ভাড়া একই, তবু কেন গতি কমছে বন্দে ভারত, গতিমান এক্সপ্রেসের?

Vande Bharat Speed Reduction: শতাব্দী এক্সপ্রেসের গতি প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ১৩০ কিলোমিটার করা হবে।

যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের দুই 'বিখ্যাত' ট্রেন বন্দে ভারত এবং গতিমান এক্সপ্রেস সহ প্রিমিয়াম ট্রেনের গতি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় রেল। যে যে পথে বন্দে ভারত-সহ এই বেশি গতির ট্রেনগুলি চলে সেখানে তাদের গতি প্রতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ১৩০ কিলোমিটার করা হবে। উত্তর মধ্য রেল রেলওয়ে বোর্ডকে ট্রেন নম্বর ১২০৫০/১২০৪৯ দিল্লি-ঝাঁসি-দিল্লি গতিমান এক্সপ্রেস, ট্রেন নম্বর ২২৪৭০/২২৪৬৯ দিল্লি-খাজুরাহো-দিল্লি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, ট্রেন নম্বর ২০১৭২/২০১৭১ দিল্লি-কমলাপতি-দিল্লি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এবং ট্রেন নম্বর ১২০০২/১২০০১ দিল্লি-রানি কমলাপতি-দিল্লি শতাব্দী এক্সপ্রেসের গতি কমানোর জন্য চিঠি দিয়েছে।

শতাব্দী এক্সপ্রেসের গতি প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ১৩০ কিলোমিটার করা হবে। গতি কমে যাওয়ায়, এই ট্রেনগুলি গন্তব্যে পৌঁছতে আগের চেয়ে ২৫-৩০ মিনিট বেশি সময় নেবে এবং এই রুটে চলা কমপক্ষে ১০টি সুপারফাস্ট ট্রেনের সময়কে প্রভাবিত করবে। রেলের একজন উর্ধ্বতন আধিকারিক বলছেন, দিল্লি-আগ্রা-ঝাঁসি রুটে ট্রেন সুরক্ষা এবং সতর্কতা ব্যবস্থার (TPWS) ব্যর্থতাই ট্রেনের গতি কমানোর কারণ।

আরও পড়ুন- ‘রেল মস্ত ভুল করছে’! কেন বলছেন খোদ বন্দে ভারতের নির্মাতা?

কিছুকাল আগেই উত্তরবঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পরেই এই আদেশ জারি করা হয়েছে। উত্তর রেল এর আগে এমন প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। গত বছরের নভেম্বর থেকে রেলওয়ে বোর্ড এই প্রস্তাব মুলতুবি রেখেছে। এবার উত্তর মধ্য রেল গত ২৫ জুন ট্রেনের গতি কমিয়ে ১৩০ কিলোমিটার করার জন্য আরেকটি প্রস্তাব পাঠায়।
বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, TPWS-এর মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব ছিল না। তাই রেলওয়ে বোর্ডকে প্রিমিয়াম ট্রেনগুলিকে ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার নিরাপদ গতিতে চালানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যেহেতু দু'টি জোনাল রেলওয়ে প্রিমিয়াম ট্রেনের গতি কমাতে অনুরোধ করছে এবং কারণ হিসাবে যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টিকেই সামনে রাখছে তাই এই অনুরোধটি অনুমোদন করা ছাড়া রেল বোর্ডের কাছে আর কোনও বিকল্প নেই।

দেশের অন্য বন্দে ভারত ট্রেনের গতিও কি কমিয়ে দেওয়া হবে? এক রেল আধিকারিক জানাচ্ছেন, দিল্লি-কানপুরের কয়েকটি জায়গা ছাড়া প্রায় সমস্ত রুটেই সেমি-হাই-স্পিড ট্রেনগুলি ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতেই চলছে। একমাত্র দিল্লি-কানপুরের রেলপথই প্রতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালানোর জন্য উপযুক্ত ছিল।

আরও পড়ুন- কল্পতরু রেল! বন্দে ভারত মেট্রো কবে আসছে?

ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি, যেখানে বন্দে ভারত ট্রেনগুলি নির্মিত হয়েছিল, সেই আইসিএফের প্রাক্তন প্রধান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শুভ্রাংশু বলছেন, ট্রেনের গতি হ্রাস করে লাভের লাভ কিছুই হবে না। তিনি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে যে মালগাড়ির সংঘর্ষ হয়েছিল তা মাত্র ৪৫ কিলোমিটার বেগে চলছিল। “আমি বুঝতে পারছি না, এই ট্রেনগুলিকে ১৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টা থেকে ১৩০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় কমিয়ে দিয়ে নিরাপত্তার কী উন্নতি হবে৷ এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সেমি-হাই-স্পিড ট্রেন অনেক বড় বড় কথা বলে তৈরি করা হয়েছিল। এখন মূল কারণের মধ্যে না গিয়ে তার গতি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে,” বলছেন তিনি। এবার বন্দে ভারতকে জায়গা দিতে গিয়ে অন্যান্য ট্রেনের গতিও কমেছে।

পান্ডিয়ান, নেল্লাই এবং কন্যাকুমারী এক্সপ্রেসের মতো সুপারফাস্ট ট্রেনগুলির সময় ১০ থেকে ১৫ মিনিট বৃদ্ধি করা হয়েছিল যাতে বন্দে ভারতের মতো অন্যান্য প্রিমিয়াম ট্রেনগুলি দ্রুত যেতে পারে। বেশি দামের টিকিট আর বিলাসের সুযোগ দিয়ে বন্দে ভারত চালানো হলেও আসলে ভারতের রেলপথগুলি অত দ্রুতগামী ট্রেন চালানোর উপযোগী ছিলই না। তবু 'বন্দে ভারত' টোপ দেখিয়েই রেলের উন্নয়নের ছবি আঁকছিলেন মোদি। গতি কমানো হলে কি ভাড়াও কমবে? তার কোনও উল্লেখ নেই। তাহলে একই ভাড়ায় যাত্রীরা কেন কম গতির ট্রেনে চাপবেন? বন্দে ভারত যে আদতেই ফাঁপা উন্নয়ন ছিল, তাই কি প্রমাণ হয়ে গেল না?

More Articles