১০ বছরেই সিরিয়াল কিলার! কীভাবে একের পর এক বীভৎস খুন করল একরত্তি?

Young Serial Killer: ১১ তম জন্মদিনের ঠিক আগের দিন মেরি ইংল্যান্ডের স্কটসউডে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে মার্টিন ব্রাউনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

সাল ১৯৬৮। মেরি বেলের বয়স তখন মাত্র ১০। ইংল্যান্ডের নিউক্যাসলের বাসিন্দা সে। ছোট্ট মেরি বেল প্রথম খুন করে ওই ১০ বছর বয়সেই। ৪ বছর বয়সী মার্টিন ব্রাউনকে গলা টিপে মেরে ফেলেছিল মেরি। শুধু শ্বাসরোধ করে হত্যাই না। মার্টিনের পরিবারের জন্য ভয়ঙ্কর এক চিঠি লিখে যায় মেরি। স্বীকার করে, কীভাবে সে গলা টিপে ওইটুকু শিশুকে খুন করে ফেলেছে। এই ঘটনার ঠিক দুই মাস পর, ৩ বছর বয়সি ব্রায়ান হাওকে খুন করে মেরি বেল। এই দুই খুনের আগে, মেরি আরও কয়েকটি শিশুকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। আর প্রতিবার চিঠিতে লিখে রেখেছিল এমন খুন সে আরও করতে চায়। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মেরি বেল। মেরি মাত্র দশ বছরের শিশু!

এত অল্প বয়সে এই ভয়াবহ অপরাধ করা সত্ত্বেও মেরি বেল ২৩ বছর বয়সে জেল থেকে মুক্তি পায়। ১২ বছরের সাজা ভোগ করার পর এখন সে স্বাধীন। কিন্তু দশ বছরের এক শিশু এত ছোটবেলাতেই সিরিয়াল কিলার হয়ে উঠল কীভাবে? এর শিকড় লুকিয়ে তাঁর জন্মেই, বেড়ে ওঠাতেই।

আরও পড়ুন- কুমিরকে ভোগ দিয়ে লাশ লোপাট! ভারতীয় সিরিয়াল কিলার চিকিৎসকের গল্প হার মানাবে ক্রাইম থ্রিলারকে

বেটি ম্যাকক্রিকেট মেরি বেলের মা। ১৬ বছর বয়সি যৌনকর্মীর কোলে যখন মেরি আসে, মেয়ের প্রতি স্নেহ-মমতা তেমন ছিল না তাঁর। জন্মের পর থেকেই মেয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বেটি, মেরি এই পৃথিবীতে এসে অবহেলাই পেয়েছে কেবল। 'বিজনেস ট্রিপে' বেটি ঘন ঘন বেরিয়ে পড়তেন। মায়ের এই সাময়িক অনুপস্থিতিই ছিল মেরির জীবনে একমাত্র খোলা আকাশ। এই সময়ে কোনও অপমান নেই, মারধর নেই, দুর্ব্যবহার নেই, মেরি তখন মুক্ত।

বেটি মেরিকে একজনকে দত্তক দিতে চেষ্টাও করেছিলেন কিন্তু সফল হননি। হামেশাই মেরির সঙ্গে রহস্যজনক দুর্ঘটনা ঘটত। অনেকেই বলেন, এই দুর্ঘটনাগুলি পরিকল্পিত। বেটিই ছিলেন নেপথ্যে। অনেকে আবার বলেন বিষয়টি মুনচাউসেন সিন্ড্রোম। মুনচাউসেন সিন্ড্রোম ফ্যাক্টিটিস ডিসঅর্ডার নামেও পরিচিত। এটি একটি বিরল মানসিক ব্যাধি যেখানে একজন ব্যক্তি অসুস্থ হওয়ার ভান করে। মিথ্যে উপসর্গ বলে, নিজেকে অসুস্থ দেখায় বা ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। মায়ের থেকে পাওয়া দুর্ব্যবহারের কারণেই মেরি এমন করত বলেও মনে করেন অনেকে।

আরও পড়ুন- খুন করে সঙ্গম, মৃতের মাংস খাওয়া, বীভৎস সিরিয়াল কিলার গড়ে ওঠে কীভাবে?

মেরির জীবনের এই অশান্তিই তাঁর হিংসাত্মক আচরণের কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মাত্র ১০ বছর বয়সেই মেরির মধ্যে জটিল সমস্ত আচরণ দেখা যায়। প্রথম খুন করার কয়েক সপ্তাহে মেরি ক্রমেই অদ্ভুত আচরণ করতে থাকে। ১৯৬৮ সালের ১১ মে, মেরি এক ৩ বছরের শিশুর সঙ্গে খেলছিল। এই শিশুটি পড়ে গিয়ে একটি গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়। বাবা-মা মনে করেন এই দুর্ঘটনার নেপথ্যে আছে মেরি। পরের দিন, মেরি তিনটি বাচ্চা মেয়েকে গলা টিপে মারার চেষ্টা করে। পুলিশ আসে, সতর্ক করে কিন্তু কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি মেরির বিরুদ্ধে।

২৫ মে, ১১ তম জন্মদিনের ঠিক আগের দিন মেরি ইংল্যান্ডের স্কটসউডে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে মার্টিন ব্রাউনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে মেরি নিজের এক বন্ধু নর্মা বেলের সঙ্গে ঘটনাস্থলে ফিরেও আসে। এসে দেখে দুই স্থানীয় ছেলে মৃতদেহটি খুঁজে বের করেছে। মার্টিনের মৃত্যুর পর মেরি তার বাড়িতেও যায়। কফিনের মধ্যে তার মৃতদেহ দেখতে চায়। মার্টিনের মৃত্যুর জন্য দায় স্বীকার করে এবং ভবিষ্যতে আরও খুনের হুমকি দিয়ে চিঠিও লিখে রাখে।

কয়েক দিন পরে, মেরি এবং নর্মাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও ছেড়ে দেয়। তবে এর কিছুকাল পরে আরেক শিশু ব্রায়ান হাওকে ৩১ জুলাই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মেরি এবং নর্মা তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে।

বিচারের সময় আদালত বলে, মেরি বেলের এই খুন 'হত্যার আনন্দ এবং উত্তেজনার মাথায়' করা। যার ফলে সাইকোপ্যাথিক সমস্যার কারণে মেরিকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। নর্মা বেল খালাস পায়।

More Articles