বিজয় দিবসের ৫১ তম বর্ষপূর্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে চোখের জল ফেলল কলকাতা-ঢাকা
16 December Vijay Diwas Indo-pak war : পাকিস্তানের শেকল ছিঁড়ে মুক্ত হয়েছিল সোনার বাংলা। ১৬ ডিসেম্বর সেই নতুন সূর্যেরই গান গায় প্রতিবার।
১৯৭১ সালের পর কেটে গিয়েছে ৫১ টি বছর। গঙ্গা, পদ্মা দিয়ে বয়ে গিয়েছে কত জল। দুই বাংলার মাঝে বসেছে কাঁটাতার, তিস্তা নিয়ে হয়েছে জলঘোলা। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরের মুহূর্ত যেন বারবার মিলিয়ে দেয় ভারত আর বাংলাদেশ। এই দিনটি ঘিরেই ওপার বাংলার নিজস্ব পরিচয়। ভাষা শহিদদের রক্ত, শত শত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মবলিদানের বিনিময় মুক্তির সূর্য দেখেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের শেকল ছিঁড়ে মুক্ত হয়েছিল সোনার বাংলা। ১৬ ডিসেম্বর সেই নতুন সূর্যেরই গান গায় প্রতিবার। সেই সুর ছড়িয়ে পড়ে ঢাকায়, কলকাতায়, দিল্লিতে…
১৬ ডিসেম্বর ভারতের বিজয় দিবস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী সাহায্য করেছিল। শুরু হয়েছিল একাত্তরের ভারত-পাক যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ নিজের জন্য নয়, একটি দেশের স্বাধীনতার জন্য। দাসত্বের বাঁধন থেকে মুক্তির জন্য। ‘এবারের লড়াই মুক্তির লড়াই’, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই একটি মন্ত্রেই অজস্র তরুণ নেমে পড়েছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। ১৬ ডিসেম্বর সেই রক্ত ঝরার চূড়ান্ত মুহূর্ত। পাকিস্তানের আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণের দলিলে সই করেন। কেবল বাংলাদেশ নয়, কলকাতাও সেই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করে।
২০২১ সাল ছিল সেই বিজয় দিবসের ৫০ বছর পূরণের বছর। এবার ৫১ তম বছরেও কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে বিজয় দিবস পালন করল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের অতিথিরাও। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দফতর কলকাতায় উঠল ভারত আর বাংলাদেশের পতাকা। এবার উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিজন মিলিয়ে ৬০ জনের এক প্রতিনিধি দল। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশের বীর প্রতীক ও ভারতের ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা লেফটেনেন্ট কর্নেল (অব:) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। এছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মোঃ মাহবুবুর রশিদ, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, ভারতের বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (অব:) অরূপ রাহা সহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানে ফোর্ট উইলিয়ামের বিজয় স্মারকে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান প্রত্যেকে। সেইসঙ্গে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তখনই যেন এক ঝলকে ৫১ বছর পিছনে চলে যায় কলকাতা। প্রদর্শনীতে ফুটে ওঠা সেদিনের দৃশ্যগুলি দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবার। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদানের কথা স্বীকার করতে ভোলেননি মুক্তিযোদ্ধা লেফটেনেন্ট কর্নেল (অব:) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। তিনি বলেন, “আমি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে একাত্তরের যুদ্ধ লড়েছি। যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের আত্মত্যাগ দেখেছি, দেখেছি রক্তের স্রোত। সময়ের প্রয়োজনে তারা নিজেদের আরও বলিয়ান করছে। পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে মিশে থেকে তাদের কল্যাণেও অনেক কাজ করছে। এটা খুবই প্রশংসার দাবি রাখে।”
পাশাপাশি কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাই কমিশনেও যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করা হয়েছে। উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণের ‘মুজিব চিরঞ্জীব' মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। সব মিলিয়ে এপার ওপার মিলনক্ষেত্রে পরিণত হল কলকাতা। রক্তাক্ত দিনগুলোর কথা আরেকবার স্মরণ করে নিল এই শহর।