বহিষ্কার করেছিলেন ওম বিড়লা! ১০০-র মধ্যে ৫৮ সাংসদই ফিরলেন সংসদে

MPs Suspended by Om Birla: বিরোধী দলের অধিকাংশ বহিষ্কৃত সাংসদই সংসদে ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে জেডি (ইউ)-এর বহিষ্কৃত সাংসদরাই বেশি।

১৭ তম লোকসভায় যাদের বহিষ্কার করেছিলেন স্পিকার ওম বিড়লা, বিরোধী দলগুলির সেই ১৪৬জন সদস্যের অধিকাংশই ফের সাংসদ হয়ে ফিরেছেন ১৮ তম লোকসভায়। নিম্নকক্ষের স্পিকার ওম বিড়লা এবং রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনখড় ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৪৬ জন সাংসদকে বহিষ্কারের নজিরবিহীন পদক্ষেপ করেন। বহিষ্কৃত বিরোধী সাংসদের মধ্যে প্রায় ২২ জনের মতো ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। আর দ্রাবিড় মুন্নেত্র কাঝগম (ডিএমকে)-এর একজন বহিষ্কৃত সাংসদ এ গণেশ মূর্তি প্রয়াত হয়েছেন।

এইবার নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার লক্ষ্যমাত্রা পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। অন্যদিকে, লোকসভায় বিরোধী সাংসদের সংখ্যা বেড়েছে বেশ। বিরোধী দলগুলি লোকসভার স্পিকার পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ওম বিড়লাই ফের স্পিকার হয়েছেন। গত শীতকালীন অধিবেশনে বহু বিরোধী সাংসদকে বের করে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন এই ওম বিড়লাই। বহিষ্কৃত হওয়া তিনজন সাংসদ এখন মোদির মন্ত্রীও। তাদের মধ্যে একজন, রবনীত সিং বিট্টু। আগে লুধিয়ানার কংগ্রেস সাংসদ ছিলেন। এখন বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরেও নতুন সরকারে স্থান পেয়েছেন।

আরও পড়ুন- সংসদে উচ্চবর্ণ ওবিসি সমান সমান, স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরে প্রথমবার

লোকসভা নির্বাচনে পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিংয়ের নাতি বিট্টু বিজেপিতে গিয়ে লুধিয়ানা থেকেই ভোটে লড়েন। তবে এই আসনের ভোটাররা আবারও কংগ্রেসকেই বেছে নিয়েছেন। বিজেপির হয়ে বাজি মারতে পারেননি বিট্টু। বিপর্যয় সত্ত্বেও, বিট্টুকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়েছে।খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং রেলপথের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। আরও একজন বহিষ্কৃত কংগ্রেস সাংসদ হলেন গীতা কোডা, যিনি পরে বিজেপিতে যান এবং বিজেপির টিকিটে লোকসভা ভোটে লড়েন তিনিও সিংভূম আসনে হেরে যান। এই আসনটি জিতেছেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) জোবা মাহি।

আম আদমি পার্টির সাংসদ, সুশীল কুমার রিঙ্কুও গত শীতকালীন অধিবেশনে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তিনিও পরে বিজেপিতে চলে আসেন এবং জলন্ধর থেকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। লুধিয়ানা এবং সিংভূমের মতো জলন্ধর আসনটিও বিরোধীরাই পায়। প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নি জলন্ধর আসনে অনেকটাই ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। অর্থাৎ বিজেপি দল ভাঙিয়ে এনেও সেই প্রার্থীদের জেতাতে পারেনি।

শীতকালীন অধিবেশনে বহিষ্কৃত হওয়া অন্য আরেক বিরোধী সাংসদ ছিলেন রাজীব রঞ্জন সিং (লল্লন সিং)। তিনি মুঙ্গেরের জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর সাংসদ ছিলেন। জেডি (ইউ) ততক্ষণে বিহারে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) সঙ্গে সরকার গঠনের জন্য জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) থেকে বেরিয়ে যায়। গত শীতকালীন অধিবেশনে জেডি (ইউ)-এর ১১ জন সাংসদকে বহিষ্কার করা হয়। লল্লন সিং অবশ্য আবারও আসনটি জিতেছেন। তিনি এখন মোদি সরকারের মৎস্য, পশুপালন এবং দুগ্ধ মন্ত্রী।

গত শীতে বহিষ্কৃত হওয়া আরও একজন জেডি (ইউ) সাংসদ রাম নাথ ঠাকুরও কৃষি ও কৃষক কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। রামনাথ ঠাকুর বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরী ঠাকুরের ছেলে।

আরও পড়ুন- নিজের কেন্দ্র বারাণসীতেই অপমান! মোদির দিকে চটি ছোড়ার অভিযোগ কি সত্য?

জেডি (ইউ)-এর আরেকজন বহিষ্কৃত সাংসদ দুলাল চন্দ্র গোস্বামী এই নির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে কাঠিহার আসনে হেরেছেন, চন্দ্রেশ্বর প্রসাদ জেহানাবাদে আরজেডির কাছে হেরেছেন। জেডি (ইউ)-এর আরও চারজন যারা লোকসভায় ফিরেছেন তারা হলেন – কৌশলেন্দ্র কুমার (নালন্দা), গিরিধারী যাদব (বাঙ্কা), অলোক কুমার সুমন (গোপালগঞ্জ) এবং দিলেশ্বর কামাতি (সুপল)।

দলের একজন রাজ্যসভার সদস্য, অ্যাঞ্জেল প্রসাদ হেগড়েও শীতকালীন অধিবেশন থেকে বহিষ্কৃত হন। তিনি এখন অবশ্য আর বিরোধী দলে নেই। এই সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি এমন দুই জেডি (ইউ) সাংসদ হলেন মহাবলী সিং এবং সুনীল কুমার সিং।

বিরোধী দলের অধিকাংশ বহিষ্কৃত সাংসদই সংসদে ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে জেডি (ইউ)-এর বহিষ্কৃত সাংসদরাই বেশি। তবে বিরোধী দলগুলির সাংসদদের সংখ্যাও কম না। তাদের মধ্যে ৫২ জন লোকসভায় ফিরে এসেছেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দুই সাংসদ যাদের ওম বিড়লা বহিষ্কার করেন তারা মানুষের রায়ে আবার সংসদে ফিরেছেন, রাহুল গান্ধি এবং মহুয়া মৈত্র। রাহুল গান্ধি জোড়া আসনে জিতেছেন এবার। ওম বিড়লা এই বিরোধী সাংসদদের বহিষ্কার করে মোদি সরকারের মান রেখেছিলেন ঠিকই কিন্তু দেশের ভোটাররা আবারও এই নেতাদেরই সংসদে দেখতে চেয়েছেন।

More Articles