যৌনাঙ্গে ক্ষত, শরীরের ২৪ জায়গায় চোট! নারকীয় অত্যাচারের প্রমাণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে
R G Kar Doctor Rape and Murder: এখানেই শেষ নয়, অত্যাচারের খতিয়ান আরও দীর্ঘ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতার কোথায় কী ভাবে ক্ষত হয়েছিল।
আরজি করে চিকিৎসককে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল দেশ। দেশের সীমানা পেরিয়ে সেই আঁচ ছড়িয়ে গিয়েছে অন্যান্য দেশেও। আরজি করের নির্যাতিতার সুবিচারের দাবিতে রবিবার দিনভর উত্তাল ছিল কলকাতা। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডুরান্ড কাপের ডার্বি ম্যাচ বাতিল করার পরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সামনে জড়ো হন তিন ফুটবল ক্লাবের সমর্থকেরা। 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' স্লোগানে ভরে ওঠে আকাশ-বাতাস। এদিন বিকেলেই তিলোত্তমার সুবিচারের দাবিতে টেকনিশিয়ান স্টুডিও থেকে মিছিল করেন তারকারা। খান্না থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত আসে সেই মিছিল। এসবের মধ্যেই সোমবার সামনে এল আরজিকরের নির্যাতিত চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। যা কার্যত শিউরে দিয়েছে গোটা দেশকে।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের বক্ষ বিভাগের সেমিনার রুমের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় নির্যাতিতার ক্ষতবিক্ষত দেহ। সেই ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দেন জুনিয়র ডাক্তার থেকে শুরু করে ডাক্তারির পড়ুয়া, স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালেই। যার জেরে অসুবিধার মুখে পড়েন অজস্র রোগী। ইতিমধ্যেই আরজি কর কাণ্ডে সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলিন্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে চেস্ট ডিপার্টমেন্টে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছিল ঘটনার দিন। এরই মধ্যে ইনস্ক্রিপ্টের হাতে এসেছে নিহত চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।
আরও পড়ুন: আরজিকর কাণ্ড: কেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ সুপ্রিম কোর্টের?
সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত রয়েছে নির্যাতিতার। এমনকী এন্টি মর্টেনামে দেখা গিয়েছে, বিপুল পরিমাণ রক্তপাতে হাইমেন পর্যন্ত ফেটে যায় তাঁর। চিকিৎসকের বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসকের শরীরের মোট ২৪টি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টে বলা হয়েছে। মাথা, গাল, ঠোঁট, নাক, ডান চোয়াল, চিবুক, গলা, দুই কাঁধ, বাঁ হাঁটু, গোড়ালি এবং যৌনাঙ্গ বাদ যায়নি কিছুই। থাইরয়েড হাড়ে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। রক্ত জমাট বেঁধে ছিল ফুসফুসেও। পুলিশ ওই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর জানা যায়, খুন-ধর্ষণের আগে মারধরে প্রবল বল প্রয়োগ করা হয়েছিল নির্যাতিতার উপর। তারই ইঙ্গিত মিলেছে ময়না তদন্তের রিপোর্টে। কোন আঘাত কীভাবে হয়েছে, তারও ইঙ্গিত রয়েছে রিপোর্টে। নিজেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন নির্যাতিতা। ধস্তাধস্তি হয়েছিল। সেই বাধা দেওয়ারও প্রমাণও মিলেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে।
এখানেই শেষ নয়, অত্যাচারের খতিয়ান আরও দীর্ঘ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, নির্যাতিতার কোথায় কী ভাবে ক্ষত হয়েছিল। চোখের ক্ষত তৈরি হয়েছে ভাঙা চশমার কাচ থেকে। ধর্ষকের সঙ্গে প্রবল ধস্তাধস্তিতে চশমার কাচ ভেঙে যায় তাঁর। সেই কাচ ঢুকে যায় চোখে, রক্তপাত হয়। তার সঙ্গে রয়েছে মাথাতেও আঘাত। ধস্তাধস্তির সময় চিৎকার রুখতে নির্যাতিতার মুখ চেপে দেওয়ালে ঠুকে দেওয়া হয়েছিল বলেও জানা গিয়েছে তদন্ত রিপোর্ট থেকে। শ্বাসরোধ করতে গলা টেপা হয়। শ্বাসরোধের কারণেই মৃত্যু বলে মনে করা হচ্ছে। ভেঙে যায় থাইরয়েড কার্টিলেজ। চিৎকার রুখতে মুখ ও গলা ক্রমাগত টিপে ধরা হয়েছিল।
ইতিমধ্য়েই মৃতদেহ থেকে পাওয়া ডিএনএ স্যাম্পলিং স্টেট ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। জানা গিয়েছিল, মৃতার শরীরের এন্ডোসারভিকাল ক্যানেলের ভিতরে সাদা পুরু সান্দ্র তরলের উপস্থিতি মেলে। যা-সহ যোনীর ওজন ছিল ১৫১ গ্রামের মতো। এই তরলটিতে আসলে কী কী রয়েছে, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যেই ওই দেহরস পাঠানো হয়েছে স্টেট ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষার জন্য। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলছে, মৃতার লিভারের ওজন ছিল ১১৩৪ গ্রাম, দুই কিডনি ৮২ ও ৮৮ গ্রাম। তাঁর শরীরে পাওয়া ওই দেহরসের ধৃতের ডিএনএ ম্যাপিং করে দেখা হবে বলে বিশেষ সূত্রের খবর। সন্দেহভাজনের সঙ্গে যদি এই দেহরসে পাওয়া ডিএনএ নমুনা মিলেছে যায়, সেক্ষেত্রে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাবে বলেই মনে করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন:বৃষ্টিমাথায় রাস্তায় টলিপাড়া, মিছিল থেকে যে প্রশ্ন তুলছেন পরম-শাশ্বতরা
অনেকেই মৃতার শরীরে পাওয়া এই দেহরসের পরিমাণ শুনে গণধর্ষণের আশঙ্কা উস্কে দিয়েছিলেন। এমনকী এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলেও মনে করেছেন কেউ কেউ। সেই দাবি আগেই উড়িয়ে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল জানিয়েছিলেন, এটা ভুয়ো তথ্য। মিডিয়ায় ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। কারণ এই দেহরস মানে যে গোটাটাই সিমেন বা বীর্য, এমনটা না-ও হতে পারে। তবে ওই চিকিৎসকের উপর যে নারকীয় যৌন অত্যাচার হয়েছে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে। আপাতত ওই ডিএনএ ম্যাপিং রিপোর্ট ও স্টেট ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো নমুনার রিপোর্টের জন্যই অপেক্ষা করছেন গোয়েন্দারা। আর তা মিললেই একটু দিশা দেখা যাবে এই মামলায়, তেমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।