খালিস্তানি হত্যায় সত্যিই জড়িয়ে ভারত? কেন ৬ কূটনীতিককে বহিষ্কার করল কানাডা?
India Canada Conflict: মার্কিন এবং কানাডিয়ান কর্মকর্তারা বলছেন, নিজ্জর হত্যাকাণ্ড এবং পান্নুনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র একই গোষ্ঠীর কর্মকর্তাদের কাজ ছিল।
২০২৩ সালে কানাডায় একজন খালিস্তানপন্থী কর্মীকে হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্টরা জড়িত ছিল বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগকে ঘিরে চরম কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব দুই দেশেরই। অবস্থা এমনই যে শীর্ষ দূত সহ দুই দেশই একে অন্যের ছয়জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, সরকার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার স্টুয়ার্ট হুইলার সহ ছয় কানাডিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে নাকি এই শীর্ষ আধিকারিকরা জড়িয়েছিলেন। অন্যদিকে কানাডার বিদেশ মন্ত্রক ঘোষণা করেছে, ছয় ভারতীয় কূটনীতিক এবং কনস্যুলার কর্মকর্তাদের বহিষ্কার করেছে তারা কারণ ভারত ফেডারেল কানাডিয়ান পুলিশের তদন্তে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেছে। কানাডা বলছে, বহিষ্কারের ঘটনার পর, ভারত ঘোষণা করেছে যে তারা নিজেদের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করবে।
ভারত বলছে, কোন প্রমাণের ভিত্তিতে কানাডা এই দাবি করছে যে ভারতীয় কর্মকর্তারা নিজ্জরের হত্যার সঙ্গে যুক্ত? ভারত সরকার বলছে, এই অভিযোগগুলি অযৌক্তিক। ভোটব্যাঙ্ককে কেন্দ্র করে ট্রুডো সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা মাত্র। ভারত সরকারের অনুরোধ সত্ত্বেও কানাডা সরকার ভারত সরকারকে এই বিষয়ে কোনও প্রমাণ দেখায়নি। কোনও তথ্য ছাড়াই কানাডা এমন দাবি করছে বলে অভিযোগ ভারতের।
আরও পড়ুন- কানাডার হিন্দু ভারতীয়দের হুমকি, কে এই গুরপতওয়ান্ত সিং পুন্নুন?
গত বছরের সেপ্টেম্বরে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সংসদে বলেছিলেন, তাঁর দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির কাছে গোয়েন্দাদের দেওয়া 'বিশ্বাসযোগ্য' তথ্য রয়েছে যে নিজ্জর হত্যার পিছনে ভারত সরকারের হাত ছিল। কানাডিয়ান কর্মকর্তারা বলছেন, যে ছয়জন ভারতীয় কূটনীতিকে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিস্তারিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে সরাসরি জড়িত ছিলেন। পরে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হয় হুমকি দেওয়া হয়েছে বা হত্যা করা হয়েছে।
ট্রুডোর অভিযোগের কয়েক সপ্তাহ পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তা এবং একজন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নাগরিক গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে। পান্নুন খালিস্তানের পক্ষের একজন আইনজীবী এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য ভারতে 'ওয়ান্টেড' অপরাধী। নিখিল গুপ্তা এখন মার্কিন হেফাজতে থাকলেও তাঁর বিচার শুরু হয়নি। অন্যদিকে, পান্নুন গত মাসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল সহ বেশ কয়েকজন ভারতীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছেন। এই কারণেই সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের জন্য নিউইয়র্ক সফরে গেলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিনিধি দলের বাইরে রাখা হয়েছিল অজিত ডোভালকে। মার্কিন এবং কানাডিয়ান কর্মকর্তারা বলছেন, নিজ্জর হত্যাকাণ্ড এবং পান্নুনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র একই গোষ্ঠীর কর্মকর্তাদের কাজ ছিল।
গত বছরের শেষের দিকে নিজ্জর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কূটনৈতিক বিরোধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ভারত বলে এসেছে যে ভারতের রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে কানাডা। MEA সরাসরি ট্রুডোকে ভারতের 'শত্রু' বলে অভিযুক্ত করেছে। “ভারতের প্রতি প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর শত্রুতা বহুদিন ধরেই প্রমাণিত। ২০১৮ সালে তাঁর ভারত সফরের লক্ষ্য ছিল এক বিশেষ ভোটব্যাঙ্কের সমর্থন অর্জন। তাঁর মন্ত্রিসভায় এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যারা প্রকাশ্যে ভারত সম্পর্কিত চরমপন্থী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী এজেন্ডার সঙ্গে যুক্ত। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাঁর নগ্ন হস্তক্ষেপ দেখিয়েছিল যে তিনি এই বিষয়ে কতদূর যেতে প্রস্তুত," এক বিবৃতিতে বলেছে MEA।
আরও পড়ুন- কানাডাতেই কেন আশ্রয় নিলেন শিখেরা?
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ট্রুডোর সরকার এমন একটি রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভরশীল ছিল, যার নেতা প্রকাশ্যর ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী মতাদর্শকে সমর্থন করেন। এখানে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং তার নেতা জগমিত সিংকেই উল্লেখ করা হয়েছে। এনডিপির ২৫টি আসন রয়েছে এবং এর সমর্থনেই ট্রুডোর সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার পেয়েছে কিন্তু গত মাসেই জগমিত সিং ঘোষণা করেন যে এনডিপি ট্রুডোর প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করছে।
গত বছর, ভারত ৪১ জন কানাডিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল। কানাডিয়ানদের জন্য সমস্ত ভিসা পরিষেবা বন্ধ দেয় ভারত। দুই দেশের অবস্থা তিক্ত থেকে তিক্ততর হচ্ছে। খালিস্তানপন্থাকে ঘিরে কানাডার মতো দেশের সঙ্গে, শত্রুতা বাড়িয়ে বিপদ বাড়াচ্ছে কি দেশ?