনে অপরাধীদের কয়েকজন আবার আরও একটু সময় চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানান। কেউ ছেলের বিয়ের কারণ দেখিয়েছেন, কেউ বা ফসল কাটতে যাওয়ার জন্য সময় চেয়েছেন। যদিও তাদের সেই সব দাবিই উড়িয়ে দিয়েছে আদালত। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাড়তি সময় দেওয়া সম্ভব নয়। নির্ধারিত দিনেই জেলে ফিরতে হবে।

আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, বিলকিসের ধর্ষকদের ফিরতেই হবে জেলে! কেন?

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। ফলে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ঠিক আধাঘণ্টা আগে জেলখানা চত্বরে এসে হাজির হল বিলকিস ধর্ষণ কাণ্ডে দোষীসাব্যস্ত ১১ অপরাধী। আপাতত তাদের ঠিকানা ফের গোধরা জেলের শ্রীঘর। অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন হয়ে গেল সোমবার। যার পুরোধায় যে বিজেপি সরকার, সে কথা তো আর নতুন করে বলার নয়। আর তার ঠিক আগেই ফের জেলে ফিরতে হল বিলকিস কাণ্ডের দোষীদের। যাদের বছর দুয়েক আগে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল গুজরাটের বিজেপি সরকার। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে রামরাজ্য গড়তে সফল হয়েছে বিজেপি। কিন্তু বিলকিস গণধর্ষকদের ঘাড় থেকে দোষীর তকমা সরানোর চেষ্টা করেও সফল হল না গুজরাটের বিজেপি সরকার। আর অযোধ্যার সাফল্য উদযাপনের ঠিক আগের রাতেই যেন সেই হারের গায়ে যেন লেগে গেল সিলমোহরখানা।

More Articles