এক হাঁড়ি, এক মন! এক ছাদের তলায় যে ভাবে গড়ে উঠেছে ১৯৯ জনের যৌথ পরিবার
Ziona Chana house: সেই বাড়িতে নয় নয় করে একশোটি ঘর তো রয়েইছে। সেই বাড়িতেই এক ছাদের তলায় থাকেন এক পরিবারের ১৯৯ জন সদস্য।
একান্নবর্তী পরিবারের ধারণা যেখানে ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। এক হেঁশেল এক হাঁড়ি, সকলে মিলেমিশে থাকা-খাওয়ার ভাবনা এখন দূরতর দ্বীপ। দু-একটা একান্নবর্তী পরিবার খুঁজলে অবশ্য এখনও মিলবে, তবে তা হাতে গোনা। তবে এই পাল্টা হাওয়ার স্রোতে গা না ভাসিয়ে বরং সেই পুরনো ধারণাই আঁকড়ে বসে আছেন মিজোরামের এই পরিবারটি। না, শুধু আঁকড়ে ধরে বসে আছেন, তা-ই নয়। ছোটখাটো একটা গ্রামে যত মানুষ বাস করেন, সেই সংখ্যক মানুষকে এক ছাদের তলায় বেঁধে রেখেছে পরিবারের অমোঘ এক টান।
১৯৯ জন, একসঙ্গে এক ছাদের তলায়। না, সংখ্যাটা ডবল সেঞ্চুরিই ছিল এতদিন। তবে পরিবারের কর্তা জিওয়ানা চানা ২০২১ সালে মারা যান। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা ৭৬ বছর বয়সে প্রাণ কাড়ে জিওয়ানার। পরিবার দুশো থেকে ১৯৯ হয় বটে, তবে পারিবারিক ভিট টলেনি। জিওয়ানা একা দায়িত্ব নিয়ে পরিবারকে বৃহৎ থেকে বৃহত্তর করে গিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর তৈরি করা বৃহত্তর পরিবার সেই ধারণাকে ধারণ করে চলেছে।
আরও পড়ুন: বর্ধমান রাজপরিবার কাহিনি
জীবদ্দশায় মোট ৩৮টি বিয়ে করেছিলেন জিওয়ানা। জন্ম দিয়েছে ৮৯টি সন্তানের। না, সন্তানের ক্ষেত্রে তিনি একশোর কাঁটা ছুঁতে পারেননি বটে। তবে পরিবারতে ডবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি ঠিকই। ৮৯টি সন্তানের বিয়ে হয়েছে যথাসময়ে। বাড়ির জনসংখ্যা বেড়েছে। কালের নিয়মে তাঁদের সন্তানরা জন্মেছেন। আরও বেড়েছে জনসংখ্যা। সেভাবেই ক্রমে এক থেকে আটত্রিশ, আটত্রিশ থেকে একশো আঠাশ হয়ে দু'শোয় পৌঁছয় বাড়ির বাসিন্দা সংখ্যা। আশ্চর্য ক্ষমতায় পরিবারের প্রত্যেককে এক ছাদের তলায় বেঁধে রাখতে সফল হয়েছিলেন জিওয়ানা। তাঁর মৃত্যুর পরেও সেই পরম্পরা অক্ষুন্ন রেখেছে তাঁর পরিবার।
ভারতের উত্তরপূর্বের ছোট্ট রাজ্য মিজোরাম। সেই মিজোরামের বকতাওয়াং গ্রামেই রয়েছে চার তলা একটি বাড়ি। সেই বাড়িতে নয় নয় করে একশোটি ঘর তো রয়েইছে। সেই বাড়িতেই এক ছাদের তলায় থাকেন এক পরিবারের ১৯৯ জন সদস্য। দিনে দিনে মিজোরামে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য এক অবশ্য দ্রষ্টব্য জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই বাড়ি। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ যান সেই বাড়ি চাক্ষুষ করতে, যেখানে বিবাদহীন ভাবে এক ছাদের তলায় বসবাস করেন ১৯৯ জন মানুষ।
জানা যায়, চানা সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন জিওয়ানা। যে সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জিওয়ানার বাবা স্বয়ং। সেই সম্প্রদায়ের মূল মন্ত্রই নাকি শতাধিক সদস্যের পরিবার। ১৭ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন জিওয়ানা। তার পর আর থামেননি। এক বছর তো রেকর্ড করেন জিওয়ানা শুধু বিয়ে করেই। সে বছর মোট দশটি বিয়ে করেন তিনি। একই বছরে দশটি বিয়ের রেকর্ড আর কারওর আদৌ রয়েছে কিনা জানা নেই।
আরও পড়ুন:কূটকচালির পাঁক নয়, মধ্যবিত্ত জীবনে ম্যাজিক ঘটিয়েছিল ভারতের প্রথম সিরিয়াল ‘হামলোগ’!
এই দুশো মানুষের রান্না হয় একই হাঁড়িতে। বাড়ির মধ্যিখানে কয়েছে বিরাট এক ডাইনিং হল। যেখানে খাওয়ার সময় হলেই জড়ো হন গোটা পরিবারের লোক। ইতিমধ্যেই বহু তথ্য়চিত্র তৈরি হয়েছে জিওয়ানা ও তার পরিবারকে নিয়ে। তাদের বাড়ির আশপাশে যে শুধুই পর্যটকদের ভিড় তা নয়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে তাঁদের ওই বাড়িতে ভিড় জমান। এমন একটি যৌথ পরিবার যে আজকালকার দুনিয়ায় থাকতে পারে, তা বিশ্বাস করা কঠিন। ২০১১ সালে একটি সাক্ষাৎকারে জিওয়ান জানিয়েছিলেন, তাঁদের এই পারিবারিক বৃদ্ধি তিনি থামতে দিতে চান না। আগামী দিনে আরও ফুলেফেঁপে উঠবে, আকারে-বহরে আরও বৃদ্ধি হবে, সেটাই কামনা তাঁর। জিওয়ানের বংশধরেরাও কি পিতৃপুরুষের সেই স্বপ্নপূরণ করবেন, রক্ষা করবেন চানা সম্প্রদায়ের ধারা, সেটাই প্রশ্ন।