জনপ্রিয় গানের সুর নকল করেই বাজিমাত? কোন জাদুতে ৫০ বছরেও অমলিন 'চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে'!

Zeenat Aman Churaliya Hay Tumne: সবাই এই দৃশ্যে জিনাতের ফ্যাশনে এতই ঘায়েল হয়ে যান যে পরে পরিচালক জিনাতকে নিজের ড্রেসিং স্টাইল বেছে নেওয়ার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেন।

১৯৭০ এর দশ। বলিউড সাহসী হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। নায়িকারা ভাঙছেন নিজেদের, নায়করাও। বলিউডের গান তখন, শব্দে, কথায়, সুরে, যন্ত্রে টেক্কা দিচ্ছে নিজেকেই, প্রতিনিয়ত। শুধু শব্দে কথায় নয়, দৃশ্যেও। গান শোনার থেকেও ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে দেখার। পর্দায় অভিনেত্রীদের চাহনি, লাস্য, মায়া, নায়কের কেরামতি তখন তুঙ্গে। তখনও অবশ্য মেয়েরা আর ছেলেরা প্রেম করে ভিন্নভিন্ন ভাবেই। মেয়েরা প্রোপোজ করে না, ফ্লার্টও না। তাঁদের করা হয়। খুব সামান্য কয়েকজন বেড়া ভাঙার সুযোগ পেয়েছেন। জিনাত আমান মানেই তখন বুক ঢিপ ঢিপ, কী যে রহস্য রয়েছে তাঁর চাহনিতে, হাসিতে। সে ধরাও যায় না, অথচ ধরতে সাধও হয়। সাদা জাম্পস্যুট পরে, গিটার নিয়ে জিনাত গাইছেন, মানে লিপ দিচ্ছেন আর কী। খোলাখুলি জানাচ্ছেন, মন কেড়ে নিয়েছেন নায়ক। মদের গ্লাসে শব্দ করে শুরু করছেন সেই বিখ্যাত গান, 'চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে জো দিলকো...”

৫০ বছর পার করেও একই মোহে এনে ফেলে এই গান। ১৯৭৩ সালের 'ইয়াঁদো কি বারাত' সিনেমার এই গান, আজও ভারতীয় প্রেমের অন্যতম থিম সং! গেয়েছিলেন আশা ভোঁসলে এবং মহম্মদ রফির বিখ্যাত জুটি। আর পর্দায় এই গানকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন জিনাত আমান ও বিকাশ আনন্দ। সুরকার হিসেবে তখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে রাহুল দেব বর্মণ। প্রতিটা গানে বুঁদ হয়ে যায় ভারতবর্ষ, 'চুরা লিয়া হ্যায়' গানটিও মুক্তি পেতে না পেতেই সুপারহিট! গানের কথা লিখেছিলেন বিখ্যাত উর্দু কবি মাজরুহ সুলতানপুরী। এই গানের বিখ্যাত যে অংশটা, জিনাতের গিটার বাজানো, যা দেখে কেঁপে গিয়েছিল যুব সম্প্রদায়ের অজস্র হৃদয়, আসলে তা বাজিয়েছিলেন ভূপিন্দর সিং।

আরও পড়ুন- “মওত মুবারক হো মীনা”, প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুতে কেন শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন নার্গিস?

সম্প্রতি ইন্ডিয়ান আইডল নামের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো, এই গানটিকে চর্চায় নিয়ে এসেছে। প্রতিযোগিতায়, এক শিল্পী দেবস্মিতা রায় গানটি গাওয়ার পরে ওই শোয়ে উপস্থিত জিনাত আমন আপ্লুত হয়ে যান। জিনাত জানিয়েছেন, গানটা যে ৫০ বছর পার করেও এমনই জনপ্রিয় থাকবে তিনি আশাও করেননি। শুধু জিনাতই নন, ২০২০ সালে, এই গানটির গায়িকা আশা ভোঁসলেও 'চুরা লিয়া হ্যায়' গানটিকে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় গানের একটি হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে মজার ঘটনা হলো, এই সিনেমায় ওই ভূমিকার জন্য প্রথমে ভাবাই হয়নি জিনাতকে। আশা পারেখ পরিচালক হোসেনের আগের সাতটি সিনেমায় মুখ্য নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ১৯৭৩, যখন ইয়াঁদো কি বারাত তৈরি হচ্ছে, তখন আশার বয়স ৩০ বছর। পরিচালকের মনে হলো, সুনীতা নামে একটি কলেজের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য আশা পারেখের বয়স অনেকটাই বেশি হয়ে যাচ্ছে। তখন অফার করা হলো জিনাত আমানকে। 'সত্যম শিবম সুন্দরম’, 'হরে রাম হরে কৃষ্ণ’, 'কুরবানি’, 'ডন’, 'মনোরঞ্জন'-এর মতো বেশ কয়েকটি হিট সিনেমার নায়িকা জিনাত শুরুর থেকেই অন্য ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর যুগে অনেক অভিনেত্রী সেই চরিত্রগুলোয় কাজ করতে চাননি।

আরও পড়ুন- গান প্রতি ১৫ টাকা! গানের চাবুকে বলিউড শাসন করেছিলেন সামসেদ বেগম

আর ডি বর্মণের সুরে 'চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে যো' গানটি নাকি একটি বিখ্যাত ইংরেজি গান "if It's Tuesday, It Mus Be Belgium"- র নকল। গানটির সুরের মিল অবশ্য অস্বীকার করাও যায় না। এই গানটির কথার সঙ্গেও জড়িয়ে আছে মজার এক গল্প। নাসির হোসেন গীতিকার মাজরুহ সুলতানপুরীকে একটি গানের কথা লিখতে বলেছিলেন কারণ তিনি অন্যান্য শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় সবটা করে উঠতে পারছিলেন না। নাসির বলেছিলেন, সুর এবং সময়সূচি সব একদম প্রস্তুত। শুধু কথাটা পেলেই কাজ সারা হয়ে যায়। নাসির হোসেন তখন আউটডোরে, পুনেতে শুটিং করছেন। মাজরুহ সুলতানপুরী ঠিক করেন তাঁর সঙ্গেই যাবেন। সন্ধ্যায় নাসির যখন ঘরে ফিরে আসেন, মাজরুহ তাঁর দিকে একটা পাতা এগিয়ে দেন। তাতে লেখা আছে, বিখ্যাত এই গানের কথা, 'চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে জো দিল কো'।

হরে রাম হরে কৃষ্ণ সিনেমার অভিষেক করে জড় তুলেছিলেন জিনাত। তারপরে এটিই ছিল প্রথম বড় সিনেমা যেখানে নায়িকা হিসেবে ভাবা হয় জিনাত আমানকে। শোনা যায়, প্রথমে জিনাতকে ভারতীয় পোশাক পরতে বলা হয়েছিল কিন্তু জিনাতের তো সেসব পরে অস্বস্তি বেড়ে যায়। শেষে চুরা লিয়া হ্যায় গানের জন্য তিনি জাম্পস্যুট পরেন। সবাই এই দৃশ্যে জিনাতের ফ্যাশনে এতই ঘায়েল হয়ে যান যে পরে পরিচালক জিনাতকে নিজের ড্রেসিং স্টাইল বেছে নেওয়ার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেন।

More Articles