IAS হতে গিয়ে ভেসে গেলেন ৩ পড়ুয়া! কোচিং সেন্টারে বন্যায় মর্মান্তিক মৃত্যুতে গাফিলতি কার?
Delhi IAS coaching centre deaths: শনিবার রাতে ভারী বৃষ্টি হয় দিল্লিতে। সেই সময় রাউ'জ আইএএস স্টাডি সার্কেলের বেসমেন্টে একটি লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করছিলেন তিন সিভিল সার্ভিস পড়ুয়া
মর্মান্তিক! শিউরে ওঠার মতোই ঘটনা। আইএএস হতে চেয়েছিলেন পড়ুয়ারা, স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় পাস করে জীবন গড়বেন, দেশ গড়বেন। অদ্ভুত মৃত্যু এসে সমস্ত স্বপ্ন ভাসিয়ে দিল জলে। কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে বন্যা হয়ে মারা গেলেন তিন আইএএস পড়ুয়া। দিল্লির একটি আইএএস কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে হঠাৎ করে প্রবল বর্ষণে বন্যা নামে। তিন পড়ুয়ার প্রাণ যায়। এই ঘটনার পরে দিল্লির পৌর কর্পোরেশন পুরনো রাজিন্দর নগর এলাকায় ১৩ টি কোচিং সেন্টার সিল করে দিয়েছে। এই প্রতিটি কোচিং সেন্টারই তৈরি হয়েছে নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘন করে। দিল্লির মেয়র শেলি ওবেরয় জানিয়েছেন, কর্পোরেশনের একটি দল এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারে হানা দিয়ে দেখে, বেসমেন্টে দাপিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছিল বহু সেন্টার। শুধু রাজিন্দর নগরে নয়, প্রয়োজনে পুরো দিল্লিজুড়ে বেসমেন্টে চালিয়ে যাওয়া এই ভয়াবহ ব্যবসা বন্ধের পথে হাঁটবে দিল্লি কর্পোরেশন। কিন্তু কীভাবে ঘটল এই মর্মান্তিক ঘটনা?
শনিবার রাতে ভারী বৃষ্টি হয় দিল্লিতে। সেই সময় রাউ'জ আইএএস স্টাডি সার্কেলের বেসমেন্টে একটি লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করছিলেন তিনজন সিভিল সার্ভিস পড়ুয়া, দু'জন মহিলা এবং একজন পুরুষ। প্রবল বৃষ্টিতে জলে আটকে পড়ে মারা যান তারা। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই কোচিং সেন্টারের বা ওই সেন্টারের উল্টোদিকের রাস্তার কোনও সঠিক নিকাশী ব্যবস্থাই ছিল না। শুধু তাই নয়, কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে লাইব্রেরি চালানোর কোনও অনুমতি ছিল না। রাউ'জ আইএএস স্টাডি সার্কেলের কোচিং সেন্টারে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনার পিছনে কোনও পৌর আধিকারিকও জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।
গত বছর, মুখার্জি নগরের একটি আইএএস কোচিং ইনস্টিটিউটে আগুন লেগে যায়। তারপর বিধি না মেনে তৈরি হওয়া এই বাড়িঘর, কোচিং সেন্টারের একটি সমীক্ষা শুরু করা হয়েছিল। অভিযোগ, সেই কাজটি সম্পূর্ণ হয়নি। মাঝপথেই সেই সমীক্ষা বন্ধ করে দেয় কর্পোরেশন। এই বছরের মে মাসে, দিল্লি হাইকোর্ট এমসিডি এবং দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে আগুন লাগার সুরক্ষা বিধি লঙ্ঘন করে তৈরি হওয়া কোচিং সেন্টারগুলি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল।
গত ২৭ জুলাই দিল্লির পুরনো রাজিন্দর নগর অঞ্চলে রাউ'জ আইএএস স্টাডি সার্কেলে বেসমেন্টের বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন তানিয়া সোনি (২৫), শ্রেয়া যাদব (২৫) এবং নবীন ডেলভিন (২৮)। ওই দিনের দু'টি ভিডিওতে দেখা গেছে, কীভাবে কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে যায় বাইরের রাস্তায় জমা বিপুল জল। লোহার গেটও সেই বিপুল জলকে ঠেকাতে পারেনি। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কোচিং সেন্টারের পড়ুয়ারা প্রাণ বাঁচাতে ছুটে আসছেন উপরে। সকলে আসতে পারেননি। প্রবল জলে আটকে যান ওই তিন পড়ুয়া।
রবিবার দিল্লির একটি আদালত ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে রাউ'জ আইএএস স্টাডি সার্কেলের মালিক অভিষেক গুপ্তা এবং কোআর্ডিনেটর দেশপাল সিংকে।
কোন কোন সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হলো?
আইএএস গুরুকুল
চাহাল আকাডেমি
প্লুটাস আকাডেমি
সাই ট্রেডিং
আইএএস সেতু
টপার'স আকাডেমি
দৈনিক সংবাদ
সিভিল'স ডেইলি আইএএস
ক্যারিয়ার পাওয়ার
৯৯ নোটস
বিদ্যা গুরু
গাইডেন্স আইএএস
ইজি ফর আইএএস
রাউ'জ আইএএস কোচিং সেন্টারে বন্যায় এই তিন পড়ুয়ার মৃত্যুর ঠিক এক মাস আগেই কোচিং সেন্টারগুলির বেসমেন্ট অবৈধভাবে লাইব্রেরি ও স্টাডি রুম চালানোর বিষয়ে দিল্লির মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক আইএএস পড়ুয়াই।
ওই পড়ুয়ার নাম কিশোর সিং কুশওয়াহ। গত ২৬ জুন পুরনো রাজিন্দর নগর এবং দক্ষিণ প্যাটেল নগর অঞ্চলে অবৈধভাবে পরিচালিত কোচিং ক্লাস এবং বেসমেন্টে লাইব্রেরির জন্য বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের পোর্টালে যে অভিযোগ জানানোর জায়গাটি আছে, সেখানে তিনি বিশদে অভিযোগ জানান যে ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাঁর সেই সেন্টারগুলির তালিকায় রাউ'জ আইএএস স্টাডি সার্কেলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও পদক্ষেপই করেনি পৌর সংস্থা।
আর সেই গাফিলতিরই মাশুল গুনলেন উত্তর প্রদেশের শ্রেয়া যাদব, তেলঙ্গানার তানিয়া সোনি এবং কেরলের নবীন ডালভিন।
উত্তরপ্রদেশের আম্বেদকর নগরের ২৫ বছরের শ্রেয়া যাদব এবছরের এপ্রিলে রাউ'জ আইএএস কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। তিন ভাইবোনের মধ্যে শ্রেয়াই সবার বড়। দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা পাস করার স্বপ্ন নিয়ে দিল্লিতে চলে আসেন পরিবার ছেড়ে। বিএসসি উত্তীর্ণ তিনি। সুলতানপুরের কমলা নেহেরু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে কৃষিতে ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। শ্রেয়ার বাবা আম্বেদকর নগরে একটি দুধের দোকান চালান। শ্রেয়ার এক ভাই অভিষেক যাদব একজন মাস কমিউনিকেশনের পড়ুয়া। শ্রেয়ার অকালে চলে যাওয়া পরিবারকে এনে দাঁড় করিয়েছে এক অদ্ভুত শূন্যতার সামনে।
বছর ২৫-এর তানিয়া সোনি তেলঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদ থেকে দিল্লিতে পড়তে যান। আসল বাড়ি বিহারের আওরঙ্গাবাদে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তানিয়া মহারাজা অগ্রসেন কলেজের একটি হস্টেলে থাকতেন। দেড় মাস আগেই এই কোচিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন তিনি। তানিয়ার বাবা বিজয় কুমার তেলঙ্গানার একটি খনি সংস্থায় কাজ করেন। এক ভাই এবং এক বোন রয়েছে তানিয়ার।
কেরলের এরনাকুলামের ২৮ বছর বয়সি নবীন ডালভিন প্রায় আট মাস ধরে দিল্লিতেই ছিলেন। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করছিলেন। প্যাটেল নগরে থাকাকালীন শনিবার সকাল দশটা নাগাদ বেসমেন্টের ওই লাইব্রেরিতে যান নবীন। আর বেরোতে পারেননি। তানিয়া, শ্রেয়া, নবীনদের স্বপ্নও লাশ হয়ে গেল, জলের তোড়ে।